জুলাই নব্বইয়ের মতো গণ-অভ্যুত্থান নয়, এটি দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরে যে বাংলাদেশ রয়েছে, এখানে সব বাংলাদেশের পক্ষের লোক। বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা আছে, তারা পালিয়ে গেছে।

বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের বর্ষপূর্তি দোয়া, স্মৃতি ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে এ আয়োজন করে বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ।

এ সময় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ওপর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ডকুমেন্টারি (প্রমাণ্যচিত্র) নির্মাণ করলেও মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করা হয় না বলে জানান উপদেষ্টা। তাঁর জনপ্রিয় হওয়ার প্রয়োজন নেই, সে কারণে মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করেন না বলেও জানান তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমরা অল্প দিনের সরকার। আমরা অনেক বিশাল পরিবর্তন করব, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি জানি, আমার সময় কয় দিন আছে, এর মধ্যে কী কী কাজ করা যাবে। আমি সেই কাজগুলোই করছি। আমার ধারণা, আমি ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই নিয়ে অনেক প্রামাণ্যচিত্র দেখা যায় উল্লেখ করে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘আনাসের (জুলাই শহীদ শাহারিয়ার খান আনাস) মায়ের ডকুমেন্টারি হয়তো দেখে থাকবেন। সেখানে আনাসের মা বলছিলেন, “গুলিটা লাগছে আমার ছেলের বুকে, আর ছিদ্রটা হইছে আমার কলিজায়।” এ কথা যে শোনে, কারও পক্ষে কান্না সংবরণ করা সম্ভব হয় না।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এ রকম শত শত আপনারা ডকুমেন্টারি দেখছেন; এর সবগুলোই আমাদের বানানো। কিন্তু আমরা কোথাও লিখি না সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমি লিখি না এ কারণে, আমার এখানে জনপ্রিয় মুখ হওয়ার প্রয়োজন নেই।’

২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের শত শত মানুষ মারা যাওয়ার স্মৃতি জারি রাখার জন্য যেসব প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নিয়ে করা বলে জানান মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ চব্বিশে আসলে তার সার্বভৌমত্বকে রিক্লেইম (পুনরুদ্ধার) করেছে।’

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সার্বভৌমত্ব কম্প্রোমাইজ (আপস) অবস্থায় ছিল, তার প্রমাণ হচ্ছে আবরার ফাহাদ। তিনি অন্য একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করেছিলেন, অন্য একটা দেশের নীতিকে সমালোচনা করেছিলেন। এটা করার কারণে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যাঁরা বসে ছিলেন, তাঁদের রাজনৈতিক দলের ছেলেরা আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। একটা রাজনৈতিক দল যে এতটা দেউলিয়া হতে পারে, এ ঘটনা তার প্রমাণ।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, আবরার ফাহাদের ঘটনা পরিষ্কার বলে দেয় যে সার্বভৌমত্ব বলে কিছু ছিল না। দেশটা নামে স্বাধীন ছিল, কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রণ করত অন্যরা।

অবশ্য মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করেন ছোটদের সময়ের সম্পাদক মামুন সারওয়ার। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এই যে আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলে গেছেন, কোনো ভিডিওতে ওনাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেন না। কেন ব্যবহার করেন না? ব্যবহার করেন না এই জন্য ওনার মনমতো, ওনার যারা পরিচিত, নিজের বিভিন্ন মিডিয়া হাউসগুলো দিয়ে উনি ডকুমেন্টারি বানান। এগুলোতে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে শহীদ শাহারিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, ইনসাফভিত্তিক, বৈষম্যবিরোধী, স্বাধীন ও সার্বভৌম একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন। অন্তর্বর্তী সরকার একটি নতুন বাংলাদেশ দিয়ে যাবে, যেখানে ফ্যাসিজমের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের উপদেষ্টা শহীদুল্লাহ্ ফরায়েজী। তিনি বলেন, ‘এক দফার প্রেক্ষাপট নির্মাণে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমাদেরও সামান্য অবদান আছে।’ শহীদুল্লাহ্ ফরায়েজী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানপন্থী বিপ্লবী কবি–সাহিত্যিকদের বিভিন্ন পদে, বিভিন্ন কমিটিতে তুমুলভাবে অবজ্ঞা এবং উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ আয়োজন সঞ্চালনা করেন কবি ও গবেষক ইমরান মাহফুজ এবং শিশুসাহিত্যিক আবিদ আজম। কবিতা আবৃত্তি করেন মাহফুজা অনন্যা, আরিফুল হাসান প্রমুখ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সংবিধানবিশেষজ্ঞ আরিফ খান, কবি শান্তা মারিয়া প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ক ত ব ষয়ক উপদ ষ ট ব যবহ র কর ন ন র ন ম ব যবহ র আবর র ফ হ দ সরয় র ফ র ক অন ষ ঠ ন মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ