গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের দেওয়া প্রাণকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে চাই, নিজেদের ভবিষ্যৎকে তৈরি করতে চাই, আমাদের নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে।’

রোববার বিকেলে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গণসংহতি আন্দোলনের টাঙ্গাইল জেলার উদ্যোগে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

লুটপাট, দুর্নীতি আর দখলদারির অর্থনীতি বহাল রেখে এবং বিভাজনের সংস্কৃতি বজায় রেখে বাংলাদেশে কোনো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘এই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বদলাতে হবে, তার ওপর দাঁড়াবে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছাড়া গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত টিকতে পারবে না। এর জন্য গণমানুষের রাজনৈতিক দল দরকার, যারা গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি, কর্মচারী, ছাত্র-তরুণ সবার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে—এমন জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তিকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, তাঁরা আমাদের নতুন যাত্রার দিশারি। আজকে শহীদের মায়েদের এখানে বলতে হচ্ছে, আমাদের শহীদদের হত্যার এখনো বিচার হয়নি। শহীদেরা এখনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি। আমাদের আহতরা এখনো সম্পূর্ণ চিকিৎসা পায়নি। শহীদদের পরিবারের ও আহতদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা পরিষ্কার করে বলি, আপনারা অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। এগুলো আপনাদের প্রথম দায়িত্ব ছিল।’

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি জানান, আওয়ামী লীগ যখন পঞ্চদশ সংশোধনী করল, তখনই পরিষ্কার বোঝা গেছে, তারা একটা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে চায়। নিজেদের শাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করার জন্য তাদের বাসনাকে সহায়তা করেছে সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো। এই কথা গণসংহতি আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকে বলে আসছে। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও নেতা তখন পর্যন্ত এটা মানতে নারাজ ছিলেন।

আওয়ামী লীগ নিয়ে জোনায়েদ সাকি জানান, দলটি ভোটের অধিকারসহ সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গিলে খেয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে তামাশার নির্বাচনের পর থেকে বিরোধী দলের ওপর হামলা, মামলা, গুম, খুন, অত্যাচারের কোনো সীমা ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা বলেছি, একটা নতুন জাতীয় সনদ ও একটা নতুন সামাজিক রাজনৈতিক চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশ আর অগ্রসর হতে পারবে না।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে যে ক্ষোভের বারুদ জমছিল, এবারের গণ–অভ্যুত্থানে তাতে স্ফুলিঙ্গ হয়ে এল একটা স্বপ্ন, একটা লক্ষ্য—এবার রাষ্ট্রব্যবস্থা বদলাবে। এই স্ফুলিঙ্গ দাবানল তৈরি করল, যেদিন আবু সাঈদ আর ওয়াসিমরা নিজের বুকে গুলি নিয়ে নিলেন। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে তাঁরা এ দেশের মানুষের ক্ষোভকে দাবানলে পরিণত করে দিলেন। এই আত্মত্যাগ সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মানুষ স্বপ্ন ছাড়া ঐক্যবদ্ধ হয় না।’

গণসংহতি আন্দোলন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আহ্বায়ক মোফাখখারুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলার সংগঠক তুষার আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, জাতীয় পরিষদের সদস্য আশরাফুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি ফাতেমা রহমান প্রমুখ। সমাবেশের আগে জোনায়েদ সাকি সন্তোষে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ক র জন ত ক ন র জন আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ