কদিন ধরেই নেতিবাচক কারণে আলোচনার কেন্দ্রে নেইমার। গত বৃহস্পতিবার ইন্তারন্যাসিওনালের বিপক্ষে ২–১ গোলে হারের ম্যাচে নেইমার বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এক দর্শকের সঙ্গে। সেদিন পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল যে একপর্যায়ে সান্তোস তারকা একটি অকথ্য বাক্য ব্যবহার করে ওই দর্শককে বলেন, ‘পারলে এখানে আয়। নয় তো গোল্লায় যা!’

প্রায় ৩০ সেকেন্ড তর্কাতর্কির পর সান্তোস গোলকিপার জোয়াও পাওলো নেইমারকে সরিয়ে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এই ঘটনা আরও গড়িয়েছে। সর্বশেষ এই ঘটনায় সান্তোসের সমর্থক আলেক্স স্যান্দার সিলভার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে সান্তোস। এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রাজিলের ক্লাবটি।

সান্তোসের ভাষ্যমতে, একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তে ম্যাচের টিকিট সংগ্রহে ‘সম্ভাব্য অনিয়ম’ ধরা পড়েছে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, আলেক্স সিলভা ক্লাবের সদস্য নন এবং তিনি ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছেন ‘নিজের নয়, এমন নথিপত্র ব্যবহার করে’।

সান্তোস জানিয়েছে, তারা সমর্থকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে, কারণ ‘ফ্যান স্ট্যাটিউট’ (এমন নিয়মাবলি বা আইন যার মাধ্যমে ক্লাব ও সংগঠনগুলো তাদের ভক্ত ও দর্শকদের আচরণ, প্রবেশাধিকার, নিরাপত্তা এবং দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে) অনুযায়ী প্রতারণার মাধ্যমে কোনো খেলাধুলার আয়োজনে প্রবেশ করলে সেই ব্যক্তিকে দায়ী করার বিধান সেখানে রয়েছে। ক্লাবটি জানিয়েছে, মামলার বিষয়ে আরও বিবৃতি দেওয়ার আগে তারা পুলিশের তদন্তের ফল জানতে অপেক্ষা করবে।

আরও পড়ুন২০২৫ সালে নেইমার : গোল ৪, তর্কে জড়ানো ৫২৪ জুলাই ২০২৫

নেইমারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসা সাও পাওলো শহরের বার্গার দোকানের মালিক সিলভার জীবন এই পুলিশি অভিযোগের পর আরও জটিল হয়ে উঠল। এমনিতেই নেইমার–ভক্তদের তোপের মুখে ছিলেন তিনি।

এর আগে সংবাদমাধ্যমকে সিলভা বলেছিলেন, ‘আমার ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। অনেকেই আমাকে হুমকি দিয়ে বলছে, তারা আমার ব্যবসা জ্বালিয়ে দেবে। তারা আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকেও খুঁজে পেয়েছে, আর এসব থামছে না।’

সিলভা আরও বলেন, ‘আজ আমার জীবন যেন এক ঝড় বয়ে গেল। আমি সান্তোসের সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আমি শুধু আমার দাবি জানিয়েছিলাম। আমার ছেলেকে আক্রান্ত করা হয়েছে। আমার ১৫ বছরের ভাতিজাকে মারধর করা হয়েছে এবং তার চোখ কালো হয়ে গেছে। হয়তো এটা আমার সঙ্গে নেইমারের যা ঘটেছে, সে কারণে হয়েছে।’

আরও পড়ুননেইমারের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা০৮ জুন ২০২৫

একই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বিবৃতি দিয়েছেন নেইমারও, ‘উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যখন কেউ অন্যায়ভাবে আমাকে অপমান করে, তখন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি কখনোই মাঠে সমর্থকের সঙ্গে তর্ক করব না, কারণ তাদের অধিকার আছে আমার খেলা নিয়ে মতামত জানানোর। ভালো বা খারাপ খেলেছি বলা এবং দুয়োও দিতে পারে। কিন্তু যেটা তারা করতে পারে না, সেটা হলো আমাকে এমনভাবে অপমান করা, যেভাবে করা হয়েছে (দুর্ভাগ্যবশত, তখন আমি শুধু তার কথাই শুনেছি, ম্যাচও থেমে গিয়েছিল)। সে বলেছে, আমি আমার বাবার সঙ্গে অর্থের জন্য কাজ করি। সে আমার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়েও অসত্য অভিযোগ তুলেছে। আমি দুঃখিত, কিন্তু এ পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ছিল না।’

নেইমার আরও বলেন, ‘আমি সান্তোসে এসেছি ক্লাবকে মাঠের ভেতর-বাইরে যতটা সম্ভব সাহায্য করার জন্য। আর যখনই ভক্তরা মনে করবে আমি আর সাহায্য করতে পারছি না বা ক্লাবের ক্ষতি করছি, আমি প্রথমেই আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যাব। সান্তোস ফুটবল ক্লাব আমার জীবনের এক বড় ভালোবাসা এবং যত দিন আমার শক্তি থাকবে, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব ক্লাবকে যোগ্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিদিন কেন মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে

মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী সত্য, যা প্রত্যেকটি মানুষের জন্য নির্ধারিত। ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)

মৃত্যুর স্মরণ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের পার্থিব লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে।

মৃত্যু: মুমিনের জন্য স্বস্তি

পৃথিবী একটি পরীক্ষার ক্ষেত্র, যেখানে মানুষ নানা দুঃখ-কষ্ট, অভাব, প্রিয়জনের মৃত্যু, দারিদ্র্য ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মুসলিমদের জন্য এ পরীক্ষা হলো আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবন যাপন করা।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(আল্লাহ) যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন, তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ২)

আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো। তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭

মৃত্যু মুমিনের জন্য একটি স্বস্তি। এটি পার্থিব পরীক্ষা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমতের আলিঙ্গনে নিয়ে যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন মৃত্যুর মাধ্যমে স্বস্তি পায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০৭)।

এমনকি নবীজি (সা.)-এর জীবনেও এ সত্য প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে মৃত্যু বিলম্বিত করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনমৃত্যু থেকে পালানোর পথ নেই১৮ মার্চ ২০২৫মৃত্যুকে স্মরণ করার গুরুত্ব

মৃত্যু স্মরণ একটি গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। যখন আমরা কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু দেখি, তখন পার্থিব বিষয়গুলো তুচ্ছ মনে হয়। আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে পুনর্বিবেচনা করি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হৃদয় মরিচার মতো মলিন হয়।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘কীভাবে তা পরিষ্কার করা যায়?’ তিনি বললেন, ‘মৃত্যু স্মরণ ও কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।’ (নাহজুল ফাসাহা)।

এ ছাড়া তিনি বলেছেন, ‘আনন্দের ধ্বংসকারীকে (মৃত্যুকে) বেশি বেশি স্মরণ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩০৭)

হজরত আলী (রা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রায়ই মৃত্যুকে স্মরণ করে, সে অল্প সম্পদেও সন্তুষ্ট থাকে। সে কখনো লোভী বা কৃপণ হয় না।’ (বিহারুল আনওয়ার)

মৃত্যুর জন্য কী কামনা করা যায়

ইসলামে আত্মহত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই কোনো বিপদ বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা অনুমোদিত নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)।

তবে শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা, অর্থাৎ আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণের জন্য প্রার্থনা করা ইসলামে অনুমোদিত।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। মৃত্যু মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ।মৃত্যুই শেষ কথা নয়

ইসলামের দৃষ্টিকোণে মৃত্যু জীবনের সমাপ্তি নয়; বরং এটি পার্থিব জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে একটি সেতু। এটি ভয় বা দুঃখের বিষয় হলেও মুমিনের জন্য এটি আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটি সুযোগ। মৃত্যু স্মরণ ও এর জন্য প্রস্তুতি আমাদের জীবনকে আরও অর্থবহ করে।

বিপদে পড়লে মৃত্যু স্মরণের দোয়া আমাদের ধৈর্য ধরতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে সাহায্য করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা বিপদে পড়ে বলে, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন (আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।)’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৬)

এ আয়াত মৃত্যুর সংবাদ শোনার সময়ও পাঠ করা হয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং তিনি আমাদের সামর্থ্যের বাইরে পরীক্ষা দেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।

প্রতিটি বিপদের মধ্যে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ বিপদ ক্ষণস্থায়ী। কারণ, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব।

আরও পড়ুনসন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা৩১ মে ২০২৫কয়েকটি দোয়া

মৃত্যু ভাবাপন্ন বিপদ হলে: কঠিন বিপদের সময় পাঠ করা যায়, তা হলো নবীজি (সা.)-এর শেখানো: ‘হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১)

মৃত্যু নিকটবর্তী হলে: মৃত্যুর সময় শুধু আল্লাহই জানেন। তবে আমরা বা আমাদের প্রিয়জন মৃত্যুর কাছাকাছি থাকি এবং ভয় বা উদ্বেগ অনুভব করি, তবে এই দোয়া পাঠ করা যায়: ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট থেকে আমাকে সাহায্য করো।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৯৭৮)।

নবীজি (সা.) নিজেও তাঁর মৃত্যুর সময় এই দোয়া পাঠ করেছিলেন।

হে আল্লাহ, যতক্ষণ জীবন আমার জন্য কল্যাণকর, ততক্ষণ আমাকে জীবিত রাখো এবং যখন মৃত্যু আমার জন্য উত্তম, তখন আমাকে মৃত্যু দাও।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৫১

সহজ মৃত্যুর জন্য দোয়া: নবীজি (সা.) একটি দীর্ঘ দোয়ার শেষে বলেছেন, ‘এবং আমার মৃত্যুকে আমার জন্য স্বস্তির উৎস করো, যা আমাকে সব অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৮৮)

এখানে সহজ মৃত্যু বলতে পার্থিব অর্থে আরামদায়ক মৃত্যু (যেমন ঘুমের মধ্যে মৃত্যু) বোঝায় না; বরং এটি বোঝায় মৃত্যুর ফেরেশতার আগমন থেকে শুরু করে পরকালে স্থানান্তর পর্যন্ত একটি সহজ প্রক্রিয়া।

মৃত্যুর কঠিন পরীক্ষা থেকে আশ্রয়: একটি দোয়ায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরুষতা, অক্ষমতা এবং জীবন ও মৃত্যুর পরীক্ষা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৫৪৯১)

মৃত্যুর সময় শয়তান থেকে বাঁচতে: নবীজি (সা.) এ–সময় দোয়া করেছেন, ‘আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি যেন শয়তান আমার মৃত্যুর সময় আমাকে ক্ষতি করতে না পারে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)

ইসলামে মৃত্যুকে ভয়ের বিষয় হিসেবে নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে পুনর্মিলনের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। নিয়মিত মৃত্যু স্মরণ আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, লোভ-লালসা থেকে দূরে রাখে এবং আমাদের ভালো কাজের পথে রাখে।

আরও পড়ুনমৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কী৩১ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ