জি এম কাদেরের বাসায় হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ, রংপুরে হঠাৎ সারজিস
Published: 1st, June 2025 GMT
রংপুরে জার্তীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসায় হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপি নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছে যৌথবাহিনী। শনিবার রাতে রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে যৌথবাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ সহযোগিতা কামনা করে।
শনিবার রাত ১২টার পর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ঘটনা জানতে পেরে বৃষ্টিতেই রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তিনি সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধীর ওই দুই নেতা সেদিনের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর জাতীয় পার্টির হামলার অভিযোগ তুলে মহানগর কোতোয়ালি থানায় মামলার অভিযোগপত্র দিয়ে ফিরছিলেন। তাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ডাকা হয় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন ও জেলা সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুকে। তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়, ওই হামলার ঘটনায় তাদের দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত কি না।
এসময় হামলার সময়কার ভিডিও ফুটেজ এবং স্থিরচিত্র দেখিয়ে হামলাকারীদের শনাক্ত করতে তাদের সহযোগিতাও চায় সেনাবাহিনী।
ঘটনাস্থলে মহানগর বৈষম্যবিরোধীর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ তাদেরকে ফোন দিয়ে কোথায় আছেন জানতে চাওয়া হয়। তারা পায়রা চত্বরে আছেন জানালে সেনাবাহিনী সদস্যরা সেখানে চলে আসেন। হামলার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্তে তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় কারা জড়িত আছে। হামলাকারীদের শনাক্তে তাদের সহযোগিতা চান তারা।
এসময় বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদের এখানে ডাকা হয়েছে। আমাদের কাছেও একই ধরনের সহযোগিতা চান তারা। তাদের দেখানো ভিডিও ফুটেজ থেকে আমরা একজনকে শনাক্ত করেছি। এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে দলের কেউ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এমন সংবাদ জানতে পেরে রাত ১টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তিনি ওই স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রংপুরে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের গ্রেপ্তার না করে অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের বিব্রত করলে আগামীকাল রংপুরের রাজপথে আবার দেখা হবে। আর আমরা সেখানে সামনের সারিতে থাকব।’ এর কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থল পায়রা চত্বরে এসে উপস্থিত হন সারজিস আলম। সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জাতীয় পার্টি বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হতে সমর্থন দিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগের বি টিম জাতীয় পার্টি। তারা শান্তিপূর্ণ রংপুরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের মিটিং-মিছিলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছে। জি এম কাদের রংপুরে এসে গোপন বৈঠক করে জাতীয় পার্টির আড়ালে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ষড়যন্ত্র করছিল। বৈষম্যবিরোধীরা এর প্রতিবাদ করে মিছিল করলে সেখানে তাদের ওপর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। জাতীয় পার্টির নেতা অবৈধ ভোটে নির্বাচিত মেয়র এখন পুনর্বহাল চেয়ে আন্দোলন করছে, এটা ভালো লক্ষণ নয়। তারা কীভাবে মিটিং-মিছিল করে, আল্টিমেটাম দেয়, তাদের সঙ্গে কারা আছে আগে এসব খুঁজে বের করতে হবে। এসময় রংপুরের শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান সারজিস।
সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বার্থে সবকিছু করতে প্রস্তুত, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যেটা যাবে, সেটা দলমত নির্বিশেষে যে খারাপ কাজ করবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান খুবই কঠোর। এটাই আমাদের বার্তা। ওনারা দু’জন আমাদের সহায়তা করতে চেয়েছেন। ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি দেখে শনাক্ত করতে পেরেছেন কে কে আছে তাদের দলে, অনেকের হাতে লাঠি এবং অন্যান্য জিনিস ছিল-যা থাকার কথা ছিল না। এজন্য তারা বিব্রতবোধ করেছেন এবং আজ রোববার তাদের হাজির করবেন বলে কথা দিয়েছেন।
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন।
রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সেনপাড়ার স্কাইভিউ বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
হামলার ঘটনায় একটি অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে মহানগর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এতে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা আরিফ আলী বাদী হয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ এম ক দ র জ ত য় ন গর ক প র ট ন ত কর ম র এম ক দ র র র ন ত কর ম র সহয গ ত আম দ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বাজেট বাড়ল ৮৪২ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে সর্বমোট ২৪২৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ১৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতে ৯৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতের পরিমাণ ছিল ৬২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং পরিচালন খাতের পরিমাণ ছিল ৯৫২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে গত অর্থ বছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মোট সংশোধিত বাজেট এর পরিমাণ ছিল ১৫৮০ কোটি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এবারের প্রস্তাবিত বাজেট গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪২ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বেশি।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় যে সমস্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (২য় পর্ব) প্রকল্প, নড়াইল বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম ও টেবিল টেনিস ভবনের অধিকতর উন্নয়ন এবং ইনডোর স্টেডিয়াম ও ভলিবল স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্প, বিকেএসপির প্রশিক্ষণ সুবিধাদির আধুনিকায়ন এবং ভৌত অবকাঠামোর সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়) প্রকল্প, টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস ফর আন্ডার প্রিভিলেজড রুরাল ইয়ং পিপলস অব বাংলাদেশ (২য় পর্যায়), ফিজিবিলিটি স্টাডি ফল নিউ প্রজেক্টস অব ডিওয়াইবি, ৬৪টি জেলায় তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, দেশের ৪৮টি জেলায় কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, সাভার, ঢাকার প্রশিক্ষণ সুবিধাদি সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ, ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড : ইম্প্রুভিং স্কিলস এন্ড ইকনোমিক অপরচুনিটিস ফর উইমেন এন্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার’, বাংলাদেশ প্রকল্প, ইকোনোমিক এ্যাকসিলারেশন এন্ড রিজিলিয়েন্স ফর নিট, লাইফ স্কিলড এডুকেশন ইন ইয়ুথ ট্রেনিং সেন্টার অব ন্যাশনাল ইয়ুল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্প।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতি বছর বাজেটে যে খাতসমূহে বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেকার যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উন্নয়নমূলক কাজে যুবকদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণে উৎসাহিতকরণ, সফল যুবকদের পুরস্কার প্রদান ও যুব সংগঠনকে অনুদান প্রদান, যুব কার্যক্রমের উপর গবেষণার ও জরিপ, জাতি গঠনমূলক কাজে যুবকদের সম্মৃক্তকরণ ও ক্ষমতায়ন, যুবকদের প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও তাদের জাতীয় উন্নয়নে মূলধারার সাথে সম্পৃক্তকরণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন অংশগ্রহণ ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান, ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রতিভা অন্বেষণ, গ্রামাঞ্চলে ক্রীড়া পরিবেশ সৃষ্টি ও দক্ষ ক্রীড়াবিদ তৈরি, বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থাকে অনুদান প্রদান ও অসচ্ছল ক্রীড়াবিদদের কল্যাণ অনুদান প্রদান ও ক্রীড়া স্থাপনা নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ।
আরো পড়ুন:
ঠিকাদারি কাজে উৎসে কর কমল
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান সংবিধান পরিপন্থি: টিআইবি
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/ইয়াসিন