টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন আর মাত্র ৬৯ রান। লর্ডসে কাল তৃতীয় দিনে তৃতীয় উইকেটে ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন এইডেন মার্করাম ও টেম্বা বাভুমা। চতুর্থ দিনে আজ দুজনের মাঠে নামার কথা। তবে বাভুমার শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল কাল দিনের খেলা শেষে।

আরও পড়ুনবাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি১ ঘণ্টা আগে

চতুর্থ দিনে বাভুমা ব্যাটিংয়ে নামতে পারবেন কি না, তাঁর শারীরিক ফিটনেসের কী অবস্থা—এ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কোচ অ্যাশওয়েল প্রিন্স কথা বলেছেন সংবাদমাধ্যমে। প্রিন্সের ভাষায়, ‘ক্যারিয়ারজুড়েই তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে এবং এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও হতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার মতে এটা সবচেয়ে বড় মঞ্চ। আমার মনে হয়, ম্যাচের শেষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া উচিত।’

লর্ডসে কাল তৃতীয় দিনের খেলা দেখে থাকলে বাভুমার চোটের বিষয়টি নিশ্চয়ই জানা আছে। চা–বিরতির দুই ওভার আগে বাভুমা ৬ রানে ব্যাট করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। মাঠেই বেশ সময় নিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরও দৌড়ে রান নিতে তাঁর অসুবিধায় ভোগার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু ১২১ বলে ৬৫ রানে অপরাজিত থেকে ঠিকই তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেন বাভুমা। অন্য প্রান্তে সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্করাম।

দুজনের ব্যাটিংয়েরই প্রশংসা চলছে ক্রিকেট মহলে। তবে বাভুমার দৃঢ়তা সবার চোখে পড়েছে আলাদা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি হ্যান্ডল থেকে কাল যেমন লেখা হয়, ‘অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগছেন। কিন্তু তিনি সিংহের মতো বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।’

আরও পড়ুনস্বপ্ন পূরণ হতে ৬৯ রান দরকার, এবার কি পারবে ‘চিরকালের চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা১২ ঘণ্টা আগে

প্রশ্ন হচ্ছে, কাল বাভুমাকে তো রিটায়ার্ড হার্ট দেখিয়েও ড্রেসিংরুমে ফিরিয়ে আনতে পারত প্রোটিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট। কেন তা করা হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন প্রিন্স, ‘সে ব্যাটিং চালিয়ে যাবে কি না, (চালিয়ে গেলে) তার স্ট্রোক প্লেতে কেমন প্রভাব ফেলবে এবং এইডেনের ওপরও তা কেমন প্রভাব ফেলবে—এসব বিষয়ে আমাদের বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’ প্রিন্স এরপর বলেছেন, ‘এই জুটিটাই যে চাবিকাঠি, এইডেন সে বিষয়ে অবিচল ছিল। হ্যাঁ, ত্রিস্তান (ক্রিজে) গেলে বাভুমার উইকেট তো আমাদের হাতে থাকতই, কিন্তু সেটা হতো নতুন এক জুটি। তারা ভালো বোধ করছিল এবং চালিয়ে যেতে চাইছিল।’

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে রাতে বাভুমা কতটা ঘুমাতে পারছেন এবং তখন তাঁর শরীর কতটা পুষিয়ে নিতে পারছে, এর ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। প্রিন্স অবশ্য বলেছেন, ‘টেম্বা শক্ত চরিত্রের। তার প্রতি দারুণ সম্মানবোধ রয়েছে এইডেনের (মার্করাম)।’

তবে বাভুমার রাতের ঘুমে যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, সেই ইঙ্গিত কিন্তু দিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান কেভিন পিটারসেন। একে তো ফাইনাল ম্যাচ এবং ২৭ বছর পর প্রথম আইসিসি ট্রফি জিততে খুব অল্প রানই প্রয়োজন প্রোটিয়াদের। হাতেও আছে ৮টি উইকেট। এ অবস্থায় শরীর ও মনে উত্তেজনা ভর করাই স্বাভাবিক। এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে পিটারসেন তাই লিখেছেন, ‘জয়টা খুব কাছে, তবু ঘুমটা হবে স্নায়ুর চাপ নিয়ে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এইড ন

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ