‘প্রবাসী বন্ড’: বিনিয়োগে লাভ, করমুক্ত আয় ও বাড়তি নিরাপত্তা
Published: 6th, August 2025 GMT
বিদেশে কাজ করা বাংলাদেশিদের জন্য দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে যেসব সুযোগ আছে, সেগুলোর বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। দেশে ফেরার পর এককালীন কিছু টাকা হাতে রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই প্রবাসীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম হচ্ছে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড—এটি ‘প্রবাসী বন্ড’ নামেই পরিচিত।
অনেকটা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো, এই বন্ডে প্রবাসীরা সরকারের কাছে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করেন আর নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফাসহ সেই অর্থ ফেরত পান। কিন্তু পার্থক্য হলো এখানে মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি, আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত, সেই সঙ্গে আছে মৃত্যুঝুঁকির বিমা।
উচ্চ মুনাফা, করমুক্ত আয়
এই বন্ডে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সরল সুদ দেওয়া হয়। প্রতি ছয় মাস অন্তর সেই মুনাফা পাওয়া যায়। ধরুন, কেউ এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেন—ছয় মাস পর তিনি পাবেন ৬ হাজার টাকা, বছরে মোট ১২ হাজার। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই আয়ের ওপর উৎসকর বা আয়কর দিতে হয় না। যেখানে অন্য সঞ্চয়পত্রে কর কেটে রাখা হয়, সেখানে প্রবাসী বন্ড পুরোপুরি করমুক্ত। একসময় এই বন্ডে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পাওয়া যেত; কিন্তু এখন সরল সুদ পাওয়া যায়। সরকার সময়–সময় এর সুদহার বাড়াতে বা কমাতে পারে।
বন্ডে ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
মৃত্যুঝুঁকির বিমা
মেয়াদপূর্তির আগে বন্ডধারীর মৃত্যু হলে তাঁর মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটাই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ডধারীর বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। নমিনিকে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা নিতে গেলে বন্ডে বিনিয়োগকারী মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ডধারীর মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।
ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে
প্রবাসী বন্ড কেবল মুনাফা আয় করার জন্য নয়, প্রয়োজনে ব্যাংকঋণ নেওয়ার জামানত হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া সম্ভব। তবে এ ঋণ দেশের বাইরে নেওয়া যায় না আর তৃতীয় পক্ষের জন্য জামানত হিসেবে ব্যবহারও করা যাবে না।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুযোগ
বন্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে চাইলে আরও দুবার নবায়ন করা যায়—মানে একবারের বিনিয়োগ কার্যকর থাকতে পারে ১৫ বছর পর্যন্ত। অনেকে এটিকে দীর্ঘমেয়াদি পেনশন পরিকল্পনা হিসেবেও ব্যবহার করেন।
সীমাহীন বিনিয়োগ
বর্তমানে এই বন্ডে বিনিয়োগের সীমা নেই। চাইলে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যায়। আগে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও এখন বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ আরও উন্মুক্ত।
২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সীমা তুলে নিয়েছে সরকার। গত ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যত ইচ্ছা তত ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে এত দিন যত খুশি বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। এ তালিকায় এখন যুক্ত হলো ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড।
সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রবাসী আয় দিয়ে একবার কেউ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড এক মেয়াদে কিনলে পরপর দুই মেয়াদের জন্য পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থাৎ তিন মেয়াদে মোট ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে।
বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং ও বিমান বা এয়ারওয়েজ কোম্পানির বিদেশের অফিসে চাকরিরত অনিবাসী বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।
কোথায় ও কীভাবে পাবেন
প্রবাসী বন্ড কিনতে হলে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বৈধ ভিসার কপি, চাকরির প্রমাণপত্র, আর বাংলাদেশে একটি সঞ্চয়ী হিসাব। ব্যবসায়ী হলে লাগবে ট্রেড লাইসেন্স, পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে পেশার সনদপত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় এসব বন্ড কেনা যায়। এ বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। আবার বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই।
এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে।
প্রবাসে রক্ত-ঘাম ঝরানো আয়ের একটি অংশ যদি নিরাপদে, করমুক্তভাবে ও বাড়তি সুবিধাসহ বিনিয়োগ করতে চান—তাহলে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। শুধু মুনাফা নয়, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা আর পারিবারিক সুরক্ষার নিশ্চয়তাও মিলবে একসঙ্গে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর দ র জন য বন ড ক ন করম ক ত বন ড র প রব স গ করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টির মধ্যে অনশনে একদল শিক্ষার্থী, অসুস্থ দুজন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এই অনশন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। রাতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন আরও তিন শিক্ষার্থী। পরে আজ শনিবার সকালে একদল শিক্ষার্থী সেখানে যুক্ত হয়েছেন।
আজ শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এসব শিক্ষার্থীদের অনশনরত অবস্থায় দেখা গেছে। পরে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনাকে রাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র বলছেন প্রার্থীরা১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫অনশন শুরু করা ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর ব্যানারে লেখা আছে—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’। রাতে আসাদুলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সজিবুর রহমান এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সমাজকর্ম বিভাগের আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া আজ সকালে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে যোগ দিয়েছেন। তাদের রমজানুল মোবারক ও সাঈদ নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।
অনবরত অবস্থায় আসাদুল ইসলাম বলেন, পোষ্য কোটা নামের বিষফোড়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটিকে নির্মূল করার জন্যই এই কর্মসূচি। পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত তিনি অনশন ভাঙবেন না।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ২১ ঘণ্টা আগেরমজানুল মোবারক বলেন, রাকসুকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সুযোগ নিয়েছেন। তাঁরা পোষ্য কোটা বাতিলের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদও (রাকসু) চান।
আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে যান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী আমিরুল ইসলাম। কিন্তু তাঁদের কথাতেও অনশন ভাঙেননি শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অনশন চালিয়ে যান তাঁরা।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ, আজ দুপুরে নতুন কর্মসূচি১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনশনরত দুই শিক্ষার্থী বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ পড়েছে। তাঁদের মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। দুজনেরই ঠান্ডাজ্বর লেগেছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজনকে আবাসিক হল এবং অন্যজনকে মেসে দিতে যাচ্ছি।’
গত বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শর্তে ফিরল পোষ্য কোটা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫