অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াস) খাতে বাজেটে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি নাগরিকদের নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন পাওয়ার অধিকারও ব্যাহত হতে পারে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হোসেন জিল্লুর।

পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ফানসা, বাউইন, এফএসএম নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্ক অব ওয়াস নেটওয়ার্কস যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিপিআরসির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ওয়াশ খাতে ১০ হাজার ৯০১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থ বছর থেকে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ  কমেছে।  ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত এ খাতে বরাদ্দ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এরপর থেকেই উল্টোটা হচ্ছে।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাজেট বরাদ্দের এই নিম্নমুখী প্রবণতা এসডিজি ৬ এবং সরকারের জাতীয় অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটি) ১৭-১৮ অর্জনে বড় বাধা সৃষ্টি করবে। যার ফলে দেশের সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের সুযোগ নিশ্চিত করা কঠিন হবে।

ওয়াস বাজেট বরাদ্দে অসমতা ও বৈষম্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, শহরে ও গ্রামীণ পর্যায়ে বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান কিছুটা কমলেও, এটি এখনো বেশ বড়, যা সম্পদের সুষম বণ্টন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিছু দুর্গম এলাকা যেমন হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু চরের মতো অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকাগুলো নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি, যা দুঃখজনক।

ওয়াটারএইডের প্রোগ্রামস অ্যান্ড পলিসি পরিচালক পার্থ হেফাজ সেখ বলেন, বাংলাদেশে খোলা স্থানে মলত্যাগের হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২২ সালের খানা আয়–ব্যয় অনুযায়ী ৯২ দশমিক ৩২ পরিবারে উন্নত শৌচাগার সুবিধা রয়েছে। তবু পানির গুণগত মান, স্যানিটেশন অবকাঠামো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্বলতাগুলো ওয়াস খাতের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন স্ট্যাটিস্টিকস (এসভিআরএস) ২০২৩ অনুসারে, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষের নিরাপদ পানীয় জলের সুবিধা রয়েছে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর থেকে ওয়াস বাজেট ক্রমাগত কমেছে। যেমন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ২২ দশমিক ৪ কমে ১১৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন টাকা হয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা আরও কমে ১০৯ দশমিক ১ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। সংস্থাভিত্তিক বরাদ্দের দিকে তাকালে দেখা যায়, ওয়াসার (৪টি পুরোনো শহরের ৪টি ওয়াসা রয়েছে) মধ্যে ঢাকা ওয়াসাই সবচেয়ে বেশি (৩১৪০৭৭ লাখ টাকা) বরাদ্দ পাচ্ছে, অন্যদিকে সারা দেশে ওয়াস পরিষেবা প্রদানের দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) বরাদ্দ কমেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম পার্বত্য জেলাগুলোও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কম প্রকল্প সহায়তা পাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ, পিপিআরসির মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ন জ ল ল র রহম ন বর দ দ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

২৫১ কোটি টাকার দুই ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

দেশের সারের চাহিদা মেটাতে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো)-বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মে.টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় ও ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৫ এর (লট-২ ও ৪) ড্রেন, গেট, গার্ডশেড ও অন্যান্য নির্মাণে পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫১ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাসূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের পরিকল্পনা মোতাবেক কাফকো থেকে ৫.৪০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয়ের সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের জন্য প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো প্রাইস অফার পাঠায়। 

কাফকোর সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৩৮৩.২৫ মা. ডলার হিসেবে খরচ হবে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪০ কোটি ২৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

সভা সূত্রে জানা যায়,‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৫ এর (লট-২ ও ৪) ড্রেন, গেট, গার্ডশেড ও অন্যান্য নির্মাণে পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৫ এর (লট-২ ও ৪) রাস্তা, ব্রিজ ও অন্যান্য নির্মাণ পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে মাত্র ১টি দরপত্র টেকনিক্যালি রেসপনসিভ বিবেচিত হয়। 

দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত একমাত্র রেসপনসিভ দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) বিডিই লিঃ; এবং (২) কহিনুর এন্ট্রারপ্রাইজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১১১ কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজেটকে সমৃদ্ধ করতে নারীর প্রতি আরও সংবেদনশীল হতে হবে: ফওজিয়া মোসলেম
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, বেতন-ভাতায় খরচ ৬৩%
  • ঢাবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট প্রকাশ, অবহেলিত গবেষণা ও স্বাস্থ্য খ
  • ঢাবিতে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, গবেষণায় মাত্র ২.০৮%
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ফরম পূরণের সময় ২৩ জুন পর্যন্ত বাড়ল
  • বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ কম, বড় বৈষম্য
  • ২৫১ কোটি টাকার দুই ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির