নাহ, গোল করে এদিন আর সিউউ... উদযাপন করেননি। ছেলে বসে আছে গ্যালারিতে, তার বন্ধুদের বয়সীদের সঙ্গে খেলতে নেমে এই ভঙ্গিমায় তাকে হয়তো মানায় না! বরং ঠোটে আঙুল ঠেকিয়ে গ্যালারিকে নিশ্চুপ থাকতে বলেছিলেন। বুকের কাছে একটি আঙুল উঁচিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যপাট বদলালেও রাজা কিন্তু বদলায়নি, তিনিই ‘নাম্বার ওয়ান’। তিনিই অদ্বিতীয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তা বয়স তার যতই চল্লিশ হোক না কেন, সবার সঙ্গে মিশে আনন্দ করার শক্তি ও অভ্যাসই তাকে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছে। 

ফিটনেস ধরে রাখার একাগ্রতায় তাকে সমালোচনার ঝড় থেকে বাঁচিয়ে নিতে শিখেছে। তাই ফাইনালে স্পেনকে টাইব্রেকে ৫–৩ গোলে  হারিয়ে পর্তুগাল নেশন্স লিগ জেতার পর চোখ ভেজা রোনালদো আবেগ লুকাতে পারেননি। 

‘কী যে আনন্দ, প্রথমত এটা পর্তুগালের নতুন প্রজন্মের প্রাপ্য ছিল। আমার ছেলে, স্ত্রী, মা, বন্ধুরা সবাই মাঠে এসেছে এই জয়টি দেখার জন্য। ক্লাবের হয়ে আমি অনেক শিরোপা জিতেছি, কিন্তু দেশের হয়ে শিরোপা জেতাটা সব সময়ই বিশেষ কিছু। পর্তুগালের হয়ে ট্রফি জেতার চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। এই যে চোখে জল আসা, কর্তব্য পালন করা.

..এসবই অনেক আনন্দ।’ দ্বিতীয়বারের মতো নেশন্স লিগ জয়ের পর ছয় বছর আগে প্রথমবারের মতোই ট্রফিটা কাঁধে নিতে দেখা যায় রোনালদোকে।

তেইশ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের ৩২টি ট্রফি জিতেছেন। পর্তুগালের হয়ে ২০১৬ ইউরো এবং ২০১৯ ও ২০২৫ নেশন্স লিগও জিতলেন। কিন্তু একটি ট্রফি যে এখনও অধরা তার। মেসি যা স্পর্শ করে কিংবদন্তী, রোনালদো কি পারবেন সেই বিশ্বকাপ নিয়ে এভাবে কাঁধে তুলতে? 

আগামী বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর মেক্সিকোতে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। এক চল্লিশের রোনালদোর কি জায়গা হবে এই নুনো মেন্ডিসদের দলে? কাতার বিশ্বকাপে কোচ সান্তোসের অনাস্থা ধরা পরেছিল ডাগ আউটে বসে থাকা রোনালদোর মুখে। মাঠে নামলেও সতীর্থদের পাস না বাড়ানোর অসযোগিতাও ধরা পরেছিল বিশ্রীভাবে। সেই রোনালদোকেই দেখা যাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে? এসব প্রশ্নের উত্তর বোধহয় নেশন্স কাপেই দিয়ে দিলেন রোনালদো। 

সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে গোল, ফাইনালে স্পেনর বিপক্ষে সমতাসূচক গোল। এই আসরে ৮ গোল করে তালিকার দ্বিতীয়তে তিনি, বর্তমান প্রজন্মের আর্লিং হাল্যান্ডকেও পিছিয়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৩৮ গোল করা রোনালদোর ধারে কাছে কেউ নেই। রোববার মিউনিখের ফাইনালে যে ৮৮ মিনিট দৌড়ালেন তাতে এতটুকুও জন্যও বয়সের ছাপ ছিল না। বরং গোলের জন্য তার ক্ষুধা যেন আগের চেয়েও তীব্র। এদিন হাফ ভলিতে যে গোলটি করলেন তা তিনি কিশোর বয়সে ম্যানচেস্টারে থাকতেও অনেকবার দেখিয়েছেন। পর্তুগালের বর্তমান কোচ রাবার্তো মার্টিনেজেরও আস্থার বড় জায়গায় রয়েছেন রোনালদো। 

বিশ্বকাপ শুরুর এক বছর বাকি থাকতে নেশন্স লিগে নিজের ফিটনেস আর গোল স্কোরিংয়ের যে স্বাক্ষর দেখালেন রোনালদো, তাতে তাকে নিয়েই হয়তো বিশ্বকাপের ছক করবেন মার্টিনেজ। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। তবু কোথাও গিয়ে যেন সেই বয়সটাই ভয়ের কারণ। ‘

‘আমার চোট ছিল, কিন্তু নিজেকে তৈরি করেছিলাম এই টুর্নামেন্টের জন্য। যদি খেলতে গিয়ে পা ভেঙে যেত আমি সেই ভাঙা পায়েই খেলতাম। আমাদের দেশের জনসংখ্যা কম, কিন্তু আমরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী।’ রোনালদোর কথাতেই স্পষ্ট বিশ্বকাপে চোখ রেখেই এগোচ্ছে তার দেশ এবং তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল পর ত গ ল র ব শ বক প ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ বছর চামড়া শিল্পে ব্যাপক নৈরাজ্য হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘‘গত ১৫ বছরে দেশের চামড়া শিল্পে ব্যাপক নৈরাজ্য চলেছে এবং এর ফলে শিল্পটির চরম অধঃপতন হয়েছে। এ খাতে যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তা এত দ্রুত ভাঙা সহজ নয়।’’

সোমবার (৯ জুন) দুপুরে যশোরের রাজারহাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘‘আমরা চামড়া শিল্পে সবার আগে এতিমখানা ও মাদ্রাসার স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছি। পাশাপাশি চামড়া শিল্পের সার্বিক স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’’

তিনি বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে চামড়া শিল্পের যে অধঃপতন ঘটেছে, তা পুনরুদ্ধার এবং অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আমরা সারাদেশে কাজ করছি। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কন্ট্রোল টিমও সক্রিয় রয়েছে।’’

চামড়ার সঠিক দাম ও মূল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে লবণ বিতরণ করেছে উল্লেখ করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘‘চামড়ার দাম বাড়াতে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপ চামড়ার মূল্য নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘অনেক মাদ্রাসা লবণ ছাড়াই চামড়া সংগ্রহ করেছে। অথচ সরকার লবণ ছাড়া চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে না। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকায় তা নষ্ট করেছেন।  ফলে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাননি।’’

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ট্যানারি মালিকদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার ঈদের আগেই ২২০ কোটি টাকার প্রণোদনা ছাড় করেছে। বাজার ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের চাহিদা তৈরি হবে।’’

শেখ বশিরউদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য নিয়ে এখনো সরকারের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। অথচ সরকার চামড়া শিল্প রক্ষায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারব।’’

ঢাকা/রিটন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ