শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে তিতুমীর কলেজে গণস্বাক্ষর
Published: 24th, May 2025 GMT
সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিতে পূর্ণ পুনর্বহালের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শনিবার (২৪ মে) আয়োজিত এ কর্মসূচিতে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি একজন সৎ, নিরপেক্ষ এবং আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে পাঠদানে নিয়োজিত ছিলেন। একজন সম্মানিত শিক্ষকের মানহানি শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকি।
আরো পড়ুন:
ইবিতে অন্যের ভরসায় চলছে তদন্ত প্রক্রিয়া
ঢাবির সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীদের দেখার কেউ নেই
স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি আগামীকাল রবিবার (২৫ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাসিবুর রহমান বলেন, “একটি দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো শিক্ষা। কিন্তু সেই শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ শিক্ষক। শিক্ষকই যদি বাকস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে জাতি কীভাবে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা পাবে?”
তিনি বলেন, “সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান বৈষম্যবিরোধী বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে সরকারের কিছু প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে মত প্রকাশ করে। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সরকারি চাকরিজীবীদের সীমাবদ্ধতা, বৈষম্য এবং প্রশাসনিক জটিলতার কথা তুলে ধরেন। এছাড়া দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জনপ্রশাসন ব্যবস্থার অসঙ্গতি নিয়েও সরব হন তিনি। একজন শিক্ষক যৌক্তিক সমালোচনা করলে তাকে চাকরি হারাতে হবে কেন? একজন সরকারি কর্মচারী কি শুধুই সরকারের আদেশ পালনের যন্ত্র, নাকি তিনি জনগণের সেবক এবং একজন চিন্তাশীল নাগরিক?”
তাসিবুর রহমান বলেন, “ড.
তাসিবুর রহমান আরো বলেন, “এই দাবি শুধু একজন শিক্ষকের পক্ষে নয়, বরং গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে। বাকস্বাধীনতা হরণ করে কোনো জাতি এগোতে পারে না। আমরা ইতিমধ্যে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানবন্ধন করেছি,গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করছি এরপর কঠোর কর্মসূচির দিকে অগ্রসর হব।”
গণিত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহ তানবির বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষা খাত দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। ২৪ পরবর্তী সরকারের উচিত ছিল একটি স্বাধীন শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষার সর্বস্তরে সংস্কার আনা। কিন্তু তারা তা না করে শিক্ষক নিয়োগে অব্যবস্থাপনা, মেধাবীদের অবমূল্যায়ন এবং অহেতুক ওএসডি ও বদলির মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমান করেছে।”
তিনি বলেন, “এই অন্যায়ের শিকার হয়েছেন কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান। বৈষম্যবিরোধী বক্তব্য ও লেখালেখির কারণে তাকে ওএসডি, পদোন্নতি বঞ্চনা ও বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি করা হয়েছে। অনার্স পর্যায়ের গণিতের উপর ১১টি বইয়ের লেখক এমন একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষককে দমন নয়, সম্মান জানানো উচিত। তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে কলেজে সম্মানের সঙ্গে পুনর্বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাকা/হাফছা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ত ম র কল জ গণ ত ব ভ গ র স ব ধ নত ব যবস থ র গণ ত কল জ র সরক র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫