সেন্ট মার্টিনে যেতে পর্যটকদের গুনতে হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি
Published: 12th, July 2025 GMT
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয়দের দক্ষতার উন্নয়ন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। পাশাপাশি দ্বীপের প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের ওপর ধার্য করা হবে পরিবেশ সংরক্ষণ (এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন) ফি।
আজ শনিবার পরিবেশ অধিদপ্তরে সেন্ট মার্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো দ্বীপ আছে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের মতো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দ্বীপ একটাই। এ দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে। আগস্ট মাস থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
সভায় পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এই ফি সংগ্রহ করবে। আদায়কৃত অর্থ দিয়ে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তবে পর্যটকদের ওপর কত টাকা ফি ধার্য করা হবে, সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেন্ট মার্টিনে প্রাথমিকভাবে ৫০০ পরিবারকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন, চিপস তৈরি ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেন্ট মার্টিনে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়কালে মৎস্য অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিনের জেলেদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াবে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অক্টোবর মাসের পর থেকে সেন্ট মার্টিনে একবার ব্যবহার্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক প্রবেশ করবে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম সেন্ট মার্টিন নিয়ে অধিদপ্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, সেন্ট মার্টিনে ১০ হাজার বাসিন্দা আছেন। তাঁদের প্রত্যেকে এ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হবে। পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিনে কৃষিকাজ হ্রাস পেয়েছে। এখানে জমির ধরন অনুযায়ী স্থানীয়দের কৃষি সহায়তা দেওয়া হবে। এখানে জলবায়ু–সহিষ্ণু জাতের ধান চাষের প্রচলন করা হবে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, জীববৈচিত্র্য ফেরাতে সৈকতজুড়ে নির্বাচিত এলাকায় সাগরলতা লাগানো ও কেয়া বন সৃষ্টি করা হবে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
সেন্ট মার্টিন নিয়ে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) পক্ষ থেকে একটি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনায় সেন্ট মার্টিনকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়।
জোন-১ কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মাল্টিপল ইউজ জোন’ হিসেবে, যেখানে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অনুমোদন দেওয়া যাবে। জোন-২ কে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে সংবেদনশীল এলাকাকে রক্ষায় ‘বাফার জোন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জোন-৩ এ জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে। কিন্তু এখানে শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয়রা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে পারবে। জোন-৪ এ কঠোরভাবে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হবে। এখানে সব ধরনের প্রবেশ ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।
সিইজিআইএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক এইচ এম নুরুল ইসলাম বলেন, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের কারণে সেন্ট মার্টিনে জীববৈচিত্র্য কমে গেছে। এসব জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন করতে গিয়ে বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও গাছপালা বেড়ে গেছে। এসব বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদের বিস্তার রোধ করতে হবে।
নুরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করতে সমুদ্র থেকে এত পরিমাণে লবস্টার (চিংড়ি) ধরা হয়েছে যে এখন লবস্টার হারিয়ে গেছে। নৌযান, জাহাজের নোঙরের কারণে কোরাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
এ সময় মৎস্য অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, পর্যটন করপোরেশন, কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বব চ ত র য ন পর ব শ ল ইসল ম প রকল প রক ষ য় ব কল প
এছাড়াও পড়ুন:
সেন্ট মার্টিনে যেতে পর্যটকদের গুনতে হবে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল স্থানীয়দের দক্ষতার উন্নয়ন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে সরকার। পাশাপাশি দ্বীপের প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের ওপর ধার্য করা হবে পরিবেশ সংরক্ষণ (এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন) ফি।
আজ শনিবার পরিবেশ অধিদপ্তরে সেন্ট মার্টিনের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো দ্বীপ আছে। কিন্তু সেন্ট মার্টিনের মতো প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দ্বীপ একটাই। এ দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র রক্ষার অংশ হিসেবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে। আগস্ট মাস থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’
সভায় পর্যটকদের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ ফি আদায় করার সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এই ফি সংগ্রহ করবে। আদায়কৃত অর্থ দিয়ে দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তবে পর্যটকদের ওপর কত টাকা ফি ধার্য করা হবে, সেটা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেন্ট মার্টিনে প্রাথমিকভাবে ৫০০ পরিবারকে নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ির আঙিনায় হাঁস-মুরগি পালন, চিপস তৈরি ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেন্ট মার্টিনে দুজন কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়কালে মৎস্য অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিনের জেলেদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াবে বলে জানান তিনি।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অক্টোবর মাসের পর থেকে সেন্ট মার্টিনে একবার ব্যবহার্য (সিঙ্গেল ইউজ) প্লাস্টিক প্রবেশ করবে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে অবহিত করা হবে। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম সেন্ট মার্টিন নিয়ে অধিদপ্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, সেন্ট মার্টিনে ১০ হাজার বাসিন্দা আছেন। তাঁদের প্রত্যেকে এ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ প্রহরী নিয়োগ দেওয়া হবে। পর্যটনের কারণে সেন্ট মার্টিনে কৃষিকাজ হ্রাস পেয়েছে। এখানে জমির ধরন অনুযায়ী স্থানীয়দের কৃষি সহায়তা দেওয়া হবে। এখানে জলবায়ু–সহিষ্ণু জাতের ধান চাষের প্রচলন করা হবে।
এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, জীববৈচিত্র্য ফেরাতে সৈকতজুড়ে নির্বাচিত এলাকায় সাগরলতা লাগানো ও কেয়া বন সৃষ্টি করা হবে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।
সেন্ট মার্টিন নিয়ে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) পক্ষ থেকে একটি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনায় সেন্ট মার্টিনকে চারটি জোনে ভাগ করা হয়।
জোন-১ কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মাল্টিপল ইউজ জোন’ হিসেবে, যেখানে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অনুমোদন দেওয়া যাবে। জোন-২ কে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে সংবেদনশীল এলাকাকে রক্ষায় ‘বাফার জোন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জোন-৩ এ জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে। কিন্তু এখানে শর্ত সাপেক্ষে স্থানীয়রা প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে পারবে। জোন-৪ এ কঠোরভাবে প্রকৃতি সংরক্ষণ করা হবে। এখানে সব ধরনের প্রবেশ ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।
সিইজিআইএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক এইচ এম নুরুল ইসলাম বলেন, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টের কারণে সেন্ট মার্টিনে জীববৈচিত্র্য কমে গেছে। এসব জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধন করতে গিয়ে বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ও গাছপালা বেড়ে গেছে। এসব বিদেশি প্রজাতির উদ্ভিদের বিস্তার রোধ করতে হবে।
নুরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করতে সমুদ্র থেকে এত পরিমাণে লবস্টার (চিংড়ি) ধরা হয়েছে যে এখন লবস্টার হারিয়ে গেছে। নৌযান, জাহাজের নোঙরের কারণে কোরাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, পরিবেশ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান।
এ সময় মৎস্য অধিদপ্তর, বন অধিদপ্তর, পর্যটন করপোরেশন, কৃষি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।