যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে দেশটির সরকার বাংলাদেশের ওপর কত হারে শুল্ক আরোপ করবে, তৃতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রথম দিনে তা নির্ধারিত হয়নি। এর আগে দুই দফা আলোচনায়ও কোনো ফল আসেনি। তবে শেষ দিনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত শুল্কহার কমানোর সিদ্ধান্ত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আশা করছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে রয়েছে। এই দলে আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োজিত প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আলোচনায় শুল্ক ও বাণিজ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। আর বাংলাদেশের দিক থেকে দর-কষাকষির পুরো বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ দলের প্রথম দিনের আলোচনা হয় বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিনের আলোচনা বুধবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত। ইউএসটিআরের সঙ্গে এ আলোচনা চলবে আজ বৃহস্পতিবারও।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সকাল সাতটায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হলো। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত এত ত্বরিত ফল আসে না। তবে যেসব বিষয় ও শর্ত ছিল, এইটুকু বলতে পারি যে সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগের দুই দফা বৈঠকে যেসব বিষয় অমীমাংসিত ছিল, সেগুলোতে একমত হয়েছে উভয় দেশ। কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কী সুবিধা দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে, আলোচনার টেবিলে সেগুলো উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ দিনই হবে।

বাংলাদেশি পণ্যে গত ২ এপ্রিল ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তিন মাসের জন্য এ সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করে। নতুন হার কার্যকর হলে তা ৫০ শতাংশে দাঁড়াবে।

অন্তর্বর্তী সরকার কেন আশাবাদী

জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে যুক্তির কথা তুলে ধরে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশ সে জায়গাটি নিয়েই তিন থেকে চার মাস ধরে কাজ করেছে। আর সেটি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যঘাটতি কমিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক করা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গত মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল আশা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি কমাতে সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে বছরে সাত লাখ টন করে গম কেনা হবে পাঁচ বছর ধরে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এক সপ্তাহ আগেই ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।

দেশটি থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি বোয়িং থেকে কেনা হবে ২৫টি উড়োজাহাজ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি খাত যাতে তুলা, সয়াবিন বীজ, ডাল ইত্যাদি পণ্য আমদানি বাড়াতে পারে, সে ব্যাপারে নীতি সহায়তা দেবে সরকার।

এদিকে ব্যবসায়ীদের একটি দলও আলাদাভাবে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দলে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিটিএমএর দুই পরিচালক মোশারফ হোসেন ও মাসুদ রানা, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল হক, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলসের পরিচালক চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব প্রমুখ।

আমিরুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা দেশটি থেকে এলপিজি আমদানি বাড়াব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’

ভারতের শুল্ক ২৫ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে ভারতের জন্য শুল্কহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা লিখেছেন।

ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারত ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’র মুখোমুখি হবে। তিনি বলেন, তারা (ভারত) সব সময় সামরিক সরঞ্জামের বড় একটি অংশ রাশিয়ার কাছ থেকে কিনে থাকে। সবাই যখন চায় রাশিয়া যেন ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ করে, ঠিক সে সময়ে চীনের মতো তারাও রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এসব ভালো লক্ষণ নয়।

জানা গেছে, ভিয়েতনাম ২০, জাপান ১৫, ইন্দোনেশিয়া ১৯ ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ শুল্কহার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে ১৫ শতাংশে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র উপদ ষ ট র জন য সরক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮

ঢাকাসহ সারা দেশে বিগত সাত দিনে অভিযান চালিয়ে ২৮৮ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় তাঁদের আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ককটেলসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনের ইউনিট এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ ২৮৮ জনকে আটক করা হয়।

আইএসপিআর জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৬টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ২টি ককটেল, ৩টি ম্যাগাজিন, মাদকদ্রব্য, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁদের সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ