গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে এখন পর্যন্ত ১২৭ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে এসব মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গত মার্চে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, এতে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ বাড়বে। কিন্তু সে মাসের শেষদিকে ইসরায়েল নিজেরাই একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়।

চলতি সপ্তাহে ইসরায়েল সরকার গাজার পরিস্থিতির জন্য জাতিসংঘকে দায়ী করেছে। এমনকি তারা অভিযোগ করেছে, হামাসের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক রেডিও কান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নষ্ট হওয়ায় কিংবা মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় এক হাজার ট্রাক ত্রাণসামগ্রী জ্বালিয়ে দিয়েছে বা মাটিচাপা দিয়েছে।

তবে এবারই প্রথম নয়, ইসরায়েল আগেও গাজায় ত্রাণ ঢুকতে বাধা দিয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে ইসরায়েল জাতিসংঘের ত্রাণবাহী গাড়িবহর গাজায় ঢুকতে দেয়নি। তখন তাদের উদ্দেশ্য ছিল, মানুষকে অনাহারে রেখে এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ১৫টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা জানায়, ইসরায়েল গাজার ৮৩ শতাংশ ত্রাণ আটকে দিচ্ছে।

দুবারই ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ত্রাণ আটকে দেয়নি। গাজায় ত্রাণ না পৌঁছানোর কারণ হিসেবে তারা জাতিসংঘের অদক্ষতা ও হামাসকে দায়ী করেছে। অথচ যেসব স্থানে ত্রাণ যাচ্ছে না, সেগুলো অনেক দিন ধরেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা বলে দাবি করে আসছে ইসরায়েল।

তাহলে ইসরায়েল কী বলেছে? তারা কি স্বীকার করছে যে গাজায় একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে?—প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে দেখা যাক।

এখন কি গাজায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না

গাজায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে অনেক সমালোচনার মুখে পড়ে। এরপর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় তারা জিএইচএফ নামে একটি নতুন ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করে। জাতিসংঘ ও অন্য ত্রাণ সংস্থাগুলোর জায়গা নেওয়াই এই জিএইচএফ চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোট সরকার এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিরোধিতা বা দেশের ভেতরের ক্ষোভ—কোনোটিই গুরুত্ব দিচ্ছে না। গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তারা সরাসরি উড়িয়ে দিচ্ছে। তারা এসব অভিযোগকে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ও ‘মিথ্যা অপবাদ’ বলে উল্লেখ করেছে।

আগে গাজায় প্রায় ৪০০টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র ছিল। এখন জিএইচএফ চালায় মাত্র চারটি কেন্দ্র। শুধু গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে এগুলোর অবস্থান। তা-ও সেগুলো নিয়মিত পরিচালিত হয় না।

মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত, এ কেন্দ্রগুলোর কাছে খাবার নিতে আসা সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনা ও কিছু বিদেশি ঠিকাদার হামলা চালিয়ে হাজারের বেশি মানুষকে মেরে ফেলেছে।

জাতিসংঘ এখনো সীমিত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এত বেশি বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ চালাতে হয় যে এর কার্যকারিতা টের পাওয়া যায় না।

ইসরায়েল কি স্বীকার করছে যে গাজায় মানুষ অনাহারে মরছে

না, ইসরায়েল সেটা স্বীকার করছে না।

গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েল সরকারের কার্যক্রম সমন্বয়কারী সংস্থা সিওজিএটি বলেছে, ‘গাজা উপত্যকায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।’ তবে তারা এও বলেছে, গাজার কিছু কিছু জায়গায় খাবার পাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা গেছে।

ইসরায়েল কি বলছে যে গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে

তা নয়। ইসরায়েলের দাবি, জাতিসংঘ ঠিকমতো বিতরণ না করায় অনেক ত্রাণ রোদে থেকে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক রেডিও কান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নষ্ট হওয়ায় কিংবা মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় এক হাজার ট্রাক ত্রাণসামগ্রী জ্বালিয়ে দিয়েছে বা মাটিচাপা দিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তরের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার গত শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, ‘গাজায় জাতিসংঘ শত কোটি ডলারের ঠকবাজি করছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ হামাসের সঙ্গে মিলে ইচ্ছা করে গাজার মানুষকে ত্রাণ পেতে বাধা দিচ্ছে।

তবে মেনসার এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। আর জাতিসংঘ কেন এমনটা করবে, সে ব্যাখ্যাও তিনি দেননি।

আরও পড়ুনক্ষুধা গাজায় বোমার মতো মানুষ মারছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা২৪ জুলাই ২০২৫

তাহলে কি জাতিসংঘ হামাসের সঙ্গে কাজ করছে

জাতিসংঘ বলছে, তারা এমন কিছু করছে না।

গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন অভিযোগ করেন, জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার ও মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী দপ্তর (ওসিএইচএ) কোনো না কোনোভাবে হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে ড্যানন তাঁর অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।

পরদিন লিখিত জবাবে টম ফ্লেচার বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার যদি এমন কোনো প্রমাণ পেয়ে থাকে, তাহলে তারা যেন তা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।’

এর আগেও, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েল জাতিসংঘ ত্রাণবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ তুলেছিল।

ইসরায়েলের ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন তদন্ত হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে সে স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল ওই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।

জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণ সংস্থার কাছে মানুষের ভিড়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ এইচএফ ইসর য় ল সরক র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা