সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশে বিসিএস হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারকে শেষ পর্যন্ত আলাদা করা হলোই না। আবার রাজস্ব নিরূপণ ও আদায় করা অর্থ বিভাগকেও রাখা হয়েছে নিরীক্ষার বাইরে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, যেকোনো আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে। আর সিএজি কোনো বিধি প্রণয়ন করতে গেলে লাগবে সরকারের অনুমোদন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধ্যাদেশটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) সাংবিধানিক কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংবিধানের ১২৮(৪) অনুচ্ছেদ সিএজিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, এ অধ্যাদেশ তার পরিপন্থী। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সিএজিকে অন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের অধীন করা হবে না।’

মোট ৭ পৃষ্ঠার সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর নানা দিক বিশ্লেষণে এসব পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপস্থাপন করা এ অধ্যাদেশ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ গত ১৭ এপ্রিল অনুমোদন করেছে। ৪ মে এ অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো সরকারি নিরীক্ষা আইন করা হয়নি। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথমবারের মতো একটি অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নিয়েছিল ২০০৮ সালে। এর চার বছর পর ২০১২ সালে আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়, তখন অর্থসচিব ছিলেন মোহাম্মদ তারেক।

তারপরও কেটে যায় এক যুগের বেশি সময়। অর্থ বিভাগে এরপর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন ফজলে কবির, মাহবুব আহমেদ, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, আবদুর রউফ তালুকদার এবং ফাতিমা ইয়াসমিন। কেউই বিষয়টিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক পর্যন্ত নিয়ে যাননি বা যেতে পারেননি। বর্তমান অর্থসচিব মো.

খায়েরুজ্জামান মজুমদারই প্রথম অর্থসচিব, যিনি এটিকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পাস করিয়ে নিয়ে আসার দাবিদার। যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৮ পৃষ্ঠার একটি আইনের খসড়া দাঁড় করিয়েছিল ফাতিমা ইয়াসমিনের নেতৃত্বাধীন অর্থ বিভাগ।

জানা গেছে, ওই বছরের ১৬ এপ্রিল তিন সপ্তাহের সময় দিয়ে খসড়ার ওপর উন্মুক্ত মতামতও চেয়েছিল বিভাগটি। কিছু মতামত বিভাগটি তখন পায়ও। এরপর কেটে যায় আরও দুই বছর। সম্প্রতি একটা খসড়া নতুন করে তৈরি করে সিএজি কার্যালয়। এতে বিসিএস হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারকে আলাদা করার সুপারিশ না থাকলেও অর্থ বিভাগের প্রাথমিক খসড়ায় তা রাখা হয়। চূড়ান্ত খসড়ায় আবার তা বাদও দেওয়া হয়। অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার অবশ্য এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাডার আলাদা করাটা অধ্যাদেশে রাখার বিষয় নয়। তাই বাদ দেওয়া হয়েছে।

উপেক্ষিত রাজস্ব নির্ধারণের নিরীক্ষা

অধ্যাদেশে ‘রাজস্ব ও প্রাপ্তিসংক্রান্ত হিসাব নিরীক্ষা’ নামে একটি ধারা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর ও কর-ব্যতীত রাজস্ব ইত্যাদিসহ সংযুক্ত তহবিলের প্রাপ্তি এবং প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবের প্রাপ্তিগুলো প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী ঠিকভাবে জমা ও হিসাবভুক্ত হয়েছে কি না, সিএজি তা নিরীক্ষা করতে পারবেন।

রাজস্ব নিরূপণ বা নির্ধারণের যথার্থতাকে নিরীক্ষার আওতায় রাখা হয়নি বলে প্রশ্ন উঠেছে। সিএজি কার্যালয় অধ্যাদেশের যে খসড়া তৈরি করে দিয়েছিল, চূড়ান্ত খসড়া করার সময় অর্থ বিভাগই তা বাদ দিয়েছে। বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে সিএজি কার্যালয়ের সূত্রগুলো জানায়।

অথচ সুপ্রিম কোর্টের এমন নির্দেশনা রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রেই সরকারি অর্থ জড়িত, সেসব ক্ষেত্রেই সিএজির নিরীক্ষার অধিকার রয়েছে। ২০২২ সালের বাংলাদেশ ও অনান্য বনাম রেডিয়্যান্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে যেখানে সরকারি অর্থ লেনদেন হয়, সেখানেই সিএজির নিরীক্ষা হতে পারে। রায়ে আরও বলা হয়, যদি নিরীক্ষার ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তবে নিরীক্ষার কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে যাবে।

সাবেক সিএজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে গত শনিবার একটি ইংরেজি দৈনিকে তিনি একটি কলাম লিখে বলেছেন, অনুমোদিত সরকারি নিরীক্ষা অধ্যাদেশে সিএজির সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে খর্ব করা হয়েছে। এটি সংবিধানেরও পরিপন্থী। অধ্যাদেশে সিএজির প্রশাসনিক ক্ষমতা কমানো হয়েছে, যেখানে তা আরও সম্প্রসারণ করার দরকার ছিল।

মুসলিম চৌধুরী ওই কলামে আরও লিখেছেন, অধ্যাদেশকে সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে হবে। নইলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিএজি কার্যালয় শুধু দুর্বলই হবে না, এ অধ্যাদেশ রাষ্ট্রের জবাবদিহিমূলক চরিত্র, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা এবং স্বচ্ছ ও ন্যায়নিষ্ঠ প্রশাসনিক সংস্কৃতিকে চূড়ান্তভাবে বিপন্ন করে তুলবে।

সরকারের হস্তক্ষেপের যত সুযোগ

অধ্যাদেশের আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ধারায় বলা হয়েছে, সিএজি কার্যালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো, পদ-বিন্যাস, দপ্তর একীভূতকরণ, পৃথক্‌করণ বা বিলুপ্তকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের অনুমোদন গ্রহণের এ বাধ্যবাধকতা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চুক্তি সম্পাদনবিষয়ক ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক বা বিদেশি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির সঙ্গে পরামর্শ ও সহযোগিতা আদান-প্রদানের জন্য চুক্তি করতে পারবে সিএজি, তবে তার আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করতে গেলেও সিএজির ওপর প্রশাসন বিভাগের কর্তৃত্ব তৈরি হবে এবং সিএজির প্রশাসনিক স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়বে।

আবার বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাবিষয়ক ধারায় বলা হয়েছে, সিএজিএর সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার সরকারি গেজেটের মাধমে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। অর্থাৎ বিধি প্রণয়নের চূড়ান্ত ক্ষমতা সরকারের হাতেই থেকে গেল। এর ফলে প্রশাসন বিভাগই নিয়ন্ত্রণ করবে নিরীক্ষাপ্রক্রিয়া। অথচ সংবিধানের ১২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সিএজিকে অন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের অধীন করা হবে না।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অধ্যাদেশটি যেভাবে পাস করা হয়েছে, তা সিএজির সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করার শামিল। এতে এমন কিছু বিধান রাখা হয়েছে, যা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সিএজিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এটি একটি কর ফাঁকি ও দুর্নীতি সহায়ক আইন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং সরকারের জন‍্য বিব্রতকর। অন‍্যদিকে এই অধ্যাদেশ অনুসারে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারের হাতে ন‍্যস্ত করে সিএজিকে বাস্তবে সরকারের কর্তৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অধ্যাদেশে সিএজির জন্য রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়কে নিরীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছে। এতে সরকারি রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ের বিষয়টি জবাবদিহির বাইরে থেকে যাবে। তিনি বলেন, ‘রাজস্ব নিরূপণ ও আদায়ে অনিয়ম এবং যোগসাজশমূলক জালিয়াতি যে বাংলাদেশে কর ফাঁকির অন্যতম মাধ্যম, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপেক্ষা করার বিষয়টি কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আরও সংবেদনশীলতার পরিচয় দেবে বলে আশা করেছিলাম।’

মন্ত্রণালয়গুলো জবাব দিতে চায় না

সংবিধানের ১২৭ থেকে ১৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সিএজির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মহাহিসাব নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব এবং সব আদালত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারি হিসাব নিরীক্ষা করবেন ও অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং সে উদ্দেশ্যে তিনি বা সেই প্রয়োজনে তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত যেকোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত সব নথি, বই, রসিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন, ভান্ডার বা অন্য প্রকার সরকারি সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হবেন।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি হচ্ছে নিরীক্ষা। অথচ সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব আপত্তি ওঠে নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলোয়, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে এগুলোর জবাব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। নিরীক্ষা আইন হলে এই প্রবণতা রোধ করা যেত। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন সাবেক সচিব নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জবাব এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ, জবাব দিতে গেলে নিজেদের ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

সিএজি কার্যালয়ের বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী অনিয়মের আপত্তির জবাব দিতে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময়ের মধ্যে জবাব আসে না এবং জবাব ছাড়াই তৈরি হয় নিরীক্ষা প্রতিবেদন। সিএজি কার্যালয়ের প্রস্তুত করা নিরীক্ষা প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তরের পর সেগুলো যায় সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে কমিটিগুলো অনেক সময় বৈঠকই ডাকত না।

কমলাপুর, চট্টগ্রাম ও মোংলায় যেভাবে বাধা

সিএজি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কমলাপুর কাস্টম হাউসের ইন্টারনাল কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) নিরীক্ষা করা হয়নি। কারণ, গোপনীয় তথ্য ও বিল অব এন্ট্রিসহ নানা দলিল নিরীক্ষা দলের কাছে উপস্থাপন করেনি এনবিআর। আবার তিন দফা নিরীক্ষা দলের উদ্যোগেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। নিরীক্ষা দলকে তথ্য দেয়নি এমনকি কর সার্কেল ২৮৮ এবং মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সরকারের সংযুক্ত তহবিলে প্রাপ্ত অর্থ নির্ধারণের পদ্ধতি সঠিক কি না, তা যাচাই করতে নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে অধিকার দিতে রাজি নয় এনবিআর। এনবিআরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। সংস্থাটির ভাষ্য হচ্ছে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও কাস্টমস আইনের ওপর নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। আয়কর আইন, কাস্টমস আইন ও মূসক আইনে দেশের সব আইনের চেয়েই বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা আছে।

আয়কর আইনে উল্লেখ রয়েছে, বাংলাদেশে বলবৎ অন্য আইনে যা–ই থাকুক না কেন আয়কর কর্তৃপক্ষ, আপিল ট্রাইবুন্যাল ও সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া অন্য কেউ কর নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কাস্টমস আইনে উল্লেখ আছে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আদালত ছাড়া কাস্টমস দলিল অন্য কারও কাছে সরবরাহ দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে মূসক আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূসক কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ কর নির্ধারণ ও নিরীক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, কোনো আইনই সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়।

এদিকে আপিল বিভাগের ২০২৪ সালের মূসকসংক্রান্ত একটি মামলার রায়কেও সামনে এনেছেন সিএজি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। এতে বলা হয়েছে, শুল্ক এবং মূসক পরিশোধ সত্ত্বেও আমদানিকারক এবং অন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড পরীক্ষা করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষা মহাপরিচালকের রয়েছে। নিরীক্ষা বিভাগ যদি মনে করে যে মূসক এবং অন্য শুল্ক নির্ধারণে অনিয়ম হয়েছে, তাহলে ভ্যাট প্রদানকারী এনবিআরকে নথি বা তথ্য দেবে এবং এগুলো পরে নিরীক্ষা বিভাগকে সরবরাহ করবে এনবিআর।

চোখের সামনে সিএজির মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থাটিকে অধ্যাদেশ করে এভাবে অবমূল্যায়ন করার বিষয়টিকে মানতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সিএজি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আয়কর, মূসক ও শুল্কবিষয়ক মোট ৫৫ হাজার কোটি টাকার পুঞ্জীভূত নিরীক্ষা আপত্তি এখনো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল র আর থ ক ম হ ম মদ অন চ ছ দ কর ত ত ব র ক ষমত র সরক র ক স টমস প রণয়ন র কর ত পর চ ল অন য ক মন ত র আইন র ব ষয়ক ব ষয়ট ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ