মানহানিকর বক্তব্য ও খবর প্রচারের অভিযোগে গৃহকর্মী পিংকি আক্তারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আজ বুধবার এ মামলা করেন তিনি।

আদালত মামলাটি তদন্ত করে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মিরাজ উদ্দিন শিকদার।

এর আগে পরীমনি আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। পরে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।

পরীমনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বাসায় আরও কয়েকজন গৃহকর্মী কাজ করেন। কেউ কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। পিংকি আক্তার ইচ্ছাকৃতভাবেই আমার বিরুদ্ধে অবিরাম মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে চলেছেন।’

পরীমনি বলেন, ‘পিংকি আক্তারকে আমি নির্যাতন কিংবা কোনো ধরনের বকাঝকা করিনি। একটি গ্যাং তাঁকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত অনেক স্পর্শকাতর তথ্য প্রচার করছে। এতে আমি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

একপর্যায়ে পরীমনি আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এমনভাবে আমার বিরুদ্ধে প্রচার করে যাচ্ছে, আমি আর এটি নিতে পারছি না। আমি বিচার চাই।’

মামলায় গৃহকর্মী পিংকি আক্তার ছাড়া ‘সকল খবর’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোর্শেদ সুমন এবং ‘প্রতিদিনের বাংলাদেশ এন্টারটেইনমেন্ট’, ‘অনলাইন পোর্টাল পিপলস নিউজ’ ও ‘ডিজিটাল খবর’কে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।

মামলায় পরীমনি দাবি করেছেন, একটি সংস্থার মাধ্যমে গত ৫ মার্চ পিংকি আক্তার নামের এক গৃহকর্মীকে নিয়োগ দেন। গত ২৭ মার্চ তাঁকে ২০ হাজার টাকা বেতন দেন। পিংকি আক্তার গত ২ এপ্রিল তাঁর বাসা থেকে চলে যান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা, বানোয়াট ও অশ্লীল তথ্য প্রচার করে আসছেন। পিংকি আক্তারের এমন বক্তব্যের কারণে অন্যরাও সেটি ফলাও করে প্রচার করছে।

মামলায় পরীমনি দাবি করেছেন, পিংকি আক্তারসহ অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া ভিডিও প্রচার করেছেন।

পরীমনি তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদগুলোর একটি তালিকা মামলায় উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওর লিংকও মামলায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন গৃহকর্মী পিংকি আক্তার। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ৮ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এর আগে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই পরীমনির বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। মামলাটি ঢাকার আদালতে বিচারাধীন। পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা আরও একটি মামলার বিচার চলছে। অন্যদিকে পরীমনির দায়ের করা আরেকটি ধর্ষণচেষ্টার মামলা বিচারাধীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ব র দ ধ গ হকর ম কর ছ ন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ