Prothomalo:
2025-09-18@02:31:20 GMT

প্রকৃতির বুকে একটুকরো অবকাশ

Published: 27th, July 2025 GMT

একটু অবকাশ পেলেই ইচ্ছা করে প্রকৃতির বুকে ছুটে যেতে। সিলেটের আমুড়ার সবুজ–শান্ত পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে তেমনই এক টুকরো অবকাশযাপনের ঠিকানা। যেখানে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন প্রকৃতির বুকে ভেসে আছেন আপনি।

‘নীড়’ নকশা করা হয়েছে আশপাশের পুরো প্রকৃতি মাথায় রেখে। বাড়ির চারপাশে ঘন গাছপালা, উঁচু-নিচু ভূমি আর পুকুর। সব মিলিয়ে প্রকৃতির বুকে এক টুকরো জায়গা। জায়গা ও গাছপালার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি স্থপতি। বরং সেই জায়গা কীভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, সে চিন্তাই ছিল মাথায়।

স্থপতি জিশান ফুয়াদ চৌধুরী জানান পূর্বপরিকল্পনার কথা, ‘শুরুতেই আমরা পুরো জায়গার গাছগুলো নির্দিষ্ট করেছিলাম। প্রতিটি গাছই ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরোনো। কিছু কিছু গাছ রয়েছে শতবর্ষী। কোনো গাছ কাটা তো দূরে থাক, গাছের গায়ে যাতে আঁচড়ও না লাগে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম আমরা।’ যে কারণে বাড়িজুড়েই রয়েছে গাছের বিস্তৃতি। বিশেষ করে বসার ঘর সাজানোই হয়েছে মাঝখানে দুটি গাছকে কেন্দ্র করে। এমনকি বাড়িটিও গড়ে উঠেছে গাছকে কেন্দ্র করে। গাছ ও টিলার সঙ্গে মিল রেখে পুরো স্থাপনা যেন ভেসে আছে মাটি থেকে একটু ওপরে। দূর থেকে মনে হবে, ঘন গাছপালার মধ্যে একটি স্থাপনা ভেসে আছে নিজের মতো করে। পুরোনো গাছকে যেমন রক্ষা করেছেন, তেমনি বাড়ি তৈরির পরও গাছগাছালিতে ভরপুর হয়ে রয়েছে জায়গাটি।

স্থপতি জিশান ফুয়াদ চৌধুরী আরও যোগ করেন, ‘মাটি, জলবায়ু, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আর পরিবেশের ওপর নির্ভর করেই তৈরি করা হয়েছে বাড়িটি কেমন হবে, কীভাবে হবে।’ মাটি থেকে উঁচু করার পেছনে প্রাকৃতিক কিছু ব্যাপারস্যাপারও ছিল। যেহেতু বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা, তাই সামান্য বৃষ্টিতে ঘরে ব্যাঙ ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ব্যাঙের সঙ্গে সঙ্গে আসে সাপ। ক্ষতিকর জীবজন্তু থেকে বাঁচতে পুরো স্থাপনাই ভাসমান। এ ছাড়া বাড়িতে তিনটি আলাদা উঠান থাকলেও মূল আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ভেতরের উঠানটি। বাড়ির যে ঘরেই যাওয়া হোক না কেন, এই উঠান পার করেই যেতে হবে সবাইকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, সময় যেমনই হোক না কেন, বাড়ির উঠান হয়ে ওঠে পুরো বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের সবাই মিলেমিশে একত্র হওয়ার অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন বাড়ির মধ্যে এই উঠানের মাধ্যমে। এখানে চাইলে যেমন নিভৃতে হারিয়ে যেতে পারবেন, তেমনি সবার সঙ্গে মেতে উঠতে পারবেন হাসি–গল্পে।

মজার ব্যাপার হলো, পুরো প্রকল্পের নকশা ও তা বাস্তবায়নের কাজ চলেছে কোভিড-১৯ মহামারির মতো কঠিন সময়ের মধ্যে। শুরুতে চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও ঘরবন্দী সময়টাই আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল স্থপতিদের জন্য। হাতে সময় থাকায় খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পেরেছেন তাঁরা। অন্যান্য প্রকল্পের চাপ কম থাকায় এ প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় পেয়েছেন। ঘন বনের মাঝখানে কীভাবে আলো প্রবেশ করবে, কীভাবে বাড়ির ভেতরে আলো-ছায়া খেলা করবে, তার সবকিছু আরও নিখুঁতভাবে করে দেখিয়েছেন তাঁরা। ফলে নীড় হয়ে উঠেছে আরও গোছানো, আরও রুচিশীল এক স্থাপত্যকর্ম।

স্থপতি জানান ভালোর সঙ্গে খারাপের কথাও, ‘করোনার কারণে প্রতিদিনই কিছু না কিছু সমস্যা লেগে থাকত। সরেজমিনে দেখে আসা, কাজ করার ক্ষেত্রেও বেশ বাধা ছিল, ভয়ও ছিল। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। আবার সময় পাওয়ায় অনেক ছোট ছোট জিনিস যোগ করতে পেরেছি, যা পুরো প্রকল্পের চেহারা পাল্টে দিয়েছে।’ করোনাকালে কাজ চলায় নির্মাণের ক্ষেত্রেও বেশ কাটছাঁট করতে হয়েছে নির্মাতাদের। এ ছাড়া সিলেটের আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যবহার করা হয়েছে নানা ধরনের উপকরণ। কিছুটা দুর্গম এলাকা হওয়ায় স্টিলের স্ট্রাকচারগুলো আনা হয়েছে শহর থেকে তৈরি করে।

বাড়ির দক্ষিণ দিকের ঝুলন্ত বারান্দা পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে স্টিলের স্তম্ভের ওপর। শোবার ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে ফাঁপা ব্লক, যা গরমেও ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ছাদের নিচে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের মাদুর, বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে কাঠ, যাতে সূর্যের তাপ সরাসরি ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে স্ক্রিন জালি। এতে শুধু ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়নি; বরং বাতাসের সঠিক চলাচলের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে। আবার বসার ঘরে থাকা দুটি গাছ যাতে বসার ঘর ভিজিয়ে না ফেলে, সে চিন্তাও দূর করেছেন। স্টিলের তৈরি ছাদ থেকে গাছকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে একটি ফানেল। যার ফলে যতই বৃষ্টি হোক না কেন, বসার ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করে না; বরং গাছের গা বেয়ে পৌঁছে যায় মাটিতে। গাছের গা বেয়ে বেয়ে পানি নেমে আসার মনোরম দৃশ্য দেখা যাবে বসার ঘর থেকেই।

বাড়ির নকশায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের চলাচল। যে কারণে দিনের বেলায় ঘরের ভেতর আলাদা করে কোনো লাইট-ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির পূর্ব দিকে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস উঠান পেরিয়ে প্রবেশ করে শোবার ঘরে। এ ছাড়া বাড়ির পশ্চিম দিকে আরেকটি টিলা থাকায় বিকেলের কড়া রোদ সরাসরি পড়ে না বাসার ওপর। ফলে সারা দিনই ঘর ঠান্ডা থাকে। অন্যদিকে উত্তর দিকে তাকালে দেখা মেলে ঘন বনের। ঘন গাছপালা প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করেছে বাসাকে। শিলাবৃষ্টি, ঝড় থেকে গাছপালা বাড়িকে রক্ষা করে এসেছে শুরু থেকেই।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাথায় রেখে করা নকশা ও অনবদ্য স্থাপত্যশৈলীর কারণে ২০২২ সালে দশম বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন আর্কিটেকচার পুরস্কার পায় নীড় প্রকল্পটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক ত র ব ক ব যবহ র কর প রকল প দ র কর স থপত

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ