কলেজশিক্ষক নাদিরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির
Published: 24th, May 2025 GMT
নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। নাদিরা ইয়াসমিনকে হুমকি দেওয়া এবং চাকরিচ্যুত করার দাবির ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তারা।
আজ শনিবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সংবাদমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠান। বিবৃতিতে হুমকিদাতা ও হয়রানিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারে অশালীন মন্তব্য, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাদিরা ইয়াসমিনের ন্যায়সংগত মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, তাঁর প্রতি উগ্র–প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর আক্রমণের হুংকারকে তারা ধিক্কার জানায়।
বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাধীনতা এবং একজন নাগরিক হিসেবে ব্যক্তি মানুষের মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর এমন আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ নয়, বরং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর এক নগ্ন আঘাত।
স্বাধীন, নির্ভয়ে জ্ঞানচর্চা ও মতপ্রকাশের অধিকার প্রত্যেক শিক্ষকের মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, এই অধিকারকে কোনো হুমকি বা চাপের মুখে খর্ব করার অপচেষ্টা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য চরম লজ্জাজনক।
বিবৃতিতে আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এর মধ্যে রয়েছে নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনলাইন হয়রানি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে তাদের শিক্ষকের শিক্ষাগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে এবং দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সুস্থির পরিবেশ বজায় রাখতে তাদের অঙ্গীকারবদ্ধতা প্রমাণ করবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ