১৪ বছর পর পরিবারের সঙ্গে মিলিত হলেন আসামের নারী
Published: 29th, July 2025 GMT
দীর্ঘ ১৪ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর গত সোমবার ভারতের নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালে আসামের এক নারী পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়েছেন। একই হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে ১৪ মাস পর খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এই দুই নারীর বাড়িই আসাম রাজ্যে।
আন্তরাজ্য সমন্বয়, নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং হাসপাতালের সমাজকল্যাণ বিভাগের নিরলস চেষ্টায় পরিবারের সঙ্গে তাঁদের এই পুনর্মিলন সম্ভব হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে দুই বছরের বেশি সময়ে ১৪৮ নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের ‘মাহের’ নামের নারী ওয়ার্ড। মারাঠি ভাষার শব্দ মাহের শব্দের অর্থ ‘মায়ের বাড়ি’।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সাবিরা ও আরতি (ছদ্মনাম) নামের এই দুই নারীকে দুটি ভিন্ন জেলা থেকে ভিন্ন সময়ে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করার সময় উদ্ধার করা হয়। এরপর তাঁদের হাসপাতালটিতে ভর্তি করা হয়। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত সাবিরা ছয়টি রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চে প্রিয়দর্শিনী নারী আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আরতিকে ভর্তি করা হয় ২০২৫ সালের মে মাসে। এর আগে তাঁকে ভান্ডারা জেলা পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানান হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট কুন্দা কাটেখায়ে (বিদকার)।
ছয় রাজ্য ১৪ বছর
সাবিরার ঘটনা নানা চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। গত ১৪ বছরে তিনি উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি ও আসাম—এই ছয়টি রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই সময়ে তিনি তিনটি ভিন্ন পরিচয় গ্রহণ করেছেন। একেক সময়ে তিনি একেক ঠিকানার কথা বলতেন। কিন্তু এসবের কোনোটিই শেষ পর্যন্ত তাঁর বাড়ির সন্ধান দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে সাবিরার বিভিন্ন সময়ে বলা কথাবার্তাগুলো জোড়া লাগিয়ে কূলকিনারা করার চেষ্টা করছিলেন সমাজসেবা বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট কুন্দা কাটেখায়ে (বিদকার)।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কুন্দা বলেন,‘ তিনি অনেক কিছুই মনে করতে পারতেন। তবে এসবের মধ্যে কোনো পরম্পরা ছিল না। তাঁর বলা অনেক ঠিকানাই ছিল সঠিক। কিন্তু এসবের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক নারীই নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার অধিকার রাখেন। আমরা তাঁদের প্রতি সেই দায়িত্বটুকু পালন করতে চাই।’
কোকরাঝাড় থেকে মিলল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আরতিকে ২০২৫ সালের ২৩ মে মহারাষ্ট্র রাজ্যের ভান্ডারা জেলার মোহাদি থানার মাধ্যমে নাগপুরের মানসিক হাসপাতালে আনা হয়। শুরুতে তাঁর মায়ের বাড়ি আর স্বামীর বাড়ি নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে একটি কাউন্সেলিং সেশনে তিনি জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি আসামের কোকরাঝাড় জেলায়। তথ্যটি বেশ ছোট হলেও পরবর্তী অনুসন্ধানের জন্য তা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
২২ জুলাই কুন্দা বিদকার কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিদকারের ফোন পেয়ে পুলিশ সুপার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন। এরপর আরতির পরিবারকে আসামের সালকাটি শহরে খুঁজে পাওয়া যায়।
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাবিরার পরিবারের খোঁজে আসাম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কুন্দা বিদকার। কিন্তু তখন সাবিরার পরিবারের কোনো সূত্র বের করা যায়নি।
আরতির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ সুপার পুষ্পরাজ সিংকে সাবিরার কথাও আবার বলেন কুন্দা। এবার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাবিরার পরিবারেরও খোঁজ মেলে। জানা যায়, সাবিরার বাড়ি আসামের কোকরাঝাড় জেলার গোসাইগাঁওয়ের কামারপাড়া গ্রামে।
অল্প সময়ের মধ্যেই কোকরাঝাড় জেলার পুলিশ দুই নারীর পরিবারকে খুঁজে বের করে। তাঁদের নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ভিডিওতে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর দুই পরিবারকে নাগপুরে আনার পরিকল্পনা ঠিক করা হয়।
দুই বছরে পরিবারের সঙ্গে ১৪৮ নারীর পুনর্মিলন
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত নাগপুর আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের নারী ওয়ার্ড ‘মাহের’ ২৭ অজ্ঞাতপরিচয় নারীকে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটিয়েছে। গত দুই বছরের বেশি সময়ে ১৪৮ নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।
হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডা.
সতীশ আরও বলেন, ‘আমি পরিবারের সদস্য ও সমাজের প্রতি আন্তরিক আবেদন জানাই, আপনারা মানসিক অসুস্থতাকে কলঙ্ক হিসেবে দেখবেন না। ভালোবাসা ও সহমর্মিতা দিয়ে তাঁদের গ্রহণ করুন। কারণ, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি ফেরা সম্ভব নয়।’
ডা. হুমনে বলেন, ‘নাগপুরের আঞ্চলিক মানসিক হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা এমন যেকোনো রোগীর পাশে আছি। ভবিষ্যতে এ রকম আরও অনেক আনন্দঘন পুনর্মিলনের জন্য আমরা কাজ করে যাব।’
রাখি বন্ধনের মাধ্যমে সাবিরা ও আরতিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেওয়া হয়। রাখি বন্ধনের আগমুহূর্তে হাসপাতাল চত্বরে এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। এতে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ও আড়ম্বর ছিল না। ছিল পুনর্মিলনে গর্ব ও হারিয়ে যাওয়া আত্মার পুনর্মিলনের নিঃশব্দ উদ্যাপন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক কর ঝ ড় জ ল পর ব র র স র পর ব র র র র পর ব র ১৪ বছর আস ম র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫