ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঠেকাতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কঠোর হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে এক অশান্ত এবং উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একজন বিশ্লেষক বা কৌশলবিদ বলা যায় না। তিনি সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত, অনেক সময় নিজেরই নেওয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও করেন। তিনি সোজা পথে হাঁটেন না। তবু তাঁর ২০২৫ সালের ১৪ মে রিয়াদ ভাষণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, তিনি মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কী লক্ষ্য স্থির করছেন এবং কী ধরনের কৌশলকে তিনি সমর্থন করেন বা বর্জন করেন।

এই ভাষণটি ২০১৭ সালের একই স্থানে দেওয়া তাঁর আগের ভাষণের ধারাবাহিকতা। সেই ভাষণে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি হবে ‘নৈতিক বাস্তববাদ’।

ওবামা, বাইডেন ও ট্রাম্প—তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অসন্তোষের কথা ভেবে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ কম করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বুশ প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য যুদ্ধ, বিশেষ করে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের প্রতি মার্কিন জনগণের বিরক্তি এই নীতিকে উৎসাহিত করেছে। ওবামা ও বাইডেন মানবাধিকারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের প্রচেষ্টা বিশেষ সফল হয়নি।

ট্রাম্প শুরু থেকেই সরাসরি বলেছেন যে উদারনৈতিক বা লিবারেল আদর্শ দিয়ে কাজ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ঠিক করতে হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে। আমরা ট্রাম্পের সেই কথারই স্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি তাঁর ইরান ও সিরিয়া নীতিতে।

২০১৭ সালের রিয়াদ ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, হঠাৎ করে সামরিক হস্তক্ষেপ বা শাসন পরিবর্তনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হবে না। তিনি সাবধান করেছিলেন যে এ রকম পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে বিপর্যয় এবং চরমপন্থার উত্থান ডেকে আনতে পারে। ২০২৫ সালে একই বক্তব্যকে আরও জোর দিয়েছেন। বলেছেন যে শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকেও যুক্তরাষ্ট্র দূরে থাকবে। তিনি বলেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলানো বা কাকে নেতৃত্বে রাখা উচিত, তা নির্ধারণ করার দিন শেষ।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ভিত্তি মূলত ব্যবসা, বাণিজ্য এবং চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। তিনি চাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় নেতৃত্ব নিক। আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে, অর্থনৈতিক চুক্তি করবে। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে খরচ করতে যুক্তরাষ্ট্র আর রাজি নয়। তিনি চান ইসরায়েলকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় নিয়ে আসা হোক। আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ তাঁর এই কৌশলের অংশ।

এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল ওবামা প্রশাসনে। ২০০৯ সালে কায়রোতে ওবামা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের সরকার কেমন হওয়া উচিত, তা সেই দেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেবে না। কিন্তু পরে তিনি মোবারক, গাদ্দাফি ও আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প এ ধরনের নীতির দ্বিচারিতা পরিহার করতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি বা গণতন্ত্র রপ্তানি করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের সময় ও সম্পদ নষ্ট হয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাক তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিণতি কী১৩ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্পের ভাষণে বারবার এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হবে বাস্তবতার ভিত্তিতে। ২০২৫ সালে তিনি সরাসরি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বড় বড় প্রকল্পের পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে কোনো লাভ হয়নি। তাই তিনি এই প্রকল্পগুলো বন্ধ করেছেন বা কাটছাঁট করেছেন। বহু এনজিও এবং সরকারি দপ্তরের কর্মী তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন।

তাঁর মতে, সংস্কার হবে ধীরে ধীরে। বিপ্লবের মতো আকস্মিকভাবে নয়। এ কারণেই তিনি ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাদের ধাপে ধাপে সংস্কার, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার পথে এগোনোকে তিনি প্রশংসা করেছেন।

সিরিয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতিও একই ধরনের। তিনি ২০১৭ সালে সিআইএর ব্যর্থ অস্ত্র প্রকল্প বন্ধ করেন। তিনি স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিদ্রোহীরা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। নিজেদের স্বার্থের চেয়ে অর্থ উপার্জনে বেশি মনোযোগী ছিল তারা। অন্যদিকে আল-নুসরা ফ্রন্ট ছিল বেশি একনিষ্ঠ।

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার আসল যে কারণ১৬ জুন ২০২৫

২০২৫ সালে ট্রাম্প সেই আল-নুসরা প্রধানের সঙ্গে হাত মেলান, যাকে একসময় সন্ত্রাসী বলা হতো। তিনি বলেন যে সিরিয়ার মতো দেশের জটিলতা সেই দেশের মানুষই ভালো বুঝবে। তাই সিরিয়ার রাজনৈতিক রূপান্তরের সিদ্ধান্তটি তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া ভালো। আর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দূর থেকে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। সিরিয়ায় এখন মার্কিন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য নিরাপত্তা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিদেশি যোদ্ধাদের বিতাড়ন এবং ইসলামিক স্টেট বন্দীদের বন্দিশিবিরের ভবিষ্যৎ ঠিক করা।

ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। এর পেছনে যুক্তি হলো নতুন গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তুরস্কের সঙ্গে কাজ করে সিরিয়ার নতুন সেনাবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তুরস্কে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্যবসায়ী টমাস বারাককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ থেকে বোঝা যায় যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ব্যবসার প্রসারই ট্রাম্পের লক্ষ্য।

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলা: ট্রাম্প কি পাগল হয়ে গেছেন১৩ জুন ২০২৫

ইরানের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প একই বাস্তববাদী নীতি অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর কোনো স্থায়ী শত্রু নেই। ইরানে শাসন পরিবর্তন চান না তিনি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানই তাঁর পছন্দ। তবে তিনি কঠোরভাবে এ–ও বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত হতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র শক্তি প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না। তবে তাঁর পছন্দ সামরিক নয়, কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাপ। তিনি ইরানের তেলের রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে কথা বলেছেন।

গত মে মাসে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন, আলোচনার সময় ইরানে হামলা করা ঠিক হবে না। কিন্তু নেতানিয়াহু সেই কথা শোনেননি। ১২ জুন ইসরায়েল হামলা চালালে ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন স্পষ্ট করে বলেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। ট্রাম্পের যুক্তি হলো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরা নেবে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলবে।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ভিত্তি মূলত ব্যবসা, বাণিজ্য এবং চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা। তিনি চাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় নেতৃত্ব নিক। আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করবে, অর্থনৈতিক চুক্তি করবে। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে খরচ করতে যুক্তরাষ্ট্র আর রাজি নয়। তিনি চান ইসরায়েলকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় নিয়ে আসা হোক। আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ তাঁর এই কৌশলের অংশ।

তবে ফিলিস্তিনি জনগণের স্থান এই পরিকল্পনায় কোথায়, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ও তুরস্কের নেতাদের কথা শুনবেন। তবে নিজের সরকারি বিশ্লেষকদের মতামত নিতেও খুব একটা আগ্রহী নন তিনি।

রবার্ট ফোর্ড সিরিয়া ও আলজেরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন আল মাজাল্লা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ব যবস থ জনগণ র র জন য র জন ত বল ছ ন কর ছ ন ন ইসর ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

মহাসমাবেশে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়ে উপস্থিত হব ইনশাআল্লাহ :  মুফতি মাসুম বিল্লাহ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেছেন, আগামী ২৮ তারিখে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়ে উপস্থিত হব ইনশাআল্লাহ। 

প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিতব্য মহাসমাবেশে জাতির উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রাখবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলাম, দেশ ও জনগণের পক্ষে একটি ভোট বাক্স দেয়ার ব্যাপারে সকল কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচেষ্টা চলছে। দেশের মানুষের সেন্টিমেন্ট-এর প্রতি সম্মান করেই নির্বাচনে মাঠে থাকবে ইসলামী দলগুলো। সর্বমহলে কথা উঠেছে যে, এবার আমরা নতুন কাউকে চাই। বিগত দিনের মত  আর ধোঁকাবাজদের চায় না এদেশের জনগণ।

আজ ১৬ জুন সোমবার বিকাল ৫টায় নগর কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর-এর উদ্যোগে মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ঈদু পুনর্মিলনী ও যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি সুলতান মাহমুদের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, নগর সহ-সভাপতি মুহা. নুর হোসেন, হাসান ইমাম মুন্সি, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আলহাজ্ব শেখ হাসান আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাও. শামসুল আলম, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক বিলাল খান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সহ সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ।

মুফতি মাসুম বিল্লাহ আগামী ২৮ জুনের মহাসমাবেশে সকল নেতাকর্মী ও তৌহিদী জনতাদেরকে নিয়ে অংশগ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহবান জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরাজ নেই, টস জিতে ব‌্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
  • নাগরিকেরা কেন সেবাবঞ্চিত থাকবেন
  • মহাসমাবেশে পঞ্চাশ হাজার লোক নিয়ে উপস্থিত হব ইনশাআল্লাহ :  মুফতি মাসুম বিল্লাহ
  • নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলেন মুফতি আমির হামজা
  • বিসিএস ক্যাডার এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে তুলনা কেন?
  • লন্ডন বৈঠকে কারও দায়মুক্তির প্রসঙ্গ ছিল না: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • ইরানের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করার আহ্বান সাবেক শাহের পুত্রের
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান