রাশিয়া ও ইউক্রেন নতুন করে যুদ্ধবন্দী বিনিময় এবং প্রায় ১২ হাজার নিহত সেনার মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে রাজি হয়েছে। গতকাল সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ২০২২ সালের মার্চের পর মাত্র দ্বিতীয় দফায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বৈঠক এক ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের এ বৈঠকের প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এক মঞ্চে আনার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তবে সোমবারের এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব মেনে নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে মস্কো বলেছে, তারা যুদ্ধে স্বল্পমেয়াদি বিরতি নয়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায়। অন্যদিকে কিয়েভ অভিযোগ করছে, পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নন।

রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানিয়েছেন, বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর শর্তাবলি–সংবলিত একটি বিস্তারিত নোট ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রণক্ষেত্রে (ফ্রন্টে) নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য অস্ত্রবিরতির’ প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যাতে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সংগ্রহ করা যায়।

দুই পক্ষই ছয় হাজার করে সেনাদের মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে একমত হয়েছে। এর পাশাপাশি যুদ্ধের সময় গুরুতর আহত এবং তরুণ বন্দীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আরেক দফা বড় পরিসরে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ১৫ মে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে এক হাজার করে বন্দিবিনিময় হয়েছিল।

মস্কোর দেওয়া শান্তিচুক্তির খসড়া হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কিয়েভের প্রতিনিধিদলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ বলেন, তাঁরা রাশিয়ার এই খসড়া পর্যালোচনা করে দেখবেন। তিনি বলেন, জুনের শেষ নাগাদ আরও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। তবে তাঁরা মনে করেন, কেবল জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকেই অনেক বিষয়ের সমাধান হতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধান আন্দ্রেই ইয়ারমাক জানিয়েছেন, বৈঠকে কিয়েভের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে সে দেশে নিয়ে যাওয়া শিশুদের একটি তালিকা তুলে দিয়ে তাদের ফেরত চাওয়া হয়েছে।

মস্কো বলছে, যুদ্ধ থেকে সুরক্ষিত করার জন্য এসব শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ইউক্রেনের দেওয়া তালিকায় ৩৩৯ শিশুর নাম রয়েছে বলে জানান রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র প রস ত ব র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ