হাফেজ ইবনুল কায়্যিম (রহ.) তাঁর বিখ্যাত জাদুল মাআদ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘…মৃতদের প্রতি দয়া, উম্মাহর জন্য আশঙ্কা ও সহানুভূতির কারণে এবং আল্লাহর প্রতি প্রবল ভয়ের কারণে নবীজি (সা.) কাঁদতেন।’ তিনি বলেছেন, ‘যদি, আল্লাহর ভয়ে কোনো মুমিনের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয় এবং যদি সেই অশ্রু তার গালের কোনো অংশে গড়িয়ে পড়ে, তবে তা জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহর শপথ, যে আল্লাহর ভয় থেকে কাঁদবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেমন দুধ আবার স্তনে ফিরে আসে না; এবং আল্লাহর পথের ধুলাবালি এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৬৩৩)
তিনি বলেছেন, ‘পুনরুত্থানের দিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ ছায়া প্রদান করবেন, যখন তাঁর ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না: (তার মধ্যে একজন হলেন) যিনি আল্লাহর স্মরণ করেন এবং তার চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রুসিক্ত হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৬০; মুসলিম, হাদিস: ১,০৩১)
আল্লাহর জন্য কাঁদার ৫টি উপায়
আমরা চাইলে এমন কিছু কাজ করতে পারি, যা আল্লাহর জন্য আমাদের কান্না এনে দেবে। এই কাজগুলো আল্লাহর রাসুল (সা.
১. কোরআন তিলাওয়াত শোনা: ইবনে মাস’ঊদ (রা.)-কে নবীজি (সা.) বলেছিলেন, ‘আমার কোরআন তিলাওয়াত কররে শোনাও।’ ইবনে মাস’ঊদ বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আমি আপনাকে কোরআন শোনাব, অথচ কোরআন আপনার ওপর নাজিল হয়েছে?’ নবীজি উত্তর দিলেন, ‘আমি অন্যদের কাছে কোরআন শুনতে ভালোবাসি।’ ইবনে মাস’ঊদ (রা.) তখন সুরা নিসা তিলাওয়াত শুরু করেন। ৪১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এলে আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এখন থামো।’ ইবনে মাস’ঊদ (রা.) বলেন, ‘আমি তাঁর দিকে তাকালাম, দেখলাম তাঁর চোখ অশ্রুতে ভিজে গেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,০৪৯, ৫,০৫০, ৫,০৫৫ ও সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০০)
আরও পড়ুনপৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মোহরানা১৪ এপ্রিল ২০২৫কোরআন শুনে যদি অন্তর নরম না হয়, তাহলে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ বলুন, কারণ শয়তান কোরআন শোনার মধ্যে আপনাকে বিরক্ত করতে পছন্দ করে, আর তারপর ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ বলুন, যা আপনি অধিকাংশ ভালো কাজের শুরুতে বলেন। এরপর সুরটি আবার শুনুন।
স্মরণ করুন, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য কি এখনো সেই সময় আসেনি, যখন বিশ্বাসীরা আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে বিনীত ও নরম হৃদয় হবে? যেন তারা তাদের পূর্ববর্তী সেই লোকদের মতো না হয়, যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল; অতঃপর দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ায় তাদের হৃদয় কঠোর হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের অনেকেই ছিল অবাধ্য।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ১৬)
২. প্রতিদিন এক মিনিট ব্যায়াম: আল্লাহর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করুন। কখনো কি ভেবেছেন যে আল্লাহ আপনাকে কতটা যত্ন নেন, কীভাবে তিনি বারবার আপনাকে আপনার প্রত্যাশা পূরণ করেন? আপনি কি কখনো তাঁর শক্তি এবং আপনার দুর্বলতা, আপনার মৃত্যু এবং তাঁর চিরকালীন জীবন নিয়ে চিন্তা করেছেন? একা বসে এক মিনিটের জন্য ভাবুন, সেই মুহূর্তের কথা যখন আপনাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে।
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ‘তিনটি বিষয় আমাকে কাঁদায়: আমাদের প্রিয় মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা; মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরুর ভয় এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে থাকার ভয়: সেখানে আমি জানি না, আমি জাহান্নামে চলে যাব নাকি জান্নাতে।’ (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ইমাম গাজালি, ১০/২৪০)
আরও পড়ুনজিভের জড়তা কাটাতে মুসা (আ.) যে প্রার্থনা করেছিলেন০৮ এপ্রিল ২০২৫৩. দৈনন্দিন জীবন পরকালের সঙ্গে তুলনা করা: হাসান (রা.)-এর কাছে যখন পানি আনা হয়েছিল, তিনি তা পান করার জন্য মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। হঠাৎ তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। বললেন, ‘আমি তাদের কথা ভেবে কাঁদছি, যারা জাহান্নামে আছেন, তারা বলবে, আমাদের জন্য কিছু পানি ঢেলে দাও…। জান্নাতবাসীরা বলবে, নিশ্চয় আল্লাহ তা অবিশ্বাসীদের জন্য হারাম করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ৫০)
৪. আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে মানুষ, কাঁদো, যদি কাঁদতে না পারো তবে নিজেকে কাঁদানোর চেষ্টা করো। বাস্তবে, জাহান্নামের বাসিন্দারা কাঁদবে, তাদের অশ্রু গাল বেয়ে নামবে, যেন সেগুলি নদীর মতো প্রবহমান, তারপর তাদের অশ্রু শেষ হয়ে গেলে রক্ত ঝরবে এবং তাদের চোখ পুঁজে ঢেকে যাবে।’ (সহিহ আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস: ৬০৩)
সুতরাং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন আপনি আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও ভয় থেকে সেই অবশিষ্ট অশ্রু আপনাকে দান করেন। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আমাদের জন্য চেষ্টা করে, আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথ দেখাব। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৮ এপ্রিল ২০২৫৫. কান্নার সময় আল্লাহকে স্মরণ করুন: যদি এমন হয় যে কোনো কারণে মনে আঘাত পেয়ে আপনি কাঁদছেন, তখন আল্লাহর কথা ভাবুন। তিনিই একমাত্র আপনাকে সফল করতে পারেন, অপমান ঘুচিয়ে দিতে পারেন এবং আপনার সঙ্গীকে নিখুঁত করে দিতে পারেন। সামাজিক মাধ্যমে দেখা কোনো ছবি বা ভিডিও দেখে যদি আপনার চোখে জল আসে, তাহলেও ভাবুন, তিনিই আপনার দেখার চোখে দিয়েছেন এবং সমস্যা সমাধানের সকল ক্ষমতা তার।
পরকাল সম্পর্কে কোনো আয়াত বা নবীজির (সা.) হাদিস শুনলেই আবু বকর (রা.) কাঁদতেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৯০৬)। উমর (রা.) বলেছেন, ‘যদি আকাশ থেকে ঘোষণা আসে যে, সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে একমাত্র একজন ছাড়া, আমি ভয় পাব যে, আমি সেই একজন হতে পারি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৪৩৭)
সুতরাং আল্লাহর ভয়ে কাঁদার জন্য আমরা বহু কারণ নিশ্চয়ই খুঁজে পাব। এবং সেই অশ্রু আমাদের জন্য পরকালে মুক্তির কারণ হবে, ইনশাআল্লাহ।
সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডট কম
আরও পড়ুনপ্রতিবেশীর অধিকার ইমানের মানদণ্ড১৪ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম দ র জন য ক রআন শ ন র জন য ক আম দ র আল ল হ বল ছ ন আপন ক স মরণ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন
যমুনা ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. বেলাল হোসেন সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দেশের একজন সফল উদ্যোক্তা। খবর বিজ্ঞপ্তি
যমুনা ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, মো. বেলাল হোসেন ১৯৫৬ সালে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে তাঁর পরিবারের দেশ-বিদেশে সুনাম আছে। পরিবারের মালিকানাধীন বৃহৎ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আছে নানা ধরনের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ খাদ্যশস্য শিল্প। তিনি একজন বিশিষ্ট আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক। বর্তমানে তিনি বেলকন কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, বিএইচ হাইটেক ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, নাদিয়া ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড ও বিএইচ স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বেলাল হোসেন নওগাঁ, দিনাজপুর ও হিলি অঞ্চলের বিভিন্ন ক্রীড়া ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের এডিজিপি ফেলো মেম্বারশিপ সম্মাননা লাভ করেন। ২০০৫ সালে এফএনএস বিজনেস অ্যাওয়ার্ডে সেরা কৃষিভিত্তিক শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
বেলাল হোসেন নওগাঁ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, নওগাঁ এবং বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতি, ঢাকার কার্যনির্বাহী সদস্য।