ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার টানেই মাদারীপুরে এসে এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন এক চীনা যুবক।

সি-তিয়ানজি (২৫) নামের ওই চীনা যুবক পরিবারসহ চীনের সাংহাই শহরের চ্যাংনিং এলাকায় বসবাস করেন। বাবার নাম সি গেঞ্জি নিং। পেশায় তিনি একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী।

সি-তিয়ানজির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া তরুণীর নাম সুমাইয়া আক্তার (১৯)। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকার সাইদুল হোসেনের মেয়ে। সুমাইয়া মাদারীপুর সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৭ জুলাই আদালতে মুসলিম রীতিনীতি মেনে তিয়ানজির সঙ্গে সুমাইয়ার বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।

সুমাইয়া আক্তার জানান, প্রায় চার মাস আগে টিকটকে তিয়ানজির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরে তাঁরা নিয়মিত উইচ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। একপর্যায়ে তিনি তিয়ানজিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান। ২৪ জুলাই বাংলাদেশে আসেন তিয়ানজি। পরে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২৭ জুলাই তাঁরা বিয়ে করেন।

বর্তমানে তিয়ানজি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরে অবস্থান করছেন। মঙ্গলবার সকালে সুমাইয়াদের বাড়ি মহিষেরচর এলাকার গিয়ে দেখা যায়, চীনা নাগরিক সি-তিয়ানজি বাঙালি পোশাক পরে অবস্থান করছেন।

সুমাইয়ার পরিবারের সদস্যরা জানান, বাঙালি খাবার আর সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছেন তিয়ানজি। স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদিন গ্রামের পথঘাট ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এলাকাবাসীও তিয়ানজিকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে তিয়ানজির সঙ্গে কথা বলছেন। কেউ গুগলে অনুবাদ করে চীনা বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলছেন। তিয়ানজিও তাঁদের কথার উত্তর দিচ্ছেন।

সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘তিয়ানজি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার টানে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। আমার বাংলা ভাষাও সে বোঝার চেষ্টা করে। আমিও চীনা ভাষা কিছু কিছু শিখে নিয়েছি।’ ভবিষ্যতে স্বামীর সঙ্গে চীনে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন তিনি।

সি-তিয়ানজি বলেন, সুমাইয়াকে ভালোবেসে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশের পরিবেশ তাঁর খুব ভালো লেগেছে। তবে অনেক গরম; কিন্তু মানুষ খুবই ভালো। এখানে সবাই তাঁর বন্ধু হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে সুমাইয়াকে তিনি চীনে নিয়ে যাবেন। তাঁরা দুজন খুব সুন্দর জীবন কাটাবেন।

সুমাইয়ার বাবা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে সুমাইয়া চীনা নাগরিকের সঙ্গে ওর প্রেমের কথা আমাকে জানালে আমি সম্মতি দিই। যখন ওই চীনা ছেলে বাংলাদেশে আসে, তখন আমি নিজে ঢাকা এয়ারপোর্টে গিয়ে মাদারীপুরে নিয়ে আসি। পরে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তাঁদের দুজনকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে-মে দুজন সুখে থাকলেই আমরা খুশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুরুতে তিয়ানজির কথা বুঝতাম না। এখন আস্তে আস্তে অনেক কিছুই বুঝতে পারি। মনে হচ্ছে সে-ও আমাদের মতোই, ভালো মনের মানুষ।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হামাসকে অস্ত্রত্যাগে ও গাজার শাসন ছাড়তে সৌদি, কাতার, মিসরের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধে এ ভূখণ্ডে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো এবং সংগঠনটিকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ একাধিক আরব দেশ।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বি–রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রস্তাব পুনরুজ্জীবিত করতে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের উদ্যোগে নিউইয়র্কে সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানেই  গৃহীত সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রটিকে সমর্থন করেছে ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে অবশ্যই তার শাসন (এ উপত্যকায়) শেষ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। এটি একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।’

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আগের দিন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদল ইসরায়েল ও হামাস উভয়কে গাজা ত্যাগ করার আহ্বান জানায়; যাতে সাগর উপকূলবর্তী এ অঞ্চলটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণপ্রত্যাশী ৯৩ জনকে হত্যা ইসরায়েলি বাহিনীর, যুদ্ধের বর্বরতার নিন্দায় পোপ২১ জুলাই ২০২৫

ঘোষণায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলারও নিন্দা জানানো হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়নি। সম্মেলনের সহআয়োজক ফ্রান্স ঘোষণাপত্রটিকে ‘ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুনগাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ১৮ ঘণ্টা আগে

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।’

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো হামাসের নিন্দা জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি শাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ও ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে।জ্যাঁ-নোয়েল বারো, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ঘোষণায় স্বাক্ষর করে। এতে যুদ্ধ শেষে গাজায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বিদেশি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়। সম্মেলনে ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

আরও পড়ুনগাজায় ‘এখনই যুদ্ধ থামাতে’ যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৮ দেশের আহ্বান২২ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনইসরায়েলের স্নাইপাররা এমনভাবে গুলি ছুড়ছিলেন, যেন পশু শিকার করছেন: গাজার বাসিন্দা২১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ