জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদের সদস্যগণ (এমপি) শুধু অর্থ বিল এবং আস্থা ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতি অনুগত থাকবেন। অন্য যেকোনো বিষয়ে তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন৷ এসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মো. আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আরো পড়ুন:

অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশনের ৩৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত

আবারো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতের আলোচনা 

চারটি স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদ বিরোধী দলের মধ্যে থেকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে ঐকমত্য হয়েছে, উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেশন কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে আসনের সংখ্যানুপাতে বিরোধী দলের মধ্য থেকে নির্বাচন করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন।

সংসদে নারীদের জন্য ১০০ আসনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করেছে। তবে, তাদের নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। 

আজকের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানে বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে বলে কমিশনের সহ-সভাপতি জানিয়েছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকিরা একমত হয়েছে। পুনর্বার আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে৷ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দল। আগামীকাল সকাল ১১টায় আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। এতে আজকের অসমাপ্ত আলোচনাসহ জাতীয় সংবিধান কাউন্সিল (এনসিসি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে৷ 

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলিক ১৯ সংস্কার বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ৯টিতে ভিন্নমত

গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রতিষ্ঠানে বাছাই কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া, সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। তবে এ দুটিসহ সাতটি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি সিদ্ধান্তে একাধিক দল ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়েছে।

এসব ভিন্নমত জুলাই জাতীয় সনদে উল্লেখ থাকবে। দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা গতকাল শেষ হলেও জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়নি। শিগগির এটি চূড়ান্ত করার পর সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শেষ দিন ছিল গতকাল। গত ৩ জুন থেকে শুরু করে মোট ২৩ দিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করে কমিশন। এই সময়ে মৌলিক সংস্কারের ১৯টি প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অন্তত নয়টি বিষয়ের সিদ্ধান্তে একাধিক দলের ভিন্নমত রয়েছে।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এরপর তা দলগুলোকে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

গতকাল শেষ দিনের আলোচনায় যে সাতটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো হচ্ছে চার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, উচ্চকক্ষ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ও সংবিধানের মূলনীতি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও মৌলিক অধিকার ছাড়া অন্য পাঁচটি বিষয়ে একাধিক দলের ‘ভিন্নমত’ আছে। সংবিধানের মূলনীতি ছাড়া বাকি চারটি প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়, সে জন্য সংবিধানে যেসব মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছিল, তার দুটি ছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতির বদল এবং পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন। কমিশনের এ দুটি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি।

এ ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়, তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধানসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে না।

তবে শেষ পর্যন্ত তিন বাহিনীর প্রধানসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি। তিন বাহিনী প্রধানের নিয়োগ নির্বাহী বিভাগের হাতে রাখার পক্ষে মত দেয় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল। পরে অন্য সাতটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ ক্ষেত্রেও দুটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ভিন্নমত দেয় বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এ ক্ষেত্রে কমিশন যে রূপরেখা প্রস্তাব করেছে, তার তিনটি ক্ষেত্রে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভিন্নমত দিয়েছে।

সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়েও কমিশনের প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়েছে একাধিক দল। বিদ্যমান চার মূলনীতি বহাল রাখার নিশ্চয়তা না থাকায় সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ জাসদ গতকালের বৈঠকের শেষ পর্যায়ে আলোচনা বর্জন করে।

এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে। অবশ্য একটি দলের এ বিষয়ে ভিন্নমত আছে। আর সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, রক্ষা ও বাস্তবায়নে দলগুলো একমত হয়েছে। কী কী মৌলিক অধিকার থাকবে, তা সনদে উল্লেখ করা হবে না। এটি ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে ছয়টি কমিশনের যেসব প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে। তবে এই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) একাধিক দল। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক না হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে গতকাল মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

১৯ প্রস্তাবে সিদ্ধান্ত

গতকাল সকাল থেকে শুরু হয়ে কয়েক দফা বিরতি দিয়ে আলোচনা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। আলোচনা শেষে রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ঐকমত্য কমিশন মোট ১৯টি বিষয়কে মৌলিক সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এই ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। এসব সিদ্ধিন্তের কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট আছে।

১৯টি প্রস্তাব হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ; সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব; নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ; রাষ্ট্রপতির ক্ষমাসংক্রান্ত বিধান; বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ; জরুরি অবস্থা ঘোষণা; প্রধান বিচারপতি নিয়োগ; প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান; নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ও ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান; প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল; সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বিশেষত উচ্চকক্ষের গঠন; সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি; উচ্চকক্ষের এখতিয়ার; রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি; রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব; তত্ত্বাবধায়ক সরকার; নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।

আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদের বিষয়ে আলোচনা শেষ করতে চেয়েছিল। দলগুলোর সহযোগিতার কারণে সেটা সফল হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে। এরপর তা দলগুলোকে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে কমিশন দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছে। এ ক্ষেত্রে কমিশন অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরেও যতটুকু প্রয়োজন, সবাইকে সমন্বিত করে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলাপ–আলোচনা হবে। তার আগে জাতীয় সনদকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া দরকার। আগামী কয়েক দিন কমিশন সে কাজ করবে। তারপর বাস্তবায়নের পথ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হতে পারে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয়। ঐকমত্য কমিশন ১২টি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করে। ১২টি প্রতিষ্ঠান হলো অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, তথ্য কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) মহাপরিচালক নিয়োগ।

দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে কমিশন সিদ্ধান্ত দেয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ইউজিসি, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে না। তবে গভর্নর ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে নিয়োগের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভিন্নমত দেয় বিএনপিসহ কয়েকটি দল।

চার প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদ্ধতি

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগও কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে। এ কারণে সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের আপত্তি থাকায় এ প্রস্তাব থেকে সরে এসে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন।

তাতেও ঐকমত্য না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ও ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দেয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিএনপিসহ কয়েকটি দলের জোরালো আপত্তি ছিল। বিএনপি এসব প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে। গতকালও তারা একই অবস্থান তুলে ধরে।

পরে কমিশন সিদ্ধান্ত দেয় পিএসসি, দুদক, সিএজি ও ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা হবে। একটি বাছাই কমিটি এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের বাছাই করবে। ওই ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। তবে বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও জোটের এ বিষয়ে আপত্তি আছে। তারা জাতীয় সনদে এ সিদ্ধান্তে ভিন্নমত দেবে।

উচ্চকক্ষে পিআর, ভিন্নমত বিএনপির

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের। সদস্যরা মনোনীত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর), অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনে দলগুলো যে ভোট পাবে, তার ভিত্তিতে দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন করা হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২–দলীয় জোট, এনডিএম ও এলডিপি। তারা বলেছে, উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনীত হতে হবে জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে। এ বিষয়ে তারা জাতীয় সনদে ভিন্নমত দিতে পারবে। আর সিপিবি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে।

এ আলোচনায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিনের উদ্দেশে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘২৩ সালে কোথায় ছিলেন?’ তাঁর এ মন্তব্যে সংলাপে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে ক্ষমা চান তিনি।

গতকালের আলোচনায় বৈঠকে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের
  • যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে: আলী রীয়াজ
  • মৌলিক ১৯ সংস্কার বিষয়ে সিদ্ধান্ত, ৯টিতে ভিন্নমত
  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
  • রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে  জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ  
  • দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
  • মৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি
  • জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: জামায়াতের নায়েবে আমির