সমকাল: আপনারা কেন বাইসাইকেল ইন্ডাস্ট্রিতে এলেন? আকিজ বাইসাইকেলের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন: বাইসাইকেল শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বেও এর বড় একটি বাজার রয়েছে। দেশের মোট চাহিদার অর্ধেকেরই বেশি এখনও আমদানিনির্ভর। ফলে আমরা দেখেছি, এখানে যদি গ্রাহকের চাহিদামতো পণ্য উৎপাদন করা যায়, তাহলে এ খাতে ভালো করা সম্ভব। আমরা মান নিশ্চিত করে দেশের গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী দামে বাইসাইকেল দিচ্ছি। বাইসাইকেলের কাঁচামাল এবং মেশিনারিজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। যার মধ্যে নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, তাইওয়ান, চীন, ভারত অন্যতম। এ জন্য খুব দ্রুত আমরা গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ২০২৩ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে আমরা দ্রুত স্থানীয় বাজারের প্রায় ১০ শতাংশ দখলে নিতে পেরেছি। আমরা আশা করছি, যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি, সেটি ধরে রেখে দ্রুত এগোতে পারব।

সমকাল:  স্থানীয় বাজারের বড় অংশ এখনও আমদানিনির্ভর। এই নির্ভরতা কমাতে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন: দেখুন, আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। দ্রুতই বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে বিশ্বাস করি। আমরা ন্যূনতম ৬ হাজার ৯০০ টাকায় বাইসাইকেল দিচ্ছি। আবার ৪৫ হাজার টাকাতেও আমাদের বাইসাইকেল রয়েছে। ফলে দেশের সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্যই আমাদের বাইক রয়েছে। আমরা ইলেকট্রিক, স্পোর্টস, রেসিং, ফ্যাট, ফোলডিং ইত্যাদি ক্যাটেগরিতে বাইসাইকেল উৎপাদন এবং বাজারজাত করছি। আশা করছি এর প্রভাব বাজারে পড়বে।

সমকাল: বাইসাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কিনা?

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন: বাইসাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়াতেও আমরা কাজ করছি। বাইসাইকেল পরিবেশবান্ধব এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক একটি যান। ফলে উন্নত বিশ্বে দিন দিন কিন্তু বাইসাইকেলের কদর বাড়ছে। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, আমরা স্বল্প দূরত্বেও রিকশা কিংবা অন্য যানবাহন ছাড়া চলতে পারি না। এ ধরনের অভ্যাস বদলে বাইসাইকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাইসাইকেলের এই গুরুত্ব তুলে ধরছি। আমরা সব সময় তারুণ্যের চঞ্চলতা ও সুস্থ বিনোদনকে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গত বছর আমরা ‘আকিজ বাইসাইকেল স্পোর্টস ফেস্ট ২০২৪’ আয়োজন করি। এ ধরনের কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখব।

সমকাল: দেশীয় বাইসাইকেলের বাজার বাড়াতে সরকারের কাছে আপনাদের কোনো দাবিদাওয়া আছে কি?

সৈয়দ জয়নুল আবেদীন: সাইকেল শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে কিছু নীতি সহায়তা প্রয়োজন। উৎপাদনকারী কারখানার অনেক কাঁচামাল আমাদের আমদানি করতে হয়। এই কাঁচামালের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর দাবি জানাই। রপ্তানি পর্যায়ে ইনসেনটিভও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক সুবিধা এবং দ্রুততম সময়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সও নিশ্চিত করতে হবে।

 সাক্ষাৎকার গ্রহণ: হাসান জাকির

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র সমক ল আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও