রৌদ্রদীপ্ত বিকেল। কোটা সংস্কারের দাবির ব্যানার নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মিডিয়া চত্বরে দাঁড়িয়ে আছেন কিছু শিক্ষার্থী। হঠাৎ সামনে থেকে ক্যাপ, চশমা ও চেক শার্ট পরা একজন তরুণ এগিয়ে এলেন।
সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে পরিচিত হলাম সেই তরুণের সঙ্গে। বয়সে বড়, তাই সম্মোধন করলাম ভাই বলে। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ ভাই বললেন, ‘এই অন্যায্য বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমিও কথা বলতে চাই।’ সেদিন থেকে মিছিলের সামনে এসে তিনি বক্তৃতা দিতেন। বলতেন ন্যায্যতার কথা, অধিকারের কথা। দিন শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আন্দোলনের কর্মকাণ্ড শেষে সংগঠকদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে পার্কের মোড়ে বসে ভাবতাম, আমরা কি পারব এই আন্দোলনে বিজয়ী হতে? আবু সাঈদ ভাই খুব প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতেন, ‘পারব, ভয় নাই।’
একদিন চা খেতে খেতে অনেক কথা হলো তাঁর সঙ্গে। আগে তিনি এ রকম কোনো কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেননি। কোটা বৈষম্য মেনে নিতে না পারায় তাঁর এই সম্পৃক্ততা। তখনই জেনেছিলাম, তাঁর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।
৩ জুলাই। এখনো স্পষ্ট মনে আছে, মিছিলের উদ্দেশ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হচ্ছিলাম। টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। আবু সাঈদ ভাই এলেন। প্ল্যাকার্ড নিলেন। তাতে রংতুলিতে লিখলেন সুযোগের সমতার কথা। এরপর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মিছিলের একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। শুরু করলেন সেদিনের কর্মসূচি। নিজেই স্লোগান ধরলেন। মিছিল শেষে ক্যাম্পাসের তৎকালীন নির্মাণাধীন গেটে (বর্তমানে ‘শহীদ আবু সাঈদ গেট’) তাঁর বক্তৃতা আমাদের দারুণ উজ্জীবিত করেছিল।
আন্দোলন নিয়ে বিকেলে যখন আমরা কোনো মিটিং করতাম, হঠাৎ আবু সাঈদ ভাই উঠে চলে যেতেন। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, প্রতিদিন বিকেলে কোথায় যান?’ বললেন, ‘টিউশন করাতে, এই টিউশন আমাকে ভাত দেয়।’ কথাটা মনে খুব দাগ কেটেছিল। সন্ধ্যায় টিউশন শেষ করে এসে পার্কের মোড় মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে তিনি আমাকে ফোন করতেন। নিচে গিয়ে চা খেতে খেতে কথা হতো পরের দিনের কর্মসূচি নিয়ে। তাঁর অদম্য চিন্তা আর স্পষ্ট প্রতিবাদের আমি সাক্ষী। একটা কথা তিনি সব সময় বলতেন, ‘ভয় পেয়ে কী হবে?’ তাঁর সাহস আমাদের মনেও অদম্য সাহস সঞ্চার করত।
শহীদ আবু সাঈদ চত্বর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঈদ ভ ই
এছাড়াও পড়ুন:
যাই কিছু হোক না কেন নির্বাচন এক দিনও পেছাবে না: প্রেস সচিব
যাই কিছু হোক না কেন নির্বাচন এক দিনও পেছাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, “আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন—প্রধান উপদেষ্টা যেদিন নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন, সেদিনই নির্বাচন হবে। একদিনও পেছানো হবে না। সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় ঐকমত্য গঠনে দীর্ঘ সময় লাগে। তুলনামূলকভাবে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত সময়ে একাধিকবার বসেছে, আলোচনা করেছে। এটা ইতিবাচক প্রবণতা। আমরা আশা করছি, ‘জুলাই সনদ’ একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক দলিল হবে।”
তিনি জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে খসড়া সনদ তৈরি, যাচাই-বাছাই ও সমন্বয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছ। আজ বৈঠক চলছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামুল কবীর। সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে আয়োজিত এই সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেস সচিব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল।
ঢাকা/এএএম/ইভা