রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কামচাতকা উপদ্বীপে গতকাল বুধবার ৮ দশমিক ৮ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। অল্প সময় ব্যবধানে সেখানে আরও বেশ কয়েকটি পরাঘাত অনুভূত হয়। এরপর উপদ্বীপটির আশপাশের অঞ্চলে ৫ মিটার বা ১৬ ফুট পর্যন্ত সুনামি আঘাত হানে।

রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। ফলে এই অঞ্চলে উৎপন্ন ভূমিকম্পের কারণে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলসহ প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রায় সব দেশ ও অঞ্চল সুনামি–সম্পর্কিত সতর্কতা প্রত্যাহার করলেও কোথাও কোথাও বহাল রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ভূপৃষ্ঠের ১৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার গভীরে। তুলনামূলকভাবে কম গভীরতায় এটি উৎপন্ন হয়েছে। এর কেন্দ্র ছিল পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) পূর্ব-দক্ষিণপূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার।

অবশ্য আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্যমতে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি থেকে প্রায় ১৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে অনুভূত হয়েছে। ১৯৫২ সালের পর, তথা ৭৩ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের কারণে জাপান থেকে শুরু করে ওয়াশিংটন, অরেগন, আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের নানা অঞ্চল এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে নানা মাত্রায় সুনামির ঢেউ দেখা গেছে। তা ছাড়া কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, চিলি, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন আইল্যান্ডস, ভানুয়াতুসহ প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে হয়তো ‘সুনামি–সতর্কতা’ নয়তো ‘সুনামি অ্যাডভাইজারি’ বা ‘সুনামি ওয়াচ’ জারি করা হয়েছিল।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর ও জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুনামি অ্যাডভাইজারি জারি আছে। চিলির পাসকুয়া দ্বীপে জারি আছে সর্বোচ্চ সতর্কতা।

পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহরের বাসিন্দা ইয়ারোস্লাভ (২৫) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি বাসা ছেড়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল দেয়ালগুলো যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়বে। কম্পনটা অন্তত টানা ৩ মিনিট স্থায়ী ছিল।’

ভূমিকম্পের কারণে কামচাতকা উপদ্বীপের নানা স্থানে ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। অনেকে আহত হয়েছেন। তবে নিহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে সুনামি আঘাত হানার পরপরই জাপানের পূর্বাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা প্রয়োজন হয়নি।

সুনামির পরপর জাপানের পূর্ব উপকূলে ছোট ছোট ঢেউ আঘাত হানলেও ধীরে ধীরে তা বড় হতে থাকে। এসব ঢেউ সর্বোচ্চ ৩ মিটার বা ৯ দশমিক ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে গতকাল দেশটির উপকূলের আছড়ে পড়া সবচেয়ে বড় ঢেউ ছিল ১ দশমিক ৩ মিটার বা ৪ দশমিক ৩ ফুট।

টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (টেপকো) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সুনামির সতর্কতা জারির পর জাপানের ফুকুশিমার দাই-ইচি ও ফুকুশিমা দাইনি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০১১ সালের মার্চে জাপানে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও এর জেরে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ফুকুশিমা দাই-ইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এটিকে অন্যতম বড় পারমাণবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়।

জাপানের মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে অস্বাভাবিক কোনো কিছু দেখা যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি–সতর্কতা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সুনামির কারণে হাওয়াই উপকূলে ১ দশমিক ৭ মিটার (৫ দশমিক ৫ ফুট) ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সুনামির পরপরই সেখানে সুনামি–সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তা কমিয়ে সুনামি অ্যাডভাইজারি স্তরে নামিয়ে আনা হয়।

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

পরে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া জানিয়েছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর দেশটির কামচাতকা উপদ্বীপের ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। রাশিয়ার একাডেমি অব সায়েন্সের ভূ-ভৌগোলিক পরিষেবা বিভাগের স্থানীয় শাখা এই তথ্য জানিয়েছে।

ক্লিউচেভস্কয় বিশ্বের সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি। এর উচ্চতা ৪ হাজার ৭৫০ মিটার বা ১৫ হাজার ৫৮৪ ফুট। ১৭০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এতে ৫০ বারের বেশি অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ভ ম কম প র উপদ ব প হয় ছ ল ত হয় ছ দশম ক উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা 

সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ