ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার কয়েকটি এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। গত তিন সপ্তাহ ধরে পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটছে এখানকার চরাঞ্চলের মানুষের। নদীতীরসংলগ্ন বেশ কয়েকটি রাস্তা ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। কিছু এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পাউবো বলছে, প্রতি বছর জুন ও জুলাইয়ে নদীতে পানি বাড়ার ফলে ভাঙন দেখা যায়। গত কয়েক সপ্তাহে ভাঙনের শিকার হয়েছে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার শয়তানখালি ঘাট, খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী, গোপালপুর ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সদরপুরের আকোটেরচর ইউনিয়নের মুন্সীরচর, পিয়াজখালীরচর, আকোট, আকোটেরচর, ছলেনামা ও খোকারামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক ঘর। নদী ভাঙতে ভাঙতে এই ঘরগুলোর মাত্র কয়েক গজ দূরে এখন পদ্মা। এ ছাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, নুরুদ্দিন সরদারকান্দি, কাচিকাটা গ্রাম, নন্দলালপুর, ফকিরকান্দি, তালপট্টিরচর, কাড়ালকান্দি, জঙ্গিকান্দি, জামাল শিকদারকান্দি এবং চরমানাইর ইউনিয়ন ও চরনাসিরপুর ইউনিয়নের শিমুলতলী ঘাট, কাজীরসুরা, দুর্বারটেক, মফিজদ্দিনেরকান্দি, হাফেজকান্দি, রাড় চরগজারিয়া ও গিয়াস উদ্দীন মুন্সীরকান্দি গ্রাম ভাঙছে। কমপক্ষে ৬০টির বেশি ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এসব ভাঙন এলাকায় কেউ কেউ এখনও নদীর তীরে ঝুঁকি নিয়ে আছেন। বসতঘর ভেঙে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তারা বাড়ির চাল খুলে অন্য জায়গায় সরিয়ে রাখলেও খুঁটি ও বেড়া সরাচ্ছেন না। তাদের আশা, যদি ভাঙন থেমে যায়।
চরভদ্রাসনের চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লা শিকদারেরডাঙ্গী গ্রাম, সদর ইউনিয়নের টিলারচর ও এমপিডাঙ্গী গ্রাম, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চরকালকিনিপুর, চরমির্জাপুর, চরতাহেরপুর, চরকল্যাণপুর, দিয়ারা গোপালপুর গ্রামেও ভাঙন চলছে। নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের কাচিকাটা গ্রামের আইয়ুব শেখ বলেন, ‘নদীর পাশেই আমার ঘর ছিল। হঠাৎ দেখি ফাটল। রাতে ভাঙন বেশি হয়, তাই ঘর ডুবে যাওয়ার ভয়ে আমি সরিয়ে নিয়েছি। যদি না সরাতাম এখন আমার ঘর থাকত নদীতে।’
আকোটেরচর ইউনিয়ন খোকারাম সরকারের ডাঙ্গী গ্রামের গুচ্ছগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, এখান থেকে প্রতি বছর অবৈধভাবে বালু তোলা হয়। বালু তোলেন যারা, তারা প্রভাবশালী–তাই কেউ প্রতিবাদ করতে পারতেন না। প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেওয়া হতো। এখন নদীভাঙনে তার খেসারত দিচ্ছেন এলাকাবাসী। 
ঢেউখালি ইউনিয়নের শয়তানখালি ঘাট এলাকার বাসিন্দা কাজী নজরুল। তিনি জানান, পদ্মায় কয়েক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার ফলে ভাঙনও দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যতদ্রুত সম্ভব ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাঁর। 
আকোটেরচর ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকার কৃষক ইসমাইল মুন্সি বলেন, প্রতি বছর নদীর তীর কেটে নিচ্ছেন কিছু লোক। এখনও নদীর তীর কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নদীভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক বসতবাড়ি।
রিনা বেগম নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা বলেন, ‘কে করে দেবে আমাদের ঘরবাড়ি? সরকার একটি ঘর দিয়েছে সেখানে থাকি। নদী যেভাবে ভাঙছে হয়তো বেশিদিন থাকতে পারব না। ঘর চলে যাবে নদীতে। কীভাবে থাকব, বুঝতে পারছি না।’
গত দুই সপ্তাহে পদ্মা নদীর ভাঙনে চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চারটি পরিবারের বাড়ি বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা। তিনি বলেন, ৩ হাজার বিঘা বাদামের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এখনও পদক্ষেপ নেননি তারা।
আকোটেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম বেপারী বলেন, শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই নদী ভাঙছে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য নদীভাঙন নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আশা করছেন দ্রুত তারা ভাঙনরোধে ব্যবস্থা  নেবেন।
গত ২০ দিনে যে স্থানগুলো ভেঙেছে সেখানে নদীর গভীরতা অনেক বেশি। তাই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তাদের একটি দল ভাঙনরোধে কাজ করছে। তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করবেন। এরপর ভাঙনরোধে টেকসই স্থায়ী প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উচ্চমহলে পাঠানো হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রক ন দ

এছাড়াও পড়ুন:

১০ টাকায় ইলিশ বিতরণ, জনতার চাপে ‘মাফ চেয়ে’ এলাকা ছাড়ালেন ‘এমপি প্রার্থী’

ফরিদপুরে সদরপুর উপজেলায় মাত্র ১০ টাকায় ইলিশ মাছ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রায়হান জামিল নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু বিতরণের জন্য যে পরিমাণ মাছ তিনি এনেছিলেন, তার থেকে লোকসংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হয়। সবাইকে মাছ দিতে না পেরে জনতার বিক্ষোভের মুখে কোনোরকমে এলাকা ছাড়েন তিনি।

আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। তিনি ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর ৪ আসনের একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। এরই অংশ হিসেবে ‘জনগণের মন জয় করার জন্য’ তিনি ১০ টাকায় ইলিশ মাছ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রায়হান জামিল ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ পরিচয় দিয়ে সপ্তাহখানেক আগে সদরপুরের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সাঁটান। তাতে তিনি লেখেন, ১০ টাকায় ইলিশ মাছ দেবেন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ব জাকের মঞ্জিল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই ইলিশ দেওয়ার কথা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার সকাল থেকে শত শত মানুষ জাকের মঞ্জিল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। বিতরণ শুরুর একপর্যায় মাছ ফুরিয়ে যায়। তখন মাছ নিতে না পারা লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে রায়হান জামিল পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।

‘স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী’ পরিচয়ে ১০ টাকায় ইলিশ বিতরণ করতে যাওয়া রায়হান জামিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ টাকায় ইলিশ খাওয়াতে গিয়ে তোপের মুখে ‘এমপি প্রার্থী’ জামিল
  • ১০ টাকায় ইলিশ বিতরণ, জনতার চাপে ‘মাফ চেয়ে’ এলাকা ছাড়ালেন ‘এমপি প্রার্থী’
  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • ভাঙ্গায় বিএনপির শান্তিমিছিল, শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত