প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনীতি গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি সহায়তা, আগামী ৫ বছরে কমপক্ষে ১ লাখ শ্রমিক নিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি এসেছে টোকিও থেকে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের বিষয়টিও দ্রুততম সময়ে সইয়ের অঙ্গীকার করেছে দু’দেশ। 

স্বাধীনতার পর থেকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার দিক থেকে জাপানের অবস্থান শীর্ষে বলে সফরের বিশ্লেষণে মত দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। তিনি সমকালকে বলেন, অর্থনৈতিকভাবে জাপান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। জাপানের সঙ্গে ইপিএ বাংলাদেশকে সামনের দিনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তির প্রয়োজন হবে। জাপানের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি এ বছরের মধ্যে সই হলে সেটি একটি মাইলফলক হবে। 

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরকে একাধিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, এই সফরের মাধ্যমে শুধু বিনিয়োগই নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানে পাঠানোর জন্যও একটি বড় পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে জাপান বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজারে পরিণত হবে।

প্রেস সচিব জানান, জাপান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ী নিয়ে। মাতারবাড়ী প্রকল্পে জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃহৎ অংশ জাপান দেবে। 

গত ৩০ মে টোকিওতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সাত সমঝোতা স্মারক সই করে দু’দেশ। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) ওয়ানস্টপ সার্ভিস (ওএসএস) সিস্টেম, প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন, ব্যাটারিচালিত সাইকেলের জন্য কারখানা স্থাপন, তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালু এবং বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিএসইজেড) সঙ্গে ভূমি চুক্তিসহ সমঝোতা স্মারক সই হয়।

অর্থনীতির পাশাপাশি সফরে গুরুত্ব পেয়েছে ভূরাজনীতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা। সফরে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর-সংক্রান্ত চুক্তিতে বাংলাদেশ ও জাপান নীতিগতভাবে একমত হয়েছে এবং চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে উভয় পক্ষ। এ ছাড়া জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্সের (ওএসএ) আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে পাঁচটি টহল জাহাজ দ্রুত সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য তাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিও পুনর্ব্যক্ত করেছে। 

রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি 

কূটনীতিকদের মতে, ড. ইউনূসের সফরটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব দিয়েছে টোকিও। প্রধান উপদেষ্টার সফরটি শুরুতে নিক্কেই ফোরামের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা ছিল। তবে এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে পিছপা হয়নি জাপান। আর গত ২৬ মে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিক্কেই ফোরামের বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার মধ্যে বৈঠকটি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সফরটি দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা করেছে টোকিও।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প সহয গ ত র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্যে ৪১ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রোববার লন্ডনের লুটন বিমানবন্দর থেকে গ্লাসগোগামী একটি ফ্লাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি লন্ডনের কাছে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরের বাসিন্দা।

অভয় নায়েক ইজিজেট ফ্লাইটে হামলা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার মতো আচরণ করেছেন। তিনি উড়োজাহাজে বোমা ফাটানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তিনি মাঝ আকাশে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্লোগান দিয়ে চিৎকার করেছিলেন, যা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

ওই ঘটনার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, অভয় নায়েক স্লোগান দিচ্ছেন, ‘আমেরিকার পতন হোক’, ‘ট্রাম্পের পতন হোক’। এরপরই তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ (যার অর্থ ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ’) বলে স্লোগান দেন। পরে দুজন ব্যক্তি তাঁকে কাবু করে উড়োজাহাজের মেঝেতে ফেলে দেন।

ওই ব্যক্তির নাম অভয় নায়েক। তিনি কোন ধর্মের অনুসারী, সে ব্যাপারে তাৎক্ষিণক কিছু জানা যায়নি।

ওই ব্যক্তির এমন আচরণের পর পাইলটরা বাধ্য হয়ে গ্লাসগোতে জরুরি অবতরণ করেন। সেখানেই স্কটিশ পুলিশ এসে অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করে।

স্কটল্যান্ডের পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘গত রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে গ্লাসগোতে পৌঁছানো ইজিজেটের একটি ফ্লাইটে এক ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, ঘটনাটি এককভাবে ওই ব্যক্তির, অন্য কেউ জড়িত নন। যেসব ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়েছে, সেগুলো সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন।’

উড়োজাহাজ অবতরণের পরই অভয় নায়েককে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ ও যাত্রীদের নিরাপত্তাঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

ইজিজেট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বেপরোয়া আচরণের কারণে একজন যাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে তদন্তে সহযোগিতা করছি।’

পাইসলি শেরিফ আদালতে হাজিরার সময় অভয় নায়েক কোনো বক্তব্য দেননি। তাঁকে বিচারিক হেফাজতে পাঠানো হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে তাঁকে আবার আদালতে হাজির করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ