আরও বন্দিবিনিময় ও নিহত সেনাদের মরদেহ হস্তান্তরে রাজি রাশিয়া-ইউক্রেন
Published: 3rd, June 2025 GMT
রাশিয়া ও ইউক্রেন নতুন করে যুদ্ধবন্দী বিনিময় এবং প্রায় ১২ হাজার নিহত সেনার মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে রাজি হয়েছে। গতকাল সোমবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ২০২২ সালের মার্চের পর মাত্র দ্বিতীয় দফায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই বৈঠক এক ঘণ্টার মতো স্থায়ী হয়।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের এ বৈঠকের প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এক মঞ্চে আনার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তবে সোমবারের এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব মেনে নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে মস্কো বলেছে, তারা যুদ্ধে স্বল্পমেয়াদি বিরতি নয়, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায়। অন্যদিকে কিয়েভ অভিযোগ করছে, পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নন।
রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানিয়েছেন, বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোর শর্তাবলি–সংবলিত একটি বিস্তারিত নোট ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রণক্ষেত্রে (ফ্রন্টে) নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দুই থেকে তিন দিনের জন্য অস্ত্রবিরতির’ প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যাতে নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ সংগ্রহ করা যায়।
দুই পক্ষই ছয় হাজার করে সেনাদের মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে একমত হয়েছে। এর পাশাপাশি যুদ্ধের সময় গুরুতর আহত এবং তরুণ বন্দীদের অগ্রাধিকার দিয়ে আরেক দফা বড় পরিসরে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ১৫ মে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে এক হাজার করে বন্দিবিনিময় হয়েছিল।
মস্কোর দেওয়া শান্তিচুক্তির খসড়া হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কিয়েভের প্রতিনিধিদলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ বলেন, তাঁরা রাশিয়ার এই খসড়া পর্যালোচনা করে দেখবেন। তিনি বলেন, জুনের শেষ নাগাদ আরও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। তবে তাঁরা মনে করেন, কেবল জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠকেই অনেক বিষয়ের সমাধান হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের প্রধান আন্দ্রেই ইয়ারমাক জানিয়েছেন, বৈঠকে কিয়েভের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছে সে দেশে নিয়ে যাওয়া শিশুদের একটি তালিকা তুলে দিয়ে তাদের ফেরত চাওয়া হয়েছে।
মস্কো বলছে, যুদ্ধ থেকে সুরক্ষিত করার জন্য এসব শিশুকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ইউক্রেনের দেওয়া তালিকায় ৩৩৯ শিশুর নাম রয়েছে বলে জানান রুশ প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র প রস ত ব র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
‘এক বদলির জন্য এক কোটি টাকার অফার এসেছিল’
শিক্ষা ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে নিজের জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তাকে একটি বদলির জন্য এক কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
আজ বুধবার আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষার দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এ কথা জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একটি বড় পদের পদায়নের জন্য আমার কাছে তদবির এসেছিল। তার জন্য প্রথিতযশা একজন কম্পিটিড ইন্সটেকলেকচুয়াল (বুদ্ধিজীবী) তদবির করেছিলেন। পরে তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি তিনি ওই পদের জন্য যোগ্য নন। তখন আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করি। পরবর্তীতে তিনি অন্য মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন এবং আমাকে একটা অ্যামাউন্ট অফার করেন। টাকাও আমি বলে দেই, এক কোটি টাকা অফার করেছিলেন। তিনি যাকে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি আমার পরিচিত। যিনিও একটি প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন। আমি আর বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি আমার সহকর্মী যারা আছেন, তারা নৈতিক অবস্থানে স্থির থাকবেন। আমি পদে থাকা অবস্থায় কোন দুর্নীতি সহ্য করব না।’
ড. আবরার বলেন, ‘দুর্নীতির কথা আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শুনি। আমার কাছে যে পত্রিকাগুলো আসে, সেগুলোর বেশিরভাগ কাটিং-এ দুর্নীতির খবর থাকে। তবে কোনটা সত্য, কোনটা সত্য না তা যাচাই করার সবসময় সক্ষমতা আমাদের হাতে থাকে না। তবে যেখানে ঘটনা ঘটে, আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—জিরো টলারেন্স।’
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য যোগ্য উপাচার্যদের খুঁজে নেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি বলেন, উপাচার্য নিয়োগে নানা অসঙ্গতির কারণে আমরা উপাচার্য নিয়োগের জন্য একটি বোর্ড তৈরি করেছি। আমরা উপাচার্য নির্বাচনের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব। এতে আগ্রহীরা আবেদন করবেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যোগ্যদের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে।
আগামী জুলাই থেকে কলেজ পর্যায়ে অনলাইনে শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলেও জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সামান্য ভুল নিয়েও বই তুলে দিতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতটা সম্ভব নির্ভুল বই দেব। এজন্য আমরা কাজ করছি। সময়স্বল্পতার কারণে ২০২৬ সালের বই চলমান বছরের কারিকুলা অনুযায়ী ছাপানো হবে এবং এতে যেসব সাধারণ ভুলভ্রান্তিগুলো ছিল সেগুলো ঠিক করে আগামীবছরের শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পায় তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই যত কষ্টই হোক বইগুলো যত্ন এবং দায়িত্বের সঙ্গে নির্ভুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশাবাদী এনসিটিবি এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৫ সালে সম্পন্ন হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাসহ সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বড়ধরনের নকলের অভিযোগ শোনা যায়নি। ২০২৫ সালের এইচ এস সি পরীক্ষা একইভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি এবং এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমার পুরো জীবনটাই আমি ব্যয় করেছি নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে। এ লক্ষ্য থেকে শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব আমি গ্রহণ করেছি।’
মতবিনিময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দকার এহসানুল কবিরসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।