দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে, হবে শোনাও যাচ্ছে। তবে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার। যেমন ডেপুটি গভর্নরদের যোগ্যতা, কাজের পরিধি, জবাবদিহি ইত্যাদি।

অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের মুখ্য কাজ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলের পদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া। সেটি ক্যাশ অফিসার, অফিসার ও সিনিয়র অফিসার—যে পদেরই ভাইভা হোক, সে ভাইভা বোর্ডে তাঁদের থাকা চাই–ই চাই। ডেপুটি গভর্নরের নিচের পদের কারও সভাপতিত্বে ভাইভাগুলো নিতে চাইলে তাঁরা বিরাগভাজন হন।

সকাল-বিকেল প্রতি বেলা ভাইভার জন্য একটা সম্মানী থাকে। সেটির সুবিধাভোগী তাঁরা হন। এ ছাড়া ভাইভায় নম্বর দেওয়া, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কেউ কেউ প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ শোনা যায়।

বিশ্বের আর একটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখান, যাঁদের দ্বিতীয় প্রধান নির্বাহী বছরের বেশির ভাগ দিনের একটা বড় অংশ ভাইভা নিয়ে কাটান, তা–ও এন্ট্রি লেভেলের পদের। এ মুহূর্তে ২০২২ সালভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসারসহ আরও কিছু পদের ভাইভা চলছে। চলবে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে এবং বেলা ৩টা থেকে দুই বেলা করে। প্রতি বেলায় চলবে অন্তত ৩–৪ ঘণ্টা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় সারা বছর এমন কোনো না কোনো পদের ভাইভা চলতেই থাকে। কখনো একসঙ্গে দুই–তিনটা–ও চলে। প্রতিটি ভাইভা বোর্ড হয় ডেপুটি গভর্নরের সভাপতিত্বে। একাধিক ভাইভা চলমান থাকলে তাঁরা বন্ধের দিন, অফিস সময়ের আগে ও পরে এমনকি রাত পর্যন্তও ভাইভা নেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে দৈনন্দিন রুটিন কাজের অংশ হিসেবে এমন অনেক কিছু বিভাগীয় প্রধান (পরিচালক) এমনকি নির্বাহী পরিচালকের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, যা শুধু ডেপুটি গভর্নর অনুমোদন করতে পারেন। আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি তো আছেই, সামান্য একটা সভার নাশতা, প্রিন্টার কেনা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদোন্নতি, বদলি সবকিছুই তাঁদের অধীনে। কিন্তু তাঁরা ব্যস্ত থাকেন ভাইভা নিয়ে।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, এ সময়কালে দেশের অর্থনীতির জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কেস, ফাইলও দিনের পর দিন তাঁদের টেবিলে পড়ে থাকে; কারণ, তাঁরা ভাইভায় ব্যস্ত। এ কারণে আজকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ, হাই প্রোফাইল বিষয়াদি সন্ধ্যার পর পাস হবে, এটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। সারা দিন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে অনেক কাজ আটকে থাকে। সন্ধ্যার পর শুরু হয় ছোটাছুটি।

নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাইভা বোর্ডে ডেপুটি গভর্নরদের এই একচ্ছত্র প্রভাবের অবসান হোক।

তাসনিম ফারিহা ব্যাংকার; মিরপুর, ঢাকা

*মতামত লেখকের নিজস্ব

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অফ স র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন