ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। 

ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।

গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। 

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। 

ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়। 

সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের  মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার চিন্তা এখনই করা বোকামি: শান্ত

অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল যখন ঐতিহাসিক লর্ডসে ‘টেস্ট বিশ্বকাপ’ বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা সফরের। গলে ও কলম্বোতে দুই টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ২০২৫-২৭ চক্রে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রা শুরু করবে।

বাংলাদেশ কি কখনো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলতে পারবে? এরকম বড় মঞ্চে নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস কিংবা মুমিনুলররা কি যেতে পারবেন? টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে পা দেওয়ার আগে সেই প্রশ্নটাই গেল বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কোর্টে।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই-বাংলায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক এখনই অত বড় স্বপ্ন দেখছেন না বলেই জানালেন। নিজেদের সামর্থ্য এবং পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনায় এনে অধিনায়ক মনে করছেন, ধীরে ধীরে এগোনোই ভালো।

আরো পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে একদিনেই ১৪ উইকেটের পতন

টিভিতে আজকের খেলা 

তার ভাষ্য, ‘‘এটা (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল) তো অনেক বড় স্বপ্ন। এত দূরে যদি আমি এখনই চিন্তা করি তাহলে আসলে বোকামি হবে আমার কাছে মনে হয়।’’

শেষ চক্রে বাংলাদেশ ১২ ম্যাচে মাত্র ৪টিতে জিতেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতেছিল। এছাড়া নিউ জিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল। এর আগের চক্রে সমান ম্যাচে মাত্র এক জয় এবং তারও আগের চক্রে সাত ম্যাচে কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের।

অধিনায়ক এই বাস্তবতাকেই সামনে এনে ছোট ছোট কদমে এগিয়ে যেতে চান, ‘‘ছোট ছোটভাবে যদি আমরা এগোতে পারি তাহলে খুব ভালো। কারণ, আপনি যদি দেখেন আমরা যখন শুরু করেছিলাম, এর আগের সার্কেলে মাত্র একটা ম্যাচ জিতেছিলাম। গত সার্কেলে আমরা চারটি ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। টার্গেট থাকবে যে, এবার আরও দুইটা তিনটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি। আমরা যদি এভাবে ছোট ছোট চিন্তা করে এগোতে পারি তাহলে কেন না? বাংলাদেশ দলও একদিন ফাইনাল খেলবে। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সামনের দুই বছরের মধ্যে গত বছরের থেকে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করছি আমরা।’’

উন্নতির জন্য ঘরের মাঠে জেতার বিকল্প নেই। শেষ চক্রে যে চারটি জয় ছিল, বাংলাদেশের তিনটিই দেশের বাইরে। নিউ জিল্যান্ডকে দেশের মাটিতে হারিয়ে শুরু। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট জয় এবং সবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে জয়। অথচ ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ভারতের মাটিতে গিয়ে হয়েছে নাস্তানাবুদ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও দেশের মাটিতে হেরেছে।

ঘরের মাঠে জয়ের বিকল্প নেই জানিয়ে শান্ত বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় আমাদেরকে ঘরের মাঠে জিততে হবে। আমরা শেষ সার্কেলের ঘরের মাঠে খুবই বাজে ক্রিকেট খেলেছি। যদি ঘরের মাঠে জিততে পারতাম, তাহলে আমরা হয়তো আরও দুই-তিনটি ম্যাচ বেশি জিততে পারতাম। চিন্তা তো ওখানেই যে ঘরের মাঠে আমরা কিভাবে টেস্ট জিততে পারি। যখন ম্যাচ হবে তখন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। বাইরে ভালো হয়েছে—এই আত্মবিশ্বাসটা আমাদের কাজে দেবে। আমরা যদি এই বছর বাইরের মাটিতে রেজাল্ট করতে পারি তাহলে দেখা যাবে আমাদের এই বছরের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সার্কেলে আরও ভালো রেজাল্ট হবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাইনাল খেলার স্বপ্নকে ‘বোকামি’ মনে হয় নাজমুলের
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার চিন্তা এখনই করা বোকামি: শান্ত