দীর্ঘ ১৪ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর গত সোমবার ভারতের নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালে আসামের এক নারী পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন। একই হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে ১৪ মাস পর খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এই দুই নারীর বাড়িই আসাম রাজ্যে।

আন্তরাজ্য সমন্বয়, নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং হাসপাতালের সমাজকল্যাণ বিভাগের নিরলস চেষ্টায় পরিবারের সঙ্গে তাঁদের এই পুনর্মিলন সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে দুই বছরের বেশি সময়ে ১৪৮ নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের ‘মাহের’ নামের নারী ওয়ার্ড। মারাঠি ভাষার শব্দ মাহের শব্দের অর্থ ‘মায়ের বাড়ি’।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সাবিরা ও আরতি (ছদ্মনাম) নামের এই দুই নারীকে দুটি ভিন্ন জেলা থেকে ভিন্ন সময়ে উদ্‌ভ্রান্ত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করার সময় উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁদের হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সাবিরা ছয়টি রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চে প্রিয়দর্শিনী নারী আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আরতিকে ভর্তি করা হয় ২০২৫ সালের মে মাসে। এর আগে তাঁকে ভান্ডারা জেলা পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানান হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট কুন্দা কাটেখায়ে (বিদকার)।

ছয় রাজ্য ১৪ বছর

সাবিরার ঘটনা নানা চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। গত ১৪ বছরে তিনি উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি ও আসাম—এই ছয়টি রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই সময়ে তিনি তিনটি ভিন্ন পরিচয় গ্রহণ করেছেন। একেক সময়ে তিনি একেক ঠিকানার কথা বলতেন। কিন্তু এসবের কোনোটিই শেষ পর্যন্ত তাঁর বাড়ির সন্ধান দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে সাবিরার বিভিন্ন সময়ে বলা কথাবার্তাগুলো জোড়া লাগিয়ে কূলকিনারা করার চেষ্টা করছিলেন সমাজসেবা বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট কুন্দা কাটেখায়ে (বিদকার)।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কুন্দা বলেন,‘ তিনি অনেক কিছুই মনে করতে পারতেন। তবে এসবের মধ্যে কোনো পরম্পরা ছিল না। তাঁর বলা অনেক ঠিকানাই ছিল সঠিক। কিন্তু এসবের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নারীই নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার রাখেন। আমরা তাঁদের প্রতি সেই দায়িত্বটুকু পালন করতে চাই।’

কোকরাঝাড় থেকে মিলল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আরতিকে ২০২৫ সালের ২৩ মে মহারাষ্ট্র রাজ্যের ভান্ডারা জেলার মোহাদি থানার মাধ্যমে নাগপুরের মানসিক হাসপাতালে আনা হয়। শুরুতে তাঁর মায়ের বাড়ি আর স্বামীর বাড়ি নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে একটি কাউন্সেলিং সেশনে তিনি জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি আসামের কোকরাঝাড় জেলায়। তথ্যটি বেশ ছোট হলেও পরবর্তী অনুসন্ধানের জন্য তা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২২ জুলাই কুন্দা বিদকার কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিদকারের ফোন পেয়ে পুলিশ সুপার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। এরপর আরতির পরিবারকে আসামের সালকাটি শহরে খুঁজে পাওয়া যায়।

এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাবিরার পরিবারের খোঁজে আসাম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কুন্দা বিদকার। কিন্তু তখন সাবিরার পরিবারের কোনো সূত্র বের করা যায়নি।

আরতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিংকে সাবিরার কথাও আবার বলেন কুন্দা। এবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাবিরার পরিবারেরও খোঁজ মেলে। জানা যায়, সাবিরার বাড়ি আসামের কোকরাঝাড় জেলার গোসাইগাঁওয়ের কামারপাড়া গ্রামে।

অল্প সময়ের মধ্যেই কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ দুই নারীর পরিবারকে খুঁজে বের করে। তাঁদের নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ভিডিওতে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর দুই পরিবারকে নাগপুরে আনার পরিকল্পনা ঠিক করা হয়।

দুই বছরে পরিবারের সঙ্গে ১৪৮ নারীর পুনর্মিলন

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নাগপুর আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের নারী ওয়ার্ড ‘মাহের’ ২৭ অজ্ঞাতপরিচয় নারীকে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটিয়েছে। গত দুই বছরের বেশি সময়ে ১৪৮ নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।

হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা.

সতীশ হুমনে বলেন, এগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়। এটা তো জীবনের পুনর্মিলন, একটি পরিবারের সেরে ওঠা।

সতীশ আরও বলেন, ‘আমি পরিবারের সদস্য ও সমাজের প্রতি আন্তরিক আবেদন জানাই, আপনারা মানসিক অসুস্থতাকে কলঙ্ক হিসেবে দেখবেন না। ভালোবাসা ও সহমর্মিতা দিয়ে তাঁদের গ্রহণ করুন। কারণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি ফেরা সম্ভব নয়।’

ডা. হুমনে বলেন, ‘নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা এমন যেকোনো রোগীর পাশে আছি। ভবিষ্যতে এ রকম আরও অনেক আনন্দঘন পুনর্মিলনের জন্য আমরা কাজ করে যাব।’

রাখি বন্ধনের মাধ্যমে সাবিরা ও আরতিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। রাখি বন্ধনের আগমুহূর্তে হাসপাতাল চত্বরে এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। এতে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ও আড়ম্বর ছিল না। ছিল পুনর্মিলনে গর্ব ও হারিয়ে যাওয়া আত্মার পুনর্মিলনের নিঃশব্দ উদ্‌যাপন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক কর ঝ ড় জ ল পর ব র র স র পর ব র র র র পর ব র ১৪ বছর আস ম র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?

দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’

প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।

আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’

তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’

মুশফিকুর রহিম

সম্পর্কিত নিবন্ধ