একটি ভাঙাচোরা বাইসাইকেলই তার ভরসা। এ সাইকেল চালিয়ে ১৫ কিলোমিটার দূরের খাসিয়াপুঞ্জিতে কাজ করে কিশোর তোফাজ্জল। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তাকে ৪ জনের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। প্রতিদিন মাত্র দুই-আড়াইশ টাকা উপার্জনে পরিবারের তিন অসুস্থ সদস্যকে নিয়ে সংসারের বোঝা টানতে হচ্ছে তোফাজ্জলকে। 
কমলগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দী গ্রামের আলী আহমেদ (৬৫)-এর ছেলে তোফাজ্জল হোসেন। 

সমকালের সঙ্গে আলাপকালে তোফাজ্জেল জানায়, তার পরিবারের তিনজন অসুস্থ। বাবা দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত, বোন আয়েশা খাতুন (২৫) মানসিক ভারসাম্যহীন। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ দাদি সমিতা বিবিও (৮২) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। স্থানীয় খাসিয়াপুঞ্জিতে কাজ করে প্রতিদিন যা আয়-রোজগার হয় তাতে দু’বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না তাদের। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশীদের করা সামান্য সহযোগিতাই তাদের একমাত্র ভরসা।

প্রতিবেশী ফজল মিয়া, আবু শহীদ জানান, তোফাজ্জলদের পরিবার প্রকৃতই খুব অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবারের তিনজনই অসুস্থ। তাদের সাহায্য করার মতো আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে তাদের সাহায্য করেন। 

গত মঙ্গলবার তোফাজ্জলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি আবাসন প্রকল্পের ছোট্ট একটি ঘরে মেঝেয় জরাজীর্ণ কাঁথায় শুয়ে আছেন সমিতা বিবি। অপুষ্টি আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় ক্লান্ত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। পা ভেঙে এক বছর ধরে শয্যাশায়ী। 

বাবা আলী আহমেদ জানালেন, তিনি হার্টের রোগী। দীর্ঘদিন ধরে কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ছেলে তোফাজ্জলই তাঁর একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন তাঁর ছেলে খাসিয়াপুঞ্জিতে (খাসিয়া গ্রাম) কাজ করতে যায়। ছেলের সামান্য আয়ে কোনোক্রমে সংসার চলে যাচ্ছে। কখনও কখনও দুই বেলা খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে পড়ে।

সমিতা বিবি অস্ফুট কণ্ঠে বলেন, ‘ডালভাত খেয়ে ঈদের দিন পার করেছি। ক্ষিদের জ্বালায় রাতে ঘুম আসে না। ১৩-১৪ বছরের একরত্তি নাতি আর কিইবা করবে। তবু যা করছে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। চাল-ডাল আনলে ওষুধ আনতে পারে না। প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়। প্রতিবেশীরা কেউ খাবার দেয়, কেউ সামান্য টাকা-পয়সা দেয়। এভাবেই টিকে আছি।’

ইসলামপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক আহমেদ জানালেন, পরিবারটি এতটাই অসহায় যে, একসময় তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না। কয়েক বছর আগে সরকারি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোফাজ্জলদের দুরবস্থা জেনে অনেকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তাদের সহায়তা করছেন। পরিবারটির অসুস্থদের সুচিকিৎসা ও তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সরকারি সহায়তার দাবি জানান তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

পেনাল্টি মিসে এশিয়ান দলের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার যা করতে ব্যর্থ হলো রিয়াল

রিয়াল মাদ্রিদ কোচ হিসেবে জাবি আলোনসোর শুরুটা প্রত্যাশামতো হলো না। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ড রক স্টেডিয়ামে ক্লাব বিশ্বকাপে কাল রাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে রিয়াল। জয়ের সুযোগ কিন্তু পেয়েছিল মাদ্রিদের ক্লাবটি। শেষ দিকে ফেদেরিকো ভালভের্দে পেনাল্টি মিস করায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয় রিয়াল আলোনসোর দলকে।

জ্বরে ভোগায় এমবাপ্পেকে ছাড়াই মাঠে নামা রিয়ালকে ভালোই ভুগতে হয়েছে আল হিলালের বিপক্ষে। নতুন কোচ আলোনসো পয়েন্ট ভাগাভাগি শেষে বলেছেন, ‘কিছু বিষয় ঠিক করতে হবে।’ তবে পুরো পয়েন্ট তুলে নিতে না পারার হতাশা নিশ্চয়ই পোড়াবে আলোনসোকে।

ফুটবলের তথ্য–উপাত্তভিত্তিক এক্স হ্যান্ডল ‘মিস্টারচিপ’ জানিয়েছে, নিজেদের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ৯০ মিনিটের মধ্যে এশিয়ান প্রতিপক্ষকে হারাতে ব্যর্থ হলো রিয়াল। এর আগে ২০১৬ ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জাপানের ক্লাব কাশিমা অ্যান্টলার্সের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে জিতেছে রিয়াল।

ঠিক করার সুযোগটা অবশ্য আলোনসো এখনো পাননি। ৯ জুন প্রথমবার তাঁর অধীনে দলীয় অনুশীলন করে দলটি। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্ট খেলতে যায় রিয়াল। আল হিলালের কোচ হিসেবে এটা সিমোন ইনজাগিরও ছিল প্রথম ম্যাচ। আলোনসোর শুরুটা প্রত্যাশামতো না হলেও ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের আটকে দিয়ে আল হিলাল অধ্যায়টা ভালোই শুরু করলেন ইনজাগি।

পয়েন্ট ভাগ করে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ইনজাগি, ‘আমার দলের জন্য এটা ছিল দারুণ একটি ম্যাচ। তারা খুব ভালো খেলেছে। আমরা দল হিসেবে খেলেছি। সবাই মিলে একসঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে লড়েছি, এই দলটিকে আমি বিশ্বের সেরা তিনটি দলের একটি বলে মনে করি। আমি খুবই সন্তুষ্ট।’

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে আল-হিলাল। ১৯তম মিনিটে আল হিলালের সালেম আল-দাওসারির ভলি থেকে ফিরতি বলে মারকোস লিওনার্দোর শট অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর রেনান লোডির গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। ডান দিক থেকে আল-দাওসারি বেশ কয়েকবার একা ঢুকেছেন বক্সে, তাঁর একটি শটটি পোস্টের কাছ ঘেঁষে গেছে।

প্রথম গোলটি অবশ্য রিয়ালই করেছে। আক্রমণভাগে এমবাপ্পের জায়গায় সুযোগ পাওয়া স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড গনজালো গার্সিয়া গোল করেন ৩৪ মিনিটে। প্রতি আক্রমণে উঠে রদ্রিগোর সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় বক্সে ঢুকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করেন গার্সিয়া।

বিরতির ঠিক ৪ মিনিট আগে সমতায় ফেরে আল-হিলাল। রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিও বক্সে আল হিলালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মারকোস লিওনার্দোকে টেনে ফেলে দেন, রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে স্পট কিক থেকে পর্তুগিজ তারকা রুবেন নেভেস গোল করেন।

প্রথমার্ধে গোল পেলেও রিয়াল পরের অর্ধে নিজেদের সেরা ফুটবল খেলেছে। ভাগ্য সহায় হলে রিয়াল এগিয়ে যেত পারত কয়েকবার। ৮৭ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোলটি করতে পারলেও জয় দিয়ে শুরু হতো আলোনসোর। তবে ভালভার্দের পেনাল্টি দারুণভাবে ঠেকিয়ে দেন আল হিলাল গোলকিপার ইয়াসিন বুনু।

ড্রয়ের পর রিয়াল কোচ আলোনসো বলেছেন, ‘প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে অনেক ভালো খেলেছি। প্রথমার্ধে আমাদের অনেক কিছুর অভাব ছিল, আমরা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলাম। ম্যাচে যেভাবে ফিরেছি তা আমার ভালো লেগেছে। আমরা খেলার ছন্দ বদলাতে পেরেছি, নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছি এবং প্রতিপক্ষের অর্ধে বেশি খেলতে পেরেছি।’

আলোনসো দল নিয়ে প্রস্তুতির ঘাটতির কথাও বললেন, ‘আমি জানতাম সময় লাগবে। কিছু জিনিস আমাদের বদলাতে হবে। সেগুলো ঠিক করতেই হবে, এবং আমরা সেই চেষ্টা করে যাব। সবকিছুর জন্য সময় দরকার। আমাদের হাতে ছিল মাত্র নয় দিন, কিছু খেলোয়াড় তো মাত্র তিনবার অনুশীলন করতে পেরেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ