হারুন রশীদকে প্রধান সম্পাদক করে দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন আরণ্যক নাট্যদলের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরণ্যকের নিজস্ব কার্যালয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় এই কমিটি গঠিত হয়। আগামী দুই বছর এই কমিটির নেতৃত্বে আরণ্যকের সব ধরনের কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হবে। 

কমিটিতে শেখ জিয়াদুল হককে অর্থ সম্পাদক, মরু ভাস্করকে প্রযোজনা সম্পাদক, অপু মেহেদীকে প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবং রুবলী চৌধুরীকে দপ্তর সম্পাদক মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া সম্পাদক মণ্ডলীর সহযোগী হিসেবে রয়েছেন শামীমা শওকত লাভলী, হাসিম মাসুদ ও সুজাত শিমুল।

নাট্যদলটির জ্যেষ্ঠ সদস্য চঞ্চল চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন আরণ্যক নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রশীদ, সিনিয়র সদস্য আজিজুল হাকিম, ঠান্ডু রায়হান, পরিমল মজুমদার, দিলু মজুমদারসহ দলের সদস্যবৃন্দ।

আরণ্যকের প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রশীদ বলেন, ৫৩ বছর আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল আরণ্যকের। যে স্বপ্ন ও লক্ষ্য নিয়ে আরণ্যক যাত্রা শুরু করেছিল, তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয়েছে আরও নতুন নতুন স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা। নতুন এ সম্পাদক মণ্ডলী সেই নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও সুন্দর আগামীর দিকে আরণ্যককে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর হারুন রশীদ বলেন, ‘শুরু থেকেই আরণ্যক নাট্যদল একটি নির্দিষ্ট আদর্শ লালন করে তাদের নিরন্তর নাট্যচর্চায় নিয়োজিত রয়েছে। দলের সব সদস্য ও কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমি ও আমার কমিটি সেই আদর্শে বলীয়ান হয়ে দলের আগামী দিনের কর্মকাণ্ড সুচারুরূপে পালন করতে সচেষ্ট হব।’

সভাপতির বক্তব্যে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘নতুন এ কমিটির মাধ্যমে একদল নবীন ও অ্যানার্জিটিক সদস্যরা দলের দায়িত্ব নিল। আমি বিশ্বাস করি, তারা তাদের মেধা, শ্রম ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে আরণ্যক নাট্যদলের আদর্শে দলকে আরও বহুদূর নিয়ে যাবে।’

১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে নাট্যচর্চায় যাত্রা শুরু করে আরণ্যক নাট্যদল। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি দিয়ে প্রথম মঞ্চে আসে তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ