জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে আফগানিস্তানের কাবুল ছেড়ে কেনিয়ার মোম্বাসা শহরে পাড়ি জমাব। বহুদিন বাবার সঙ্গে দেখা নেই, মনে হলো মাঝে বাবার সঙ্গে একবার দেখা হওয়া দরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সেই সময় সুযোগ হলো। আমি কাবুল থেকে আর আব্বু ঢাকা থেকে দুবাইয়ে এলেন। কয়েকটা দিন দারুণ কাটল। এই কয়েক দিনের ভ্রমণ বাবা-মেয়ের পুরোনো স্মৃতিগুলোকে যেন আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলল। আমার ভ্রমণপ্রীতির বীজটা বাবার হাতেই বোনা। তাঁর হাত ধরেই এই বিশাল জগৎকে প্রথমবার চিনেছি, নতুন কিছু জানার কৌতূহল জেগেছে।

আমার শৈশবের ধূসর ক্যানভাসে বাবা ছিলেন এক রহস্যময় জাদুকর। শাসনের কঠোরতা নয়, তাঁর স্পর্শে মিশে থাকত অপার স্নেহ আর অফুরন্ত আবদার পূরণের অদ্ভুত ক্ষমতা। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে, তাঁর ব্যবসার গণ্ডি পেরিয়ে আব্বু খুঁজে ফিরতেন মুক্তির স্বাদ। পথই ছিল তাঁর আসল সঙ্গী। আমাদের কাছে ডিসেম্বর মাসটা শুধু স্কুলের ছুটি ছিল না, ছিল যেন ঈদের আনন্দ। ছুটির ঘণ্টা বাজলেই শুরু হতো আমাদের মহাযাত্রা। লম্বা গাড়ির বহর নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়তাম; আব্বুর সঙ্গে যুক্ত হতেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তাঁদের পরিবার-পরিজন। গাড়িগুলো যেন এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা, ছুটে চলত দেশের কোনো এক প্রান্তে। এভাবে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছি। সাগরের বিশালতা, চা-বাগানের সবুজ রহস্য, জাফলং-তামাবিলের পাথুরে সৌন্দর্য, সুন্দরবনের কুমিরের আদিম চাহনি বা রানি ভবানীর পুরোনো প্রাসাদ—সবকিছুই আমার ছোট্ট মনে গভীরভাবে দাগ কাটত। মনে হতো, পৃথিবীটা এক স্বপ্নপুরী, যেখানে প্রতিটি মোড়েই লুকিয়ে আছে নতুন নতুন বিস্ময়।

শৈশবে মা–বাবার সঙ্গে লেখক.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ

ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।

রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।

অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা। 

বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো। 

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া। 

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। 

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। 

উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ