হাসপাতালের দ্বিতল ভবন। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, ভবনজুড়ে সুনসান নীরবতা। বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোনো রোগী নেই। দোতলায় রোগীদের ওয়ার্ড, অস্ত্রোপচার কক্ষে তালা দেওয়া। নিচতলার একটি কক্ষে একজন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) এবং বারান্দায় একজন প্রহরী চুপচাপ বসে সময় কাটাচ্ছেন।

গত রোববার এমন চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত মাস্টারদা সূর্য সেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। নানা সংকটে সেবা না পেয়ে এখন অনেকটাই রোগীশূন্য ১০ শয্যার হাসপাতালটি।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায় তিন মাস ধরে। বিল বকেয়া থাকার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটিতে ১৬ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। অন্য হাসপাতাল থেকে এসে সপ্তাহে কয়েক দিন করে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন মিডওয়াইফ এবং একজন আয়া দায়িত্ব পালন করেন। চুক্তিভিত্তিক দুজন প্রহরী নিয়োগ করা হলেও তাঁদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না প্রায় দুই বছর। এ ছাড়া হাসপাতালে বিনা মূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে প্রায় ছয় মাস। ফলে হাসপাতালটিতে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সূর্য সেনের বাস্তুভিটায় নির্মিত হয়েছে হাসপাতালটি। সূর্য সেন পল্লির এই হাসপাতাল ভবনটির বাইরে সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে লাগানো একটি সাইনবোর্ড, তাতে লেখা—জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য কেন্দ্র দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ভবনের নিচতলায় সেমিনার কক্ষ, ওষুধ বিতরণকক্ষ, মেডিকেল অফিসারের কক্ষসহ সর্বমোট ১১টি কক্ষ। এর মধ্যে একটি কক্ষে কেবল একজন মিডওয়াইফকে দেখা গেলেও বাকিগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্বিতীয় তলায় অস্ত্রোপচার কক্ষ, লেবার রুম, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কক্ষ এবং রোগীদের ওয়ার্ড থাকলেও দোতলার মূল ফটকেই তালা ঝোলানো। নিচে অ্যাম্বুলেন্স রাখার ঘরটিতেও কোনো অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু হয় ২০০৩ সালে।

কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চালুর পর থেকে এই মা ও শিশু কেন্দ্রে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতেন। তবে সেবা ব্যাহত হওয়ায় কয়েক মাস ধরে রোগী একেবারেই কমে গেছে। হাসপাতালটির প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এ কারণে গত ১৮ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

এখানে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ৪ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ২ জন নারী সহকারী চিকিৎসক, ২ জন মিডওয়াইফ, ১ জন অ্যাম্বুলেন্স চালকসহ মোট ১৬ জন কর্মরত থাকার কথা। তবে দুই দশকের বেশি সময় পার হলেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। বর্তমানে পান্না রানী পাল নামের একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সপ্তাহে তিন দিন এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কর্মরত রয়েছেন বাগোয়ান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে। মিডওয়াইফ পদে থাকা নিলুফা আকতারও প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কর্মস্থল চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে। আয়া পদে থাকা রত্না ধর সপ্তাহে তিন দিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর কর্মস্থল উপজেলার গহিরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে। হাসপাতালে দুজন নিরাপত্তা প্রহরী চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। তাঁরা হলেন মুহাম্মদ মোজাম্মেল ও  মুহাম্মদ মনসুর।

কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চালুর পর থেকে এই মা ও শিশু কেন্দ্রে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতেন। তবে সেবা ব্যাহত হওয়ায় কয়েক মাস ধরে রোগী একেবারেই কমে গেছে। হাসপাতালটির প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এ কারণে গত ১৮ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটিতে কথা হয় মিডওয়াইফ নিলুফা আকতারের সঙ্গে। ২৪ ঘণ্টা প্রসূতিদের সেবার কথা বাইরে লেখা থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকায় বেলা ২টার পর মা ও শিশু কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। নিলুফা বলেন, এখন মাসে চার থেকে পাঁচজন প্রসূতি এখানে প্রসব সেবা নেন। আগে এটি অনেক বেশি ছিল। ৫০ থেকে ৬০ জন প্রসূতি নানা ধরনের সেবা নিতে আসতেন। তিনি বলেন, তিন মাস বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে পানির কলটিও চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালে দুর্ভোগের শেষ নেই।

মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালানোর জন্য ১৬টি পদেই জনবল পদায়ন করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। জনবল না থাকার বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এর পরও কাউকে পদায়ন করা হচ্ছে না।প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব),  রাউজান উপজেলা

নিরাপত্তা প্রহরী মো.

মুহাম্মদ মোজাম্মেল প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। তবু বেতন-ভাতা নিয়মিত হবে এখনো সেই আশায় রোজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অস্ত্রোপচার কক্ষ, লেবার রুম, রোগীদের ওয়ার্ড থাকলেও দোতলার মূল ফটকেই তালা ঝোলানো রয়েছে। গত রোববার দুপুরে তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল অফ স র কল য ণ ক ন দ র পর ব র পর কর মকর ত থ কল ও প রস ত জন ম ড প রহর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আরো পড়ুন:

নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”

অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”

এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।

অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”

ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নগরের হাসপাতালটিতে রোগীরা কেন থাকতে চান না
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১
  • চলন্ত গাড়ির নিচে পড়েও অক্ষত অবস্থায় ফিরল ৩ বছরের শিশুটি
  • মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন