শেরপুরের গারো পাহাড়ে আনারস চাষের নতুন সম্ভাবনা
Published: 26th, April 2025 GMT
আনারসের রাজধানী মধুপুরের আনারসের রসালো স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছে শেরপুরের গারো পাহাড়েও। দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের গারো পাহাড়ে রসালো আনারসের পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফল হয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে আনারস চাষ।
গতবছর মধুপুরের আনারস চাষি পিটার ডালবট নামে এক গারো আদিবাসী শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের উত্তর বাঁকাকূড়া গ্রামে তার শ্বশুর হালদ্রা সাংমার ৬ একর জমিতে বানিজ্যিক ভাবে এ আনারস চাষ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় একটু চিন্তায় পড়লেও পরবর্তিতে ফলন দেখে আশায় বুক বাঁধেন পিটার।
আনারস যখন পাকা শুরু হয় তখন দেখেন মধুপুরের চেয়ে অনেক বেশি সুস্বাদু ও রসালো হয়েছে। সমস্ত বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ, সেচ, সার, পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা। পুরো বাগানের প্রায় সোয়া লাখ পিস আনারস ১৬ লাখ টাকায় বিক্রিও করেন তিনি। এর পর থেকেই আশপাশের অনেকেই এ বাগান দেখে এবং চাষাবাদের আগ্রহী হয়ে এবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, শেরপুরের গারো পাহাড়ে কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে আনারস চাষ। বন্য হাতির আক্রমণে ধানসহ অন্যান্য ফসলের বারবার ক্ষতির মুখে পড়েন পাহাড়ি এলাকার কৃষকরা। ফলে তারা বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে এখন ঝুঁকছেন আনারস চাষে। আর জলডুগি জাতের এ আনারস রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে এ আনারস এখন দেশের বিভিন্ন জেলাতেও রপ্তানি হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা আশরাফুল আলম বলেন, “গতবছর আমি আনারস চাষে লাভবান হয়েছি। এবার আট একর জমিতে দ্বিতীয়বারের মতো আনারস চাষ করেছি। আমি এবার প্রায় দুই লাখ চারা রোপণ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। ধান বা অন্যান্য ফসল বন্য হাতির আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু আনারস তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও লাভজনক। গতবারের মতো এবারও ভালো মুনাফার প্রত্যাশা করছি।”
ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক জমশন ম্রং বলেন, “এবার ২০ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি আশাবাদী, এবারও দ্বিগুণ লাভ হবে তার। তার দাবি সামনের বার আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করবেন।”
তিনি আরো বলেন, “সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার আনারস বিক্রির জন্য বাজারে নিতে হয়নি। সব ক্ষেতেই বিক্রি হয়ে গেছে।”
জেলা শহর থেকে আগত কলেজ শিক্ষক মফিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের জেলায় আনারস চাষ হয় আমি প্রথম দেখলাম। এত মিষ্টি আনারস আমাদের শেরপুরের আমি নিজে খেয়ে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না“ আমি নিজের হাতে বাগান থেকে কেটে খেলাম। মধুর মতো মিষ্টি। আমি চাই আমাদের শেরপুরের গারো পাহাড়ে অনেক অনাবাদি জমি আছে। সেই জমিগুলোতে যেন আরও বড় পরিসরে আনারস চাষ করা হয়।”
কলেজ শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলেন, “আনারসের সাইজ ছোট হলেও মিষ্টি যেন মধুর হাড়ি। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা এখন সময়ের দাবি। শেরপুরে চাষ হলে আমরা হাতের নাগালে সুমিষ্ট আনারস অল্প দামে পাব। এতে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে।”
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আনারস চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ঝিনাইগাতীর সফলতা দেখে এখন নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদীতেও এই চাষ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বন্য হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই অঞ্চল শিগগিরই দেশের অন্যতম প্রধান আনারস উৎপাদন অঞ্চলে রূপ নিতে পারে।”
ঢাকা/তারিকুল/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫