বিদেশে কাজ করা বাংলাদেশিদের জন্য দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। ফলে যেসব সুযোগ আছে, সেগুলোর বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। দেশে ফেরার পর এককালীন কিছু টাকা হাতে রাখা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই প্রবাসীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম হচ্ছে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড—এটি ‘প্রবাসী বন্ড’ নামেই পরিচিত।

অনেকটা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের মতো, এই বন্ডে প্রবাসীরা সরকারের কাছে এককালীন টাকা বিনিয়োগ করেন আর নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফাসহ সেই অর্থ ফেরত পান। কিন্তু পার্থক্য হলো এখানে মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি, আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত, সেই সঙ্গে আছে মৃত্যুঝুঁকির বিমা।

উচ্চ মুনাফা, করমুক্ত আয়

এই বন্ডে বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে সরল সুদ দেওয়া হয়। প্রতি ছয় মাস অন্তর সেই মুনাফা পাওয়া যায়। ধরুন, কেউ এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেন—ছয় মাস পর তিনি পাবেন ৬ হাজার টাকা, বছরে মোট ১২ হাজার। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই আয়ের ওপর উৎসকর বা আয়কর দিতে হয় না। যেখানে অন্য সঞ্চয়পত্রে কর কেটে রাখা হয়, সেখানে প্রবাসী বন্ড পুরোপুরি করমুক্ত। একসময় এই বন্ডে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পাওয়া যেত; কিন্তু এখন সরল সুদ পাওয়া যায়। সরকার সময়–সময় এর সুদহার বাড়াতে বা কমাতে পারে।

বন্ডে ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।

মৃত্যুঝুঁকির বিমা

মেয়াদপূর্তির আগে বন্ডধারীর মৃত্যু হলে তাঁর মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটাই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ডধারীর বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। নমিনিকে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা নিতে গেলে বন্ডে বিনিয়োগকারী মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ডধারীর মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।

ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে

প্রবাসী বন্ড কেবল মুনাফা আয় করার জন্য নয়, প্রয়োজনে ব্যাংকঋণ নেওয়ার জামানত হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। বিনিয়োগের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া সম্ভব। তবে এ ঋণ দেশের বাইরে নেওয়া যায় না আর তৃতীয় পক্ষের জন্য জামানত হিসেবে ব্যবহারও করা যাবে না।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুযোগ

বন্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে চাইলে আরও দুবার নবায়ন করা যায়—মানে একবারের বিনিয়োগ কার্যকর থাকতে পারে ১৫ বছর পর্যন্ত। অনেকে এটিকে দীর্ঘমেয়াদি পেনশন পরিকল্পনা হিসেবেও ব্যবহার করেন।

সীমাহীন বিনিয়োগ

বর্তমানে এই বন্ডে বিনিয়োগের সীমা নেই। চাইলে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যায়। আগে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও এখন বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ আরও উন্মুক্ত।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের সীমা তুলে নিয়েছে সরকার। গত ১ ডিসেম্বর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যত ইচ্ছা তত ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে এত দিন যত খুশি বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল। এ তালিকায় এখন যুক্ত হলো ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড।

সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রবাসী আয় দিয়ে একবার কেউ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড এক মেয়াদে কিনলে পরপর দুই মেয়াদের জন্য পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থাৎ তিন মেয়াদে মোট ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে।

বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং ও বিমান বা এয়ারওয়েজ কোম্পানির বিদেশের অফিসে চাকরিরত অনিবাসী বাংলাদেশি মেরিনার, পাইলট ও কেবিন ক্রুরা ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন।

কোথায় ও কীভাবে পাবেন

প্রবাসী বন্ড কিনতে হলে লাগবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বৈধ ভিসার কপি, চাকরির প্রমাণপত্র, আর বাংলাদেশে একটি সঞ্চয়ী হিসাব। ব্যবসায়ী হলে লাগবে ট্রেড লাইসেন্স, পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে পেশার সনদপত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় এসব বন্ড কেনা যায়। এ বন্ডের মুনাফা আয়করমুক্ত। আবার বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই।

এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে।

প্রবাসে রক্ত-ঘাম ঝরানো আয়ের একটি অংশ যদি নিরাপদে, করমুক্তভাবে ও বাড়তি সুবিধাসহ বিনিয়োগ করতে চান—তাহলে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। শুধু মুনাফা নয়, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা আর পারিবারিক সুরক্ষার নিশ্চয়তাও মিলবে একসঙ্গে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর দ র জন য বন ড ক ন করম ক ত বন ড র প রব স গ করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মনের অ্যালার্ম

সময়মতো ঘড়ির অ্যালার্ম বাজল। তবু কীভাবে যেন গভীর ঘুমে জড়িয়ে গেলাম। যেন শরীর নয়, পুরো পৃথিবী ঘুমাচ্ছে। আমি সেই ঘুমের ভারে চাপা পড়ে আছি।

বাইরে দমকা হাওয়া, ঝুমবৃষ্টি। জানালার কাচে শব্দ। ঘুমের মধ্যে মনে হলো, দূরের কোনো শহরে তুমুল ঝড়। সেখান থেকে ভেসে আসছে মৃদু ঝাপটা।

হঠাৎ শরীরে ঝাঁকুনি। চমকে উঠি। আতঙ্ক নিয়ে চোখ খুলে দেখি, ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে আটটা। হতবিহ্বলতার মধ্যে ঘড়ির কাঁটা যেন উপহাস করছে। বলছে, অফিসে পৌঁছানোর সময় কিন্তু সকাল নয়টা।

আধঘণ্টা! এত কম সময়ে কীভাবে সম্ভব? প্রতিদিন সময়মতো অফিসে ঢুকব, নিজের কাছে এ আমার প্রতিজ্ঞা। অথচ আজ বুঝি তা ভাঙতে চলেছে।

এমন সব দুর্ভাবনার মধ্যে একমুহূর্তে মনে হলো, কোনো অদৃশ্য আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিলম্বই অপরাধ আর শাস্তি দিতে হয় নিজেকেই। দিনভর অপরাধবোধই আমার দণ্ড।

তবু মন বলল, যা-ই ঘটুক, আগে অফিসে তো যাই। একঝটকায় উঠে পড়ি। কিন্তু আজ ঘড়ির কাঁটা যেন খুব দ্রুত ঘুরছে, আর আমি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। নিজেকে প্রস্তুত করতে আজ বেশি সময় লাগছে।

বিছানার পাশে রাখা দুটো কৃত্রিম পা। এগুলোকে আবার প্রতিদিন নতুন করে শেখাতে হয় নিরাপদে হাঁটার নানা কৌশল। আজ ওরাও যেন আমার বিলম্বে লজ্জিত।

বছর দশেক আগের কথা। থাকি ঢাকার মোহাম্মদপুরে। অফিসে যাওয়া-আসা

সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। জানতাম, বৃষ্টির সকালে অটোরিকশা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তবু সেদিন এক অদ্ভুত বিশ্বাসে বেরিয়ে পড়ি।

বাসার সামনের রাস্তার পাশে দাঁড়াই। রাস্তায় জমা বৃষ্টির পানি ছিটিয়ে ছুটে যাচ্ছে যাত্রীভর্তি অটোরিকশা। মনে হলো, জগৎ আজ তাড়াহুড়ায় মত্ত। আর আমি সময়ের বাইরের কোনো পৃথিবীতে।

কয়েকজন চালক থামলেন। কিন্তু গন্তব্য শুনে একঝটকায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এই শহরে আমি যেন কোনো ভুল ঠিকানায় দাঁড়িয়ে। এখানে আমার অটোরিকশায় ওঠার অনুমতি নেই।

হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এলেন। ক্লান্ত চোখ, নির্লিপ্ত মুখ। বললাম, ‘মেইন রোড পর্যন্ত নিয়ে যাবেন?’

রিকশাচালক মুখে কিছু না বলে ইশারায় উঠতে বললেন। রিকশা চলতে লাগল। আমার মনে তাড়া। কিন্তু রিকশার চাকা ঘোরে ধীরে, কেমন বিশ্রী শব্দ করে।

কিছু দূর যেতেই রিকশার পেছনে প্রচণ্ড এক ধাক্কা। আমি ছিটকে পড়ি বৃষ্টিভেজা রাস্তায়। মুহূর্তের জন্য পৃথিবী থেমে গেল। চোখ খুলে দেখি, আকাশ ঘুরছে। আমার ক্রাচ দুটি দূরে পড়ে আছে; যেন আমার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন হয়েছে।

ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করি। প্রতিটি পা ফেলতে ফেলতে মনে হচ্ছে, কোনো প্রাচীর ভেদ করছি। মানুষজন সরে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাকাচ্ছে বিস্ময়ে। তাদের চোখে আমি কি মানুষ, নাকি যন্ত্র, জানি না। তবে জানি, আমি পথে আছি, লড়াইয়ে আছি। এখানে থামা মানেই পরাজয়।

চারপাশে লোকজন ভিড় করেছে। কৌতূহল, করুণা, সহানুভূতি মিশে আছে তাঁদের চোখে। কেউ হাত বাড়াচ্ছেন, কেউ টেনে তুলছেন। তাঁদের টানাটানিতে ভারসাম্য হারিয়ে আবার পড়ে যাচ্ছি। মনে হলো, শরীরের ভেতরে কেউ হাসছে। অদৃশ্য, উপহাসমিশ্রিত হাসি।

ঠিক তখনই আমার সহযাত্রী সহকারী নিজেকে সামলে চলে এল। সে-ই কেবল জানে, কীভাবে, কোন কৌশলে আমাকে তুলতে হয়। ধীরে ধীরে উঠলাম। আশ্চর্য, শরীরের কোথাও ব্যথা নেই। এত জোরে ছিটকে পড়লাম, অথচ কিছুই হয়নি। ব্যথা না থাকাটাই যেন আরেক রকম ব্যথা।

সহকারী বলল, ‘চলুন, আজ আর অফিসে না যাই।’ আমি চুপ করে তাঁর মুখের দিকে তাকাই। পরাজিত সৈনিকের মতো সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে চাইছে।

মনে হলো, এই বৃষ্টি, এই ধাক্কা—সবই যেন এক অদৃশ্য শক্তি। তারা জোট বেঁধেছে। আমাকে থামাতে চাইছে। কিন্তু আমি যদি থেমে যাই, তবে হেরে যাব। ভেতরে জেদ চেপে বসল। না, আমাকে যেতেই হবে।

ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা শুরু করি। প্রতিটি পা ফেলতে ফেলতে মনে হচ্ছে, কোনো প্রাচীর ভেদ করছি। মানুষজন সরে দাঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ তাকাচ্ছে বিস্ময়ে। তাদের চোখে আমি কি মানুষ, নাকি যন্ত্র, জানি না। তবে জানি, আমি পথে আছি, লড়াইয়ে আছি। এখানে থামা মানেই পরাজয়।

দিন শেষে বাসায় ফিরি। এবার শরীরজুড়ে ব্যথা টের পাই। কাঁধে, পিঠে, পাঁজরে, কোমরে, পায়ের অবশিষ্ট অংশে। হাতের আঙুল দিয়ে চেপে চেপে বুঝতে পারি, ব্যথাটা বাস্তব। কিন্তু সেই ব্যথার মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি। অফিস তো করতে পেরেছি। অদৃশ্য শক্তি ঠেকাতে পারেনি।

কিছুটা দূরে, সেই রিকশাচালক নীরবে অপেক্ষা করছেন। তিনি এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন, যেন আগেই জানতেন, আমি ফিরব।

আমি উঠলাম। রিকশা আবার চলতে লাগল। মনে হলো, সময় তার গতি ফিরে পেয়েছে। কিন্তু তা আমার সঙ্গে চলছে, নাকি বিপরীতে, বোঝা গেল না।

মূল রাস্তায় এসে অটোরিকশা নিলাম। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথটা আজ খুবই অচেনা লাগছে। যেন কোনো নিরুদ্দেশ পথে অন্তহীন চলছি।

বৃষ্টির শব্দ মিলিয়ে গেল শহরের গর্জনে। কেবল ঘড়ির টিকটিক শব্দ বাজতে থাকল নিরবচ্ছিন্ন। তাকিয়ে দেখি, নয়টা পেরিয়ে গেছে। ইশ্, আজ আর বিলম্ব এড়ানো গেল না।

ঝড়ে পাখা ভাঙা পাখি হয়ে, ঝঞ্ঝার পথ পেরিয়ে অফিসে ঢুকি। সহকর্মীদের কেউ কেউ বলল, ‘গুড মর্নিং’। আমি স্মিত হেসে জবাব দিই। ডেস্কে বসে কম্পিউটার খুলে কাজ শুরু করি। কি-বোর্ডে আঙুল পড়ার শব্দ যেন বলতে থাকে, সব ঠিক আছে, কিছুই হয়নি। অল ইজ ওয়েল।

দিন শেষে বাসায় ফিরি। এবার শরীরজুড়ে ব্যথা টের পাই। কাঁধে, পিঠে, পাঁজরে, কোমরে, পায়ের অবশিষ্ট অংশে। হাতের আঙুল দিয়ে চেপে চেপে বুঝতে পারি, ব্যথাটা বাস্তব। কিন্তু সেই ব্যথার মধ্যেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি। অফিস তো করতে পেরেছি। অদৃশ্য শক্তি ঠেকাতে পারেনি।

পরদিন সকালে আবার অ্যালার্ম বাজল। কিন্তু এবার শব্দটা ভিন্ন। যান্ত্রিক নয়, যেন দূর থেকে কেউ মোলায়েম কণ্ঠে ডেকে ডেকে বলছে, ‘ওঠো ওঠো, অফিসে যেতে হবে।’
জামাকাপড় পরে কৃত্রিম পা বেঁধে নিই। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে শুরু করি। ঠক…ঠক…ঠক…শব্দে ভরে ওঠে ঘর। এই শব্দও একধরনের অ্যালার্ম। মনের মধ্যে এমন অ্যালার্ম সারাক্ষণ বাজে। পাঠককে খবর জানানোর তাড়না হয়ে।

সাইফুল ইসলাম: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমন্বিত বার্তা বিভাগ, প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ