আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতা সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কাঁঠালকান্দি গ্রাম ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হয়েছে। পাল্টা হামলার মুখে গ্রাম ছেড়েছে শতাধিক পরিবার। ঘটনার তিনদিন পর আজ মঙ্গলবারও প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা–লুটপাট হয়েছে।
চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে গত শনিবার মোল্লা গোষ্ঠী ও উল্টা গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব মিয়া (২৬)। তিনি ছিলেন মোল্লা গোষ্ঠীর। এরপর উল্টা গোষ্ঠীর লোকজন গ্রাম ছাড়লেও প্রতিদিনই তাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হচ্ছে।
সংঘর্ষের চারদিন পেরোলেও গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি। চাতলপাড়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও এর সদস্য মাত্র ১০ জন। তারা বলছেন, কাঁঠালকান্দিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তারা সেখানে যেতে নিরাপদবোধ করছেন না। তাছাড়া হাওড়বেষ্টিত গ্রামটিতে যাতায়াতের মতো বাহনও তাদের নেই।
চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। হাওর এলাকা হওয়ায় যাতায়াতেও অসুবিধা। তাছাড়া নিহতের স্বজনরা টেঁটা-বল্লম নিয়ে পাহারা দেওয়ায় আমাদেরও নিরাপত্তা নেই।’
নাসিরনগর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, সোহরাব মিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার দোতলা বাড়ি সংঘর্ষের পর গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি গ্রাম ছেড়েছেন। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। ফলে তাদের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার কাঁঠালকান্দি গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের পথে পথে ছড়িয়ে আছে ভাঙা কাচ, পোড়া টিন আর লণ্ডভণ্ড আসবাবপত্র। পোড়া, বিধবস্ত বাড়ি গ্রামজুড়ে। ২/৩টি পোড়া বাড়ি থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ৩৭টির বেশি বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যার পর আগুন দেওয়া হয় উল্টা গোষ্ঠীর লিলু মিয়ার বাড়িতে। গতকাল জয়নাল মিয়া ও মো.
গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করিনি। তারপরও আমার বাড়িতে মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন হামলা করে সব ভেঙে নিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে খাবারও নেই। হামলাকারীরা রান্নাঘরের চুলা, এমনকি টিউবওয়েলটিও তুলে নিয়ে গেছে।’
সাফিয়া বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমার এক ছেলে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছিল। কিন্তু মোল্লা গোষ্ঠীর লোকজন ঘরটা পুড়িয়ে দিল। আজ আমার সব শেষ।’
অন্তঃসত্ত্বা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গলা থেকে স্বর্ণের চেইন পর্যন্ত নিয়ে গেছে। এমনকি আমার ওষুধগুলোও নিয়ে গেছে। বারবার অনুরোধ করার পরও আমার হাত-পা বেঁধে রেখে চলে যায়।’
কাঁঠালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় সোমবার অন্তত ২১ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০০ জনের বেশিই অনুপস্থিত ছিল। আতঙ্কে একজন শিক্ষকও ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
প্রধান শিক্ষক তুহিনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তো বটেই, শিক্ষকরাও আতঙ্কে আছেন। অভিভাবকদের ফোন করেও সাড়া পাচ্ছি না।’
চাতলপাড় বাজারের ছয়টি দোকানেও ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে চালের আড়ত, মোবাইল ফোন এবং রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ছ ত রদল ন ত হত য ল টপ ট ঠ লক ন দ চ তলপ ড় ম বল ন
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি