ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নাকোবাড়িয়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ঘটনায় আহত ইউনুছ আলী (৬০) মারা গেছেন।

বুধবার (৪ জুন) ভোরে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ নিয়ে ওই ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হলো।

আরো পড়ুন: ঝিনাইদহে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

আরো পড়ুন:

শরীয়তপুরে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৫

শ্রীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ২৩

ইউনুছ আলীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাইপো অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান। ইউনুছ আলী উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে।

এদিকে, সংঘর্ষের ওই ঘটনায় অপর নিহত মহব্বত আলীর ছেলে এনামুল হক মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। তিনি মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা আরো ৩০/৪০ জনকে আসামি করেছেন।  

স্থানীয়রা জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জামাল ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম মোল্লার সঙ্গে অপর পক্ষ আরিফ হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই জেরে গত রবিবার সকালে ইউনিয়নের নাকোবাড়িয়া গ্রামে নজরুল ইসলাম ও আরিফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মহব্বত হোসেনকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়। রবিবার দুপুরে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

ছোট তালিয়ান গ্রামের তরিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরের দিকে নজরুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক মহব্বত আলীর নিহতের খবর এলাকায় পৌঁছালে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩৫/৪০টি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এ সময় গরু, ধান ও ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছে। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। পানি খাওয়ার একটি গ্লাসও বাড়িতে অবশিষ্ট নেই।

কালীগঞ্জ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‍“দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ইউনুছ আলী মারা গেছে। এ নিয়ে দুইজন মারা গেছেন।”

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ ন হত আহত ইউন ছ আল ল ইসল ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, একজন যোদ্ধাও

নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো নাচতে ভালোবাসতেন। সবকিছুর চেয়ে, এমনকি লেখালেখির চেয়ে তিনি নাচ বেশি পছন্দ করতেন।

আশির কোঠায় তাঁর বয়স পৌঁছালে কিডনিজনিত অসুখে তাঁর শরীর যখন শ্লথ হয়ে যায়, তখনো তিনি নিছক গান শুনলেই উঠে দাঁলেড়িয়ে নাচতে শুরু করতেন। ছন্দ তাঁর পায়ে যেভাবে খেলত, শব্দও তেমনি হাতে খেলত, আর তা কাগজে লিখে চলত। নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গোকে আমি মনে রাখব একজন নাচের মানুষ হিসেবে। গত ২৮ মে ৮৭ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন অনন্তলোকে।

নগুগি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর মহান সাহিত্য–ঐতিহ্য দিয়ে। তাঁর সাহিত্য ছিল উদ্ভাবনী শৈলীতে অভিনব আর মৌলিক সমালোচনায় ঋদ্ধ। তাঁর এই সাহিত্য–ঐতিহ্য আমাদের আনন্দের সঙ্গে উৎসাহিত করে আরও ভালো কিছু করার জন্য, আরও সাহস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমাদের সমাজগুলোর ভিত গড়ে দেওয়া ঔপনিবেশিক কাঠামোর বিরুদ্ধে আমরা যাঁরা লেখক, কর্মী, শিক্ষক ও মানুষেরা লড়ছি, তাদের জন্য নগুগি অফুরান অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।

২০০৫ সালে নগুগির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। এর বহু আগে থেকেই আফ্রিকান সাহিত্যধারার একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও নোবেল পুরস্কারের দীর্ঘদিনের দাবিদার ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের পর দ্রুতই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, তাঁর লেখালেখির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে রয়েছে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি। এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে ছিল তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার।

নগুগি প্রাঞ্জল হাসিমুখ, ক্লান্তিহীন হাসি আর উচ্ছ্বাসের আড়ালে ছিল এক গভীর ক্ষোভ, যা তাঁর শরীর ও মনের ক্ষতচিহ্নগুলোরই প্রতিচ্ছবি। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনে চরম অপরাধমূলক শাসনব্যবস্থার নির্মমতা ও সহিংসতার চিহ্ন তিনি বয়ে চলেছিলেন।

নগুগির বধির ভাইকে ব্রিটিশরা গুলি করে হত্যা করেছিল। তার কারণ হলো চেক পয়েন্টে তিনি ব্রিটিশ সেনার থামার নির্দেশনা শুনতে পাননি। ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে মাউ মাউ বিদ্রোহ (কেনিয়ার সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রশাসনের লড়াই) তাঁর অন্য ভাইদের বিপরীত দুই পক্ষে ভাগ করে দিয়েছিল।

এ দুটি ঘটনা তাঁর মধ্যে গভীরভাবে এই বোধকে প্রোথিত করে দিয়েছিল যে সহিংসতা ও বিভাজন হলো ঔপনিবেশিকতাকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার দুটি প্রধান চালিকা শক্তি। এমনকি স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোপোলের (ঔপনিবেশিক কেন্দ্রের) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও সেটা সত্য।

অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও একটি বিষয়ে আলোচনা উঠলে নগুগি সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠতেন। সেটি হলো ব্রিটিশ শাসন থেকে কেনিয়ান শাসনে রূপান্তরকাল। বাস্তবতা হচ্ছে, কেনিয়া থেকে ব্রিটিশদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক শাসন বিদায় নেয়নি; বরং নতুন কেনিয়ান শাসকদের হাত ধরে সেটি আরও গভীরভাবে গেড়ে বসেছিল। আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।

একজন লেখক ও নাট্যকার হিসেবে নগুগি একজন যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি তাঁর ভাষাকে জটিল হয়ে ওঠা আফ্রিকান পরিচয়গুলোর (স্থানীয়, গোষ্ঠীগত, জাতীয় ও বিশ্বজনীন) সঙ্গে পুনরায় সংযোগ তৈরির কাজে নিবেদিত করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনের এই ‘সাংস্কৃতিক বোমা’ সাত দশক ধরে ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গিয়েছিল।

১৯৬২ সালে কাসপালায় তাঁর প্রথম নাটক দ্য ব্ল্যাক হারমিট প্রকাশিত হয়। খুব দ্রুতই তাঁকে ‘মহাদেশের কণ্ঠস্বর’ বলে ডাকা শুরু হয়। এর দুই বছর পর তাঁর প্রথম উপন্যাস উইপ নট চাইল্ড প্রকাশিত হয়। পূর্ব আফ্রিকান লেখকের লেখা ইংরেজি ভাষার প্রথম উপন্যাস।

নগুগি যখন খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছালেন, তখন সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি ইংরেজি ভাষায় লেখা বন্ধ করবেন। তাঁর মাতৃভাষা গিকুয়ুতে লেখালেখি শুরু করলেন।

নিজের মাতৃভাষায় তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু নিজের ক্যারিয়ার নয়, জীবনের গতিপথকেই মৌলিকভাবে বদলে দিল। উপনিবেশ–উত্তর কেনিয়ান শাসনব্যবস্থার প্রতি নগুগির স্বচ্ছদৃষ্টির সমালোচনা ইংরেজি বা জাতীয় ভাষা সোয়ালির পরিবর্তে তাঁর মাতৃভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছাতে লাগল। কেনিয়ার নতুন শাসকদের জন্য সেটা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। ফলে তাঁকে ১৯৭৭ সালে কোনো বিচার ছাড়াই এক বছরের জন্য কারাবন্দী করা হলো।

নগুগি যখন গিকুয়ু ভাষায় লেখা শুরু করেন এবং যখন তিনি কারাগারে ছিলেন, তখন তাঁর মধ্যে এই উপলব্ধি এল যে উপনিবেশ-পরবর্তী শাসনের মূলমন্ত্রটা হলো ‘নয়া ঔপনিবেশিকতা’। এটি সেই প্রচলিত ‘নয়া ঔপনিবেশিকতা’ নয়, যেটি উপনিবেশবিরোধী ও উপনিবেশ-পরবর্তীকালের আন্দোলনকারীরা আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার পরও সাবেক উপনিবেশের ওপর ঔপনিবেশিক শাসকদের নিয়ন্ত্রণ বোঝাতে ব্যবহার করতেন।

বরং এটি হলো নতুন স্বাধীন হওয়া নেতাদের নিজ ইচ্ছায় ঔপনিবেশিক শাসনের কলাকৌশল ও ভাষা আত্মস্থ করে নেওয়ার বিষয়টি। তাঁদের অনেকেই (যেমন জোমো কেনিয়াত্তা, যাঁর উদাহরণ নগুগি প্রায়ই দিতেন) ব্রিটিশ শাসনের সময় কারাবরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।

সুতরাং প্রকৃতভাবে উপনিবেশ থেকে মুক্তি তখনই সম্ভব, যখন মানুষের মন বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হবে। আর এর জন্য প্রথম, সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের মাতৃভাষায় লেখার স্বাধীনতা।

মার্ক লেভাইন ইউসি আরভাইনের গ্লোবাল মিডল ইস্ট স্টাডিজ প্রোগ্রামের পরিচালক

আল-জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর গ্রামগঞ্জের কর্মী-সমর্থকেরা কী ভাবছেন
  • পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেল অটোরিকশা-মোটরসাইকেল, নিহত ১
  • করোনায় ঢাকায় একজনের মৃত্যু
  • সর্বনাশ! এ তো শয়তানের নিশ্বাস!
  • দেশে আবারো করোনায় ১ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩
  • ঈদযাত্রায় সায়েদাবাদে যাত্রীর চাপ, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ
  • এই রাতে আলো ছিল, জয় ছিল, আর ছিল একজন হামজা চৌধুরী
  • শেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত, আহত ২
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ‘সহজ তরিকা’
  • নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো শুধু লেখকই নন, একজন যোদ্ধাও