ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক: আলোচনা চলছে, সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ
Published: 31st, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে দেশটির সরকার বাংলাদেশের ওপর কত হারে শুল্ক আরোপ করবে, তৃতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রথম দিনে তা নির্ধারিত হয়নি। এর আগে দুই দফা আলোচনায়ও কোনো ফল আসেনি। তবে শেষ দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আশা করছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে রয়েছে। এই দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োজিত প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আলোচনায় শুল্ক ও বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। আর বাংলাদেশের দিক থেকে দর-কষাকষির পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ দলের প্রথম দিনের আলোচনা হয় বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। ইউএসটিআরের সঙ্গে এ আলোচনা চলবে আজ বৃহস্পতিবারও।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সকাল সাতটায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হলো। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত এত ত্বরিত ফল আসে না। তবে যেসব বিষয় ও শর্ত ছিল, এইটুকু বলতে পারি যে সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগের দুই দফা বৈঠকে যেসব বিষয় অমীমাংসিত ছিল, সেগুলোতে একমত হয়েছে উভয় দেশ। কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কী সুবিধা দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে, আলোচনার টেবিলে সেগুলো উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ দিনই হবে।
বাংলাদেশি পণ্যে গত ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করে। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।
অন্তর্বর্তী সরকার কেন আশাবাদীজানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে যুক্তির কথা তুলে ধরে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশ সে জায়গাটি নিয়েই তিন থেকে চার মাস ধরে কাজ করেছে। আর সেটি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক করা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল আশা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে বছরে সাত লাখ টন করে গম কেনা হবে পাঁচ বছর ধরে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এক সপ্তাহ আগেই ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি বোয়িং থেকে কেনা হবে ২৫টি উড়োজাহাজ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি খাত যাতে তুলা, সয়াবিন বীজ, ডাল ইত্যাদি পণ্য আমদানি বাড়াতে পারে, সে ব্যাপারে নীতি সহায়তা দেবে সরকার।
এদিকে ব্যবসায়ীদের একটি দলও আলাদাভাবে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দলে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিএমএর দুই পরিচালক মোশারফ হোসেন ও মাসুদ রানা, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলসের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব প্রমুখ।
আমিরুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা দেশটি থেকে এলপিজি আমদানি বাড়াব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
ভারতের শুল্ক ২৫ শতাংশযুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে ভারতের জন্য শুল্কহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা লিখেছেন।
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারত ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’র মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, তারা (ভারত) সব সময় সামরিক সরঞ্জামের বড় একটি অংশ রাশিয়ার কাছ থেকে কিনে থাকে। সবাই যখন চায় রাশিয়া যেন ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ করে, ঠিক সে সময়ে চীনের মতো তারাও রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এসব ভালো লক্ষণ নয়।
জানা গেছে, ভিয়েতনাম ২০, জাপান ১৫, ইন্দোনেশিয়া ১৯ ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ শুল্কহার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে ১৫ শতাংশে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র উপদ ষ ট র জন য সরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।
আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’
তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’
মুশফিকুর রহিম