একটু অবকাশ পেলেই ইচ্ছা করে প্রকৃতির বুকে ছুটে যেতে। সিলেটের আমুড়ার সবুজ–শান্ত পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে তেমনই এক টুকরো অবকাশযাপনের ঠিকানা। যেখানে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন প্রকৃতির বুকে ভেসে আছেন আপনি।
‘নীড়’ নকশা করা হয়েছে আশপাশের পুরো প্রকৃতি মাথায় রেখে। বাড়ির চারপাশে ঘন গাছপালা, উঁচু-নিচু ভূমি আর পুকুর। সব মিলিয়ে প্রকৃতির বুকে এক টুকরো জায়গা। জায়গা ও গাছপালার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি স্থপতি। বরং সেই জায়গা কীভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, সে চিন্তাই ছিল মাথায়।
স্থপতি জিশান ফুয়াদ চৌধুরী জানান পূর্বপরিকল্পনার কথা, ‘শুরুতেই আমরা পুরো জায়গার গাছগুলো নির্দিষ্ট করেছিলাম। প্রতিটি গাছই ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরোনো। কিছু কিছু গাছ রয়েছে শতবর্ষী। কোনো গাছ কাটা তো দূরে থাক, গাছের গায়ে যাতে আঁচড়ও না লাগে, সে ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম আমরা।’ যে কারণে বাড়িজুড়েই রয়েছে গাছের বিস্তৃতি। বিশেষ করে বসার ঘর সাজানোই হয়েছে মাঝখানে দুটি গাছকে কেন্দ্র করে। এমনকি বাড়িটিও গড়ে উঠেছে গাছকে কেন্দ্র করে। গাছ ও টিলার সঙ্গে মিল রেখে পুরো স্থাপনা যেন ভেসে আছে মাটি থেকে একটু ওপরে। দূর থেকে মনে হবে, ঘন গাছপালার মধ্যে একটি স্থাপনা ভেসে আছে নিজের মতো করে। পুরোনো গাছকে যেমন রক্ষা করেছেন, তেমনি বাড়ি তৈরির পরও গাছগাছালিতে ভরপুর হয়ে রয়েছে জায়গাটি।
স্থপতি জিশান ফুয়াদ চৌধুরী আরও যোগ করেন, ‘মাটি, জলবায়ু, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি আর পরিবেশের ওপর নির্ভর করেই তৈরি করা হয়েছে বাড়িটি কেমন হবে, কীভাবে হবে।’ মাটি থেকে উঁচু করার পেছনে প্রাকৃতিক কিছু ব্যাপারস্যাপারও ছিল। যেহেতু বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা, তাই সামান্য বৃষ্টিতে ঘরে ব্যাঙ ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর ব্যাঙের সঙ্গে সঙ্গে আসে সাপ। ক্ষতিকর জীবজন্তু থেকে বাঁচতে পুরো স্থাপনাই ভাসমান। এ ছাড়া বাড়িতে তিনটি আলাদা উঠান থাকলেও মূল আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ভেতরের উঠানটি। বাড়ির যে ঘরেই যাওয়া হোক না কেন, এই উঠান পার করেই যেতে হবে সবাইকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, সময় যেমনই হোক না কেন, বাড়ির উঠান হয়ে ওঠে পুরো বাড়ির কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের সবাই মিলেমিশে একত্র হওয়ার অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন বাড়ির মধ্যে এই উঠানের মাধ্যমে। এখানে চাইলে যেমন নিভৃতে হারিয়ে যেতে পারবেন, তেমনি সবার সঙ্গে মেতে উঠতে পারবেন হাসি–গল্পে।
মজার ব্যাপার হলো, পুরো প্রকল্পের নকশা ও তা বাস্তবায়নের কাজ চলেছে কোভিড-১৯ মহামারির মতো কঠিন সময়ের মধ্যে। শুরুতে চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও ঘরবন্দী সময়টাই আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল স্থপতিদের জন্য। হাতে সময় থাকায় খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পেরেছেন তাঁরা। অন্যান্য প্রকল্পের চাপ কম থাকায় এ প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় পেয়েছেন। ঘন বনের মাঝখানে কীভাবে আলো প্রবেশ করবে, কীভাবে বাড়ির ভেতরে আলো-ছায়া খেলা করবে, তার সবকিছু আরও নিখুঁতভাবে করে দেখিয়েছেন তাঁরা। ফলে নীড় হয়ে উঠেছে আরও গোছানো, আরও রুচিশীল এক স্থাপত্যকর্ম।
স্থপতি জানান ভালোর সঙ্গে খারাপের কথাও, ‘করোনার কারণে প্রতিদিনই কিছু না কিছু সমস্যা লেগে থাকত। সরেজমিনে দেখে আসা, কাজ করার ক্ষেত্রেও বেশ বাধা ছিল, ভয়ও ছিল। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। আবার সময় পাওয়ায় অনেক ছোট ছোট জিনিস যোগ করতে পেরেছি, যা পুরো প্রকল্পের চেহারা পাল্টে দিয়েছে।’ করোনাকালে কাজ চলায় নির্মাণের ক্ষেত্রেও বেশ কাটছাঁট করতে হয়েছে নির্মাতাদের। এ ছাড়া সিলেটের আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যবহার করা হয়েছে নানা ধরনের উপকরণ। কিছুটা দুর্গম এলাকা হওয়ায় স্টিলের স্ট্রাকচারগুলো আনা হয়েছে শহর থেকে তৈরি করে।
বাড়ির দক্ষিণ দিকের ঝুলন্ত বারান্দা পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে স্টিলের স্তম্ভের ওপর। শোবার ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে ফাঁপা ব্লক, যা গরমেও ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ছাদের নিচে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের মাদুর, বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে কাঠ, যাতে সূর্যের তাপ সরাসরি ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে স্ক্রিন জালি। এতে শুধু ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়নি; বরং বাতাসের সঠিক চলাচলের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করেছে। আবার বসার ঘরে থাকা দুটি গাছ যাতে বসার ঘর ভিজিয়ে না ফেলে, সে চিন্তাও দূর করেছেন। স্টিলের তৈরি ছাদ থেকে গাছকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে একটি ফানেল। যার ফলে যতই বৃষ্টি হোক না কেন, বসার ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করে না; বরং গাছের গা বেয়ে পৌঁছে যায় মাটিতে। গাছের গা বেয়ে বেয়ে পানি নেমে আসার মনোরম দৃশ্য দেখা যাবে বসার ঘর থেকেই।
বাড়ির নকশায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের চলাচল। যে কারণে দিনের বেলায় ঘরের ভেতর আলাদা করে কোনো লাইট-ফ্যানের প্রয়োজন হয় না। বাড়ির পূর্ব দিকে রয়েছে একটি পুকুর। পুকুর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস উঠান পেরিয়ে প্রবেশ করে শোবার ঘরে। এ ছাড়া বাড়ির পশ্চিম দিকে আরেকটি টিলা থাকায় বিকেলের কড়া রোদ সরাসরি পড়ে না বাসার ওপর। ফলে সারা দিনই ঘর ঠান্ডা থাকে। অন্যদিকে উত্তর দিকে তাকালে দেখা মেলে ঘন বনের। ঘন গাছপালা প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করেছে বাসাকে। শিলাবৃষ্টি, ঝড় থেকে গাছপালা বাড়িকে রক্ষা করে এসেছে শুরু থেকেই।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাথায় রেখে করা নকশা ও অনবদ্য স্থাপত্যশৈলীর কারণে ২০২২ সালে দশম বার্জার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স ইন আর্কিটেকচার পুরস্কার পায় নীড় প্রকল্পটি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক ত র ব ক ব যবহ র কর প রকল প দ র কর স থপত
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট