বাদী জানেন না আসামি কে, এ ধরনের মামলার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি: আসক
Published: 29th, April 2025 GMT
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মামলা দায়ের হয়েছে। এসবের মধ্যে বেশকিছু মামলায় সমন্বয়হীনতা বা অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ উঠেছে। মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের নামে হয়রানির অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা সংবাদ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশের কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা করার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলায় কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আসামি করা হলে, তা মানবাধিকারের পরিপন্থী।’
এতে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবি এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে গোয়েন্দা হেফাজতে আটক রাখার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বরেণ্য মানবাধিকার কর্মী জেড আই খান পান্না আদালতে আইনগত পদক্ষেপ নেন; অথচ তাকেও একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মোতালিব। এ ঘটনায় মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন মামলা দায়ের করেন, একই ঘটনায় মো.
আসক বিবৃতিতে বলে, ‘‘সম্প্রতি একটি মামলায় অভিনেতা ইরেশ জাকেরসহ অন্তত ২৫ জন সাংবাদিককে অন্তর্ভূক্তি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করাই আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা কখনো কখনো আইনকে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষদের হয়রানির ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন সময়ে ‘গায়েবী’ মামলার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়েও ‘গায়েবি মামলা’ ফিরে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা ঘটনাস্থলে কখনোই উপস্থিত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কিছু মামলার এজাহার ও আসামি একই।’’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি অপরাধের বিচার করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেভাবে ঢালাও মামলা হচ্ছে, তা অগ্রহণযোগ্য। হত্যা মামলার বিচার হয় সুষ্ঠু তদন্ত, সাক্ষ্য প্রমাণ ও আলামতের ভিত্তিতে। অথচ অনেক মামলায় আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে অথবা ভিন্ন উদ্দেশ্যে। কেননা মামলায় এমন অনেক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যার সঙ্গে ঘটনার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।’
আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, এমনকি বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত এবং গণমাধ্যমকর্মী যারা আসামি হয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, অনতিবিলম্বে তদন্তসাপেক্ষে এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আসক হয়র ন র সরক র র র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে বিএনপির কোনো শক্তির প্রয়োজন হবে না : মামুন মাহমুদ
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বিএনপির রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনো উপদেষ্টা কিংবা কোনো শক্তির প্রয়োজন হবে না। আমাদের পাশে জনগণ আছে, জনগণের মাধ্যমেই আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবো।
শহীদ পরিবারে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি আমাদের প্রাণের দাবি। এটা বিএনপির দাবি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আর এদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।
স্বৈরাচার বিদায় হলেও মানুষের ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমরা বিগত ১৫ বছর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। যে শহীদরা জুলাইয়ের আন্দোলনে হত্যার শিকার হয়েছেন তারা কেউ উপদেষ্টা, ক্ষমতা কিংবা নতুন দল গঠনের জন্যে আন্দোলনে নামেনি। তারা নেমেছিল স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। অত্যাচারে বিরুদ্ধে।
বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুথান ও রাষ্ট্র সংস্কার শীর্ষক আলোচনা সভা ও চিত্র প্রদর্শণীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথ্ াবলেন। রবিবার (১১ মে) রাত ৮ টায় নাসিক ৩ নং ওয়ার্ডের মুক্তিনগওে গ্রীন গার্ডেন রেস্টুরেন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলে সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ কর্তৃক এ চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সবার আয়োজন করা হয়।
চিত্র প্রদর্শনীতে বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হত্যাযজ্ঞসহ অমানবিক ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হয়।
এ সময় মামুন মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান ৫ আগস্টেই বলেছে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদ যেনো আবার গর্জে উঠতে না পারে তার জন্য আমরা আছি। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের পাশেও বিএনপি থাকবে বলেও তিনি বলেছেন।
এছাড়াও তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জনগণের মনের ভাষা জানেন না মন্তব্য করে মামুন মাহমুদ বলে, উপদেষ্টারা অনভিজ্ঞ তারা জনগণের মনের ভাষা জানেন না। একটা রাজনৈতিক দল জনগণের মনের ভাষা পড়তে পারে।
আলোচনা সভায় গণঅভ্যুত্থান সিদ্ধিরগঞ্জে শহীদ হওয়া আকাশের পিতা আকরাম হোসেন বলেন, আমার চোখের সামনে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমি লাশ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি, কিন্তু তখন রাস্তায় ছিল আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন। যার কারণে হাসপাতালেও ঠিক মতো নিতে পারিনি।
স্বৈরাচার দলের দ্বারা আমার সন্তান হত্যা হয়েছে। স্বৈরাচার পতন হলেও এখনো কেনো আমরা বিচার পাচ্ছি না?। সন্তান হত্যার বিচার পেতে যদি দেরি হয় তাহলে আমিও তো মাঠে নামবো। প্রয়োজনে আমিও শহীদ হবো।
বিএনপির উদ্দেশ্য এই পিতা বলে, আমরা দেখতে পাই বিএনপির কিছু নেতারা আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। আপনারা যদি আওয়ামী লীগের সাথে মিশেন তাহলে তো যেই লাউ সেই কধুই। শহীদদের সাথে বেইমানি করবেন না।
বারান্দার গ্রীল ছিদ্র হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা শহীদ সুমাইয়ার বোনের জামাই বিল্লাল বলেন, আমার মামলাটি এখনো কেনো আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে নেওয়া হয়নি এই সরকারের কাছে আমার এটা প্রশ্ন। আমরা প্রশানের কাছে সব ধরনের তথ্য পৌঁছে দিয়েছি তবুও কেন না?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাকের আহমেদ সোহানের সভাপতিত্বে আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্বজন, জেলা বিএনপি, মহানগর ছাত্রদল ও যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।