জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
Published: 31st, July 2025 GMT
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো.
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের
আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”
“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”
মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”
কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র ন জ এম ক দ র জ এম ক দ র র ল ইসল ম দল য় ক
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা