Samakal:
2025-05-01@00:28:01 GMT

হাসপাতালটি নিজেই অসুস্থ

Published: 25th, April 2025 GMT

হাসপাতালটি নিজেই অসুস্থ

হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সংকটে জর্জরিত। রয়েছে চিকিৎসক-নার্স সংকট, অপর্যাপ্ত শয্যা, জরাজীর্ণ অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা। সব মিলিয়ে এই হাসপাতালটি যেন নিজেই এখন অসুস্থ। তবুও বাধ্য হয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছেন সেবা পেতে। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৭৪টি অনুমোদিত পদ থাকলেও ১১৪টিই শূন্য রয়েছে। বাস্তবে কাজ করছেন ৬০ জন, যাদের অনেকেই প্রেষণে আছেন। ৬ লাখ জনসংখ্যার এই উপজেলায় ২৩ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন। এর মধ্যেও চারজন সংযুক্ত রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। আর একজন জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ মাসে আসেন হাতেগোনা কয়েক দিন। ফলে প্রতিদিন তিন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করছে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগের শত শত রোগীর চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া ৫৫ স্বাস্থ্য সহকারীর পদে ৪১ পদই শূন্য। ৩৬ জন নার্সের স্থলে কর্মরত ১৪ জন। 

এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা জরুরি বিভাগে। যেখানে দ্রুত ও দক্ষ সেবা দেওয়ার কথা, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন অসুস্থ ব্যক্তি। এদের একজন ক্যান্সার আক্রান্ত এবং অপরজন প্যারালাইসিসে। যাদের নিজেদেরই উন্নত চিকিৎসার দরকার, অথচ জনবল সংকটের কারণে তারাই কিনা চেষ্টা করছেন অন্যদের সেবা দিতে। 
অন্যদিকে, হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগের অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকছেন ১০০-১২০ রোগী। যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। শয্যার অভাবে অনেকেই মেঝেতে, করিডোর, এমনকি হাসপাতালের বারান্দায় পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত ওষুধ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগর-লাখাই-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাশে সাড়ে তিন একর জমির ওপর ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন ৩১ শয্যার হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। যা ২০০৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে অবকাঠামো ও জনবল এখনও ৩১ শয্যার পর্যায়ে রয়ে গেছে। উপজেলায় একটি পল্লি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও কোথাও চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে ১২টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের মধ্যে ১০টি শূন্য। হৃদরোগ, চর্ম ও যৌনরোগ, নাক-কান-গলা, চক্ষু, স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ, মেডিসিন, অস্থি, শল্যবিদসহ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে জরুরি অস্ত্রোপচার বা বিশেষায়িত চিকিৎসা কল্পনার বাইরে। বিশেষ করে স্ত্রীরোগ ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাবে এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। অথচ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধুলায় ঢেকে আছে, যা সময়ের সঙ্গে বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 
গত ১৫ মার্চ সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে, চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। ফলে সেবা পেতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে ক্যান্সার আক্রান্ত ওয়ার্ড বয় আমির হোসেন প্রতিদিনের মতোই রোগীদের কাটা-ছেঁড়ার কাজ সারছেন। অপর প্যারালাইসিস আক্রান্ত প্যারামেডিকেল চিকিৎসক অসীম কুমার শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই আজ তাঁকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।

জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা গোকর্ণ ইউনিয়নের মনতাজ উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে ব্যথা পেয়ে আসছি, কিন্তু যারা চিকিৎসা দেবেন তারাই অসুস্থ। উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়ন থেকে আসা রোকেয়া বেগম নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে এসে জানতে পারেন, এই পদটি ১৫ বছর ধরে শূন্য। 
গোয়ালনগর গ্রাম থেকে হেঁটে আসা হালিমা বেগম শিশু বিশেষজ্ঞের অভাবে সন্তানের চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে যান। কারণ, যিনি নাসিরনগর হাসপাতালে কর্মরত, তিনি নিয়মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস করেন। 

নছিমন বিবি নামে এক হতভাগী মা তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান, সিজার করতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচার হয় না। 
হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব হাসান আলীর হতাশা যেন ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তবতার পুরো প্রতিচ্ছবি। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা অপেক্ষায় একজন চিকিৎসকের দেখা পান। পরে জানতে পারেন, এখানে হাড়ের ডাক্তার নেই। 
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.

সাইফুল ইসলাম বলেন, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। এত কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোগীরা এখানে আসেন। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া সমকালকে বলেন, বর্তমান সরকার শিগগিরই ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স ব র হ মণব ড় য় চ ক ৎসক র চ ক ৎসক ন করছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক

সাভারে সেলফি পরিবহনের একটি চলন্ত বাসের ধাক্কায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন সাবেক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক বাস ও বাসের চালককে আটক করে স্থানীয়রা। পরে সেলফি পরিবহনের আরও পাঁচটি বাস আটক করে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১০টা ২০ এর দিকে সাভারের আশুলিয়া এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে ঢাকা মুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত ব্যক্তি হলেন, চাঁদপুর জেলার মতলব থানার লোকমান মোল্লার ছেলে শামসুল মোল্লা (৭০)। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের শ্রীপুর(গাজীপুর) উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

আটককৃত বাসের চালক হলেন, ঢাকার ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের আব্দুল মবেদের ছেলে আব্দুল করিম (৪৫)। 

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অল্প কিছুদিন আগেই তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। তার পাওনাদি নেওয়ার জন্যেই তিনি আজ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছিলেন।

সাভার হাইওয়ে থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বিষ্ণু পদশর্মা বলেন, “সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে আমরা এসেছি। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।”

ঢাকা/সাব্বির/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • জাহাঙ্গীরনগরে পিটুনিতে নিহত সেই ছাত্রলীগ নেতাকেও ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেছে প্রশাসন
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’
  • আউটসোর্সিং এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর