অধ্যাপক এমাজউদ্দীন ছিলেন ‘জনগণের বুদ্ধিজীবী’
Published: 26th, July 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন ‘জনগণের বুদ্ধিজীবী’। তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের বাতিঘর, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন আপসহীন। সমাজ পরিবর্তনের জন্য মৌলিক চিন্তা যাঁরা করতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে তাঁর খুব সখ্য ছিল। কিন্তু রাজনীতিবিদের মতো কোনো দলের আনুগত্য তিনি করেননি।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভার স্মারক বক্তৃতায় এ কথা বলেন বক্তারা। এ সভার আয়োজন করে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টার।
অনুষ্ঠানে এমাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন গণতন্ত্রে আপসহীন ও রাজনৈতিক সহনশীলতার অনন্য নজির। ভাষা আন্দোলন থেকে সামরিক শাসনবিরোধী লড়াই, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন—সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন অকুতোভয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ দল বা গোষ্ঠীনিরপেক্ষ থেকে গণতন্ত্রকে জাতির জীবনপদ্ধতি হিসেবে দেখেছেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও তিনি অবিচল থেকেছেন। আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ২০২৪ সালের গণবিপ্লব এমাজউদ্দীনের আরাধ্য গণতন্ত্রের দুয়ার খুলেছে, যদিও তিনি তা দেখে যেতে পারেননি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ফেল করেছিল, ফলে আমাদেরকে রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনাকে হটিয়ে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হয়েছে, আমাদের বুদ্ধজীবীরা যদি আবারও ফেল করে, তাহলে আবারও গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য রক্ত দিতে হবে।’ তিনি বলেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দায়িত্বপালনের পাশাপাশি গবেষণা ও লেখালেখিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। সমাজ পরিবর্তনের জন্য মৌলিক চিন্তা যাঁরা করতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এমাজউদ্দিন আহমদ। তিনি জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন, জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে তাঁর খুব সখ্য ছিল। কিন্তু রাজনীতিবিদের মতো কোনো দলের আনুগত্য করেননি তিনি। ভুল দেখলে সমালোচনা না করে চুপ থাকার মতো বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন কখনো ছিলেন না।
সভায় অনান্য বক্তারা বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদের অসামান্য অবদান এখনো রাষ্ট্র যথাযথভাবে স্মরণ ও মূল্যায়ন করছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাঁর লেখনী, রাষ্ট্রভাবনা ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেবে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নাজনীন, ছেলে জিয়া আহসান, নাতনি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বুশরা মাহজাবীন, নাতনি শাফকাত অরিন সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ ম আলী রেজা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নঈম আক্তার ছিদ্দিক, শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাহবুবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মেজবাহউল আজম সওদাগর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।