মানুষের বিপদে ছুটে যেতেন মামুন, তাঁর শোকে কাঁদছে পুরো গ্রাম
Published: 26th, July 2025 GMT
২৮ বছর বয়সী যুবক মো. মামুনকে বারোদোনা গ্রামের মৌলভিপাড়ার মানুষজন নিজেদের একান্ত আপন মনে করতেন। কারও মেয়ের বিয়ে, কেউ বিদেশে যাবেন আবার কেউ দেবে পরীক্ষা—এসব কাজে টাকার সমস্যা হলে সবার ভরসা ছিলেন মামুন। বিশাল ধনী ব্যবসায়ী না হলেও নিজের আয় থেকে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন। সেই মানুষটির মৃত্যুতে কাঁদছে গোটা গ্রাম।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলন্ত মোটরসাইকেলকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দিলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। এতে মোটরসাইকেলে থাকা মামুন, তাঁর বড় ভাই এবং মামার মৃত্যু হয়। মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা অংশের পদুয়া ইউনিয়নের সিকদার দিঘিরপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মামুন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৌলভিপাড়ার ছিদ্দিক আহমদের ছেলে। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই মো.
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে। ২১ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, মহাসড়কে চট্টগ্রামমুখী একটি মোটরসাইকেলকে গ্রামীণ সড়ক থেকে হঠাৎ উঠে আসা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কক্সবাজারমুখী একটি মহিষবোঝাই ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়ে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান, আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরেকজন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা শেষে মামুন ও তাঁর ভাই হুমায়ুনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই রাতে করাইয়ানগর আকবরপাড়া গ্রামে তাঁদের মামা মনির হোসেনকে (৪০) দাফন করা হয়।
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে মামুনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। নির্মাণাধীন একতলা পাকা বাড়ির বারান্দায় বসে ছিলেন দুই ছেলেকে হারানো সিদ্দিক আহমদ (৭০)। জানা গেল, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। বৃদ্ধের দেখাশোনা করতেন ছোট ছেলে মামুন। দুর্ঘটনায় সিদ্দিক আহমদের দুই ছেলেই মারা গেছেন। শেষ বয়েসে এসে এই শোক তিনি কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, সেটাই ভাবছিলেন স্বজনেরা।
দুই ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন সিদ্দিক আহমদ ও চেমন আরা। আজ সকাল ১১টায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ দ ক আহমদ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’
তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’
সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’
বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউটকমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।
পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে