অঝোর ধারায় বৃষ্টি চলছিল দুপুর থেকেই। একটানা চলল প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। যেন আষাঢ়ের রূপ চেনাতেই প্রকৃতির এই টানা বর্ষণ। সন্ধ্যা যখন প্রায় ঘনিয়ে এলো, তখন থামল বৃষ্টি। শান্ত হলো প্রকৃতি। তখনই আরিবার কণ্ঠে বেজে উঠল, ‘এসো শ্যামল সুন্দর,/ আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা।’ রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে হারমোনিয়ামের 
সুর, তবলার তালে ঝংকৃত হয়ে যেন মূর্ত হয়ে উঠল বর্ষার রূপ। 
শুক্রবার এমন সন্ধ্যা নেমেছিল রাজবাড়ী শহরতলির গোদারবাজারের পদ্মাপুলক পয়েন্টে। সেখানে জেলা প্রশাসন ও রাজবাড়ী পৌরসভা যৌথভাবে আয়োজন করেছিল ‘জলদ তালে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের। বর্ষাসংগীতের সুর-তাল-লয়, কবিতা ও নাচের ছন্দ এদিন উপভোগ করেন বৃষ্টিস্নাত দর্শনার্থীরা। পদ্মাপারের খোলামঞ্চে তারা নির্মল আনন্দে মেতে ওঠেন। শৈশবের স্মৃতি যেন ভেসে ওঠে তাদের মানসপটে।
আরিবার কণ্ঠ থেমে যাওয়ার পর একে একে গেয়ে ওঠেন জান্নাত ই আমিরা ও লুবনা। তাদের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘ওগো বৃষ্টি আমায় চোখের পাতা ছুঁয়ো না’, ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে’র মতো আধুনিক গান। সমবেত কণ্ঠে ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’ লোকগান পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। 
‘বর্ষাবরণ স্মৃতিহরণ’ শীর্ষক বৃন্দ কবিতা আবৃত্তি পরিবেশিত হয় চায়না সাহার পরিচালনায়। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথের ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ ও কাজী নজরুলের ‘মেঘের ডমরু ঘন বাজে’ গানের তালে নাচ পরিবেশন করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। 
ফাঁকে ফাঁকে চলে রবীন্দ্রনাথের ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’, ‘বরিষা ধরা মাঝে শান্তির বাণী’; কাজী নজরুলের ‘গগনে কৃষ্ণ মেঘ দোলে’। পরিবেশিত হয় ‘আজ এ বৃষ্টির কান্না শুনে’, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’র মতো আধুনিক ও ফোক গান।
আলোচকেরা বলেন, সাধারণ দিনের থেকে বর্ষাকালের দিন অনেকটা আলাদা। এই সময় আমাদের মনের ভেতর অন্যরকম দোলা দেয়। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যায়। বর্ষাকালে চারদিকে নদনদী, খাল-বিল পানিতে ভরে যায়। তখন মনের ভেতরে সুখ-দুঃখের 
অনুভূতি খেলা করে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ