আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইআইইউর বাসযোগ্য শহরের র‍্যাঙ্কিং ২০২৪–এ ঢাকার অবস্থান ১৭৩–এর মধ্যে ১৭১তম। ২০১৫ সালে এই র‍্যাঙ্কিং ছিল ১৪১তম। এক দশকে ঢাকার বসবাসযোগ্যতা সূচক আরও অবনতি হয়েছে।

আইকিউএয়ারের বিশ্বের বায়ুর কোয়ালিটি ২০২৪ র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী, ঢাকার পিএম ২.৫ মাত্রা গড়ে ৯০ মাইক্রোগ্রাম/ কিউবিক মিটার, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত নিরাপদ মাত্রার প্রায় ১৮ গুণ বেশি। মাঝেমধ্যে এই স্কোর ৩০০ ছড়িয়ে যায়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উৎস: ইটভাটা (৩৫ শতাংশ), যানবাহন (২৫ শতাংশ), নির্মাণকাজ (১৫ শতাংশ)। বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ঢাকায় দৈনিক ৬ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র ৫০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়।

২০২৩ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মাত্র ৩০ শতাংশ বর্জ্য রিসাইকেল হয়। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, যদি এই প্রবণতা চলতে থাকে, ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিদিন বর্জ্য উৎপাদন বেড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার টনে পৌঁছাবে—যা এখনকার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।

এ ছাড়া বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা অপচয় হয়, যার অর্থনৈতিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই শহরেই বাস করে দেশের আড়াই কোটির বেশি মানুষ, যারা অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে রাখে।

আরও পড়ুনএই ঢাকা শহরে সামান্য একটু হাঁটার জায়গা কোথায়২৬ জুলাই ২০২৫

শহরের ২৫ শতাংশ জায়গা রাস্তা থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় মাত্র ৯ শতাংশ জায়গায় সরু রাস্তা রয়েছে।

ঢাকার একটি বড় সমস্যা হলো আন্তসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, যার কারণে সারা বছর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে এবং জনদুর্ভোগ বাড়ে।

এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২০২২ সালে প্রণয়ন করা হয় ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ। এটি ছিল ঢাকাকে নতুনভাবে সাজানোর এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। এর লক্ষ্য ছিল বিকেন্দ্রীকরণ, খাল ও জলাধার সংরক্ষণ, সবুজ পার্ক বৃদ্ধি, গণপরিবহন উন্নয়ন এবং বাসযোগ্য নগর গড়া।

রাজউকের উপাত্ত অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ২৭ হাজার একর জলাধার ও খাল ছিল, যার মধ্যে ২০২৪ সালের হিসাবে মাত্র ৬ হাজার ২০০ একর আছে। রাজধানীর ৮০ শতাংশ জলাশয় দূষিত (বাংলাদেশ জল উন্নয়ন বোর্ড)। শুধু ২০ শতাংশ বাসিন্দার কাছে নিরাপদ পানির সরবরাহ রয়েছে। ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে আসা ২৬টি খালের পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ বা দখলমুক্ত করার কাজ এখনো অসমাপ্ত।

ঢাকার বিদ্যমান পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থায় ৪৫টি প্রাকৃতিক খাল এবং ৩৮০ কিলোমিটার বৃষ্টির পয়োনিষ্কাশন লাইন রয়েছে। এসব লাইন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা মোকাবিলায় অপর্যাপ্ত।

১৯৭৮ সালে ঢাকায় মোট সবুজ জায়গার পরিমাণ ছিল শহরের ২৫ শতাংশ, এখন তা ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ঢাকার অন্তত ১৫ শতাংশ জায়গা সবুজ রাখতে না পারলে শহর ‘হিট আইল্যান্ড ইফেক্ট’-এ আক্রান্ত থাকবে, যেখানে শহরের তাপমাত্রা আশপাশের অঞ্চলের চেয়ে ২-৩ ডিগ্রি বেশি থাকে।

আরও পড়ুনআজব শহর ঢাকা: এত ‘উন্নয়ন’, তবুও এত ভোগান্তি১৯ মার্চ ২০২৩

বিগত ৪৪ বছরে (১৯৮০-২৪) ঢাকার ভূমির তাপমাত্রা ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে প্রতি মিনিটে এই উষ্ণতার জন্য একজন করে মারা যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের মতো প্রকৃতিভিত্তিক মডেল গ্রহণ করতে পারলে খুব ভালো হতো, যেখানে প্রতি বাসিন্দার জন্য অন্তত ৯ বর্গমিটার গাছপালা সংরক্ষণ করা জরুরি।

কিন্তু এই পরিকল্পনা ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। এখানে বাণিজ্যিক স্বার্থে ভবনের উচ্চতা বাড়ানো, ঘনত্বের সীমা শিথিল করা, জলাধার রক্ষা অঞ্চল সংকুচিত করা এবং পরিবেশগত ভারসাম্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করলেও জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী ‘লিভেবল সিটি’ হিসেবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার জনের বেশি ঘনত্ব টেকসই নয়। বিশেষজ্ঞ সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স সতর্ক করে বলেছে, ড্যাপ সংশোধনের ফলে ঢাকার জনসংখ্যা ঘনত্ব আরও বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া ঢাকা ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর প্রায় ৩ মিটার করে নেমে যাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে পানিসংকট ও মাটির ধসের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি শুধু ‘আরও উঁচু ভবন’ নয়, ‘আরও গভীর বিপদ’-এর ইঙ্গিত বহন করে। ৭+ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭০ শতাংশ ভবন ধসে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে দুই লাখ লোকের মৃত্যু হবে বলে ধারণা করা হয়।

ঢাকা শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই বিপরীতমুখী অবস্থান আসলে বৈশ্বিক বাস্তবতার এক রূপ। তবে পার্থক্য হলো উন্নত বিশ্বে নগরের উন্নয়নের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনের আলোকে পরিকল্পনাবিদদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

আরও পড়ুনসবুজ ঢাকা কি অধরাই থাকবে০৮ এপ্রিল ২০২৩

দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে নগরের পরিকল্পনা অনেকটা ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’–এর মতো ব্যাপার। প্রভাবশালী মন্ত্রী বা ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামাফিক নাগরিক সুবিধা নির্ধারিত হয়। এ অবস্থায় পরিবর্তিত অবস্থায় বাংলাদেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকাকে বাঁচাতে কী ব্যবস্থা নেয়, তা আমাদের দেখার বড় বিষয়।

সংস্কার নিয়ে সব দল যতটা সময় ব্যয় করছে, দেশের সমস্যা নিয়ে তারা খুব কম সময় ব্যয় করছে। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় সংস্কার কর্মসূচিতে নগরায়ণ ও পরিবেশকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

২৯ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা জাতীয় নীতির কেন্দ্রে থাকবে। আর দফা ৩১-এ রয়েছে পরিকল্পিত, বিকেন্দ্রীকৃত ও ভারসাম্যপূর্ণ নগরায়ণ নিশ্চিত করার কথা।

এই দুই দফা বর্তমান সংকটের মধ্যেই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। বিশেষত দফা ৩১-এর আলোকে এটি স্পষ্ট যে ঢাকার ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে হলে উন্নয়নকে দ্রুত বিকেন্দ্রীকৃত করতে হবে; যার অর্থ শুধু ঢাকায় নয়; বরং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, কুমিল্লা ও রংপুরের মতো আঞ্চলিক শহরগুলোতেও সমানভাবে উন্নয়ন ছড়িয়ে দিতে হবে। এনসিপির ২৪ দফাতে ক্লাইমেট ফোকাসের কথা বলা থাকলেও বিস্তারিত এখনো আসেনি।

শুধু বিএনপি নয়, অন্য সব দলের ইশতেহারে স্পষ্টভাবে বলা উচিত, ঢাকাকে ‘বাঁচাতে’ কী করবে তারা।

নদী, খাল ও জলাধার সংরক্ষণে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কার্যকর করতে হবে। ঢাকার জন্য গেজেটেড মহাপরিকল্পনা বা ড্যাপ যদি সংশোধন করতেই হয়, তা জনগণের অংশগ্রহণে করা উচিত হবে।

এখন যেভাবে সিদ্ধান্ত হয়, তাতে সাধারণ মানুষ, প্রকৌশলী, নগর–পরিকল্পনাবিদ বা পরিবেশবিদ এবং একাডেমিকদের মতামত থাকতে হবে। সাশ্রয়ী আবাসন ও গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইউএনডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাসিন্দাদের ৬০ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক ঘর বা বস্তিতে থাকে, যেখানে প্রতিদিনের আয় ৩০০ টাকার নিচে। গণপরিবহনে এখনো ৮০ শতাংশ মানুষ বাসের ওপর নির্ভরশীল।

মেট্রোরেল ও বিআরটি প্রকল্পের সংযোগ যদি উপশহর পর্যন্ত বাড়ানো যায় (যেমন টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ, সাভার), তাহলে ঢাকার দৈনিক ২ দশমিক ২ মিলিয়ন যাতায়াত কমানো সম্ভব।

ড্যাপের গণপরিবহনকেন্দ্রিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে ১৮ শতাংশ বাড়ানো খুব দরকার।

এ ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত ইলেকট্রিক যানবাহন চালু এবং তাদের আলাদা লেন, ইটভাটায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, নির্মাণক্ষেত্রে ধুলা নিয়ন্ত্রণ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।

ঢাকার বাঁচানোর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখন দরকার রাজনৈতিক সততা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ। আর তার শুরু হতে হবে ইশতেহার থেকেই। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে আমাদের রাজনীতিকে বদলাতে হবে। উন্নয়নের প্রতিযোগিতা নয়; বরং এখন সময় টেকসই রাজনীতি শুরু করার।

পানিসংকট সমাধানে রেইনওয়াটার হারভেস্টিং, রিয়েল এস্টেটে গ্রে ওয়াটার রিসাইক্লিং বাধ্যতামূলককরণ, ওয়াসার আওতা বৃদ্ধি করে অন্তত ৫০ শতাংশ জায়গা কভার করতে হবে ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বন্ধ করে, নদী থেকে পরিশোধিত পানি সরবরাহ করা। নদী ও খাল দূষণ রোধে কঠোর শাস্তির বিধান করা।

আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে আমিনবাজার বা মাতুয়াইলের মতো ল্যান্ডফিলগুলো পরিবেশদূষণ ও মিথেন গ্যাস নির্গমনের প্রধান উৎসে পরিণত হচ্ছে। এগুলো শুধু মাটির তলার পরিবেশ নয়, স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যের জন্যও বড় হুমকি। কার্যকর সমাধানে ওয়েস্ট-টু-এনার্জি প্ল্যান্ট স্থাপন, আবর্জনা থেকে সার তৈরি, বর্জ্য আলাদাকরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য নিষিদ্ধকরণ এবং বর্জ্য কমাতে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে ‘জিরো ওয়েস্ট’ নীতি গ্রহণের সুস্পষ্ট ইশতেহার দরকার।

এ ছাড়া ছাদবাগান ও ভার্টিক্যাল গার্ডেন প্রণোদনা, খাল ও নদীর পাড়ে সবুজ বেল্ট তৈরি। নতুন পার্ক ও উদ্যান নির্মাণ।

শুধু বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নয়, বরং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্যও ঢাকায় বসবাসের সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা পদক্ষেপ হবে রাজউকের কাঠামোগত সংস্কার করা। একই সংস্থা পরিকল্পনা ও অনুমোদনের দায়িত্ব রাখলে স্বচ্ছতা হারায়। তাই একটি স্বাধীন ‘নগর সরকার’ বা ‘নগর-পরিকল্পনা কমিশন’ গঠন করার চিন্তা ইশতেহারে রাখা উচিত। এর মধ্যে থাকবে ভবন কোড কঠোরভাবে প্রয়োগ, জরুরি প্রতিক্রিয়াব্যবস্থা গড়ে তোলা, গণসচেতনতা ও ড্রিল কার্যক্রম।

ভৌত পরিকল্পনায় ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন কোড কঠোর প্রয়োগ, ফায়ার সেফটি কোড অন্তর্ভুক্ত করে নিয়মিত ইন্সপেকশনের কথা থাকতে হবে।

নগর–উন্নয়ন ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে ‘ওয়ান-স্টপ ডিজিটাল পারমিটিং সিস্টেম’ চালু করা জরুরি, যেখানে ভবন নকশা, অনুমোদন ও হোল্ডিং রেকর্ড একক প্ল্যাটফর্মে থাকবে। সিঙ্গাপুর ও সিওল শহরে এমন ডিজিটাল অনুমোদনপদ্ধতি থাকায় উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণ ৪০ শতাংশ কমেছে।

তবে যেই দলই সরকার গঠন করুক, একটি দায়িত্বশীল সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ঢাকার খাল, নদী ও সবুজ এলাকা পুনরুদ্ধারে বিশেষ তহবিল গঠন করা, যার অর্থায়নে হবে পার্ক, খাল ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ। যার অর্থায়ন আসবে নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ইমপ্যাক্ট ফি, পরিবেশ ক্ষতিপূরণ ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে। সিআইজিএসের মতে, খাল পুনরুদ্ধারে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট চালু করলে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এই খাল খনন আমরা বিএনপির পরিকল্পনাতে দেখতে পেয়েছি।

বছরে একবার ‘শহরের বসবাসযোগ্যতা ইনডেক্স’ প্রকাশ করা জরুরি, যাতে নাগরিকেরা জানতে পারেন যে ঢাকার বাতাস, পানি, পার্ক ও সেবা খাতের উন্নতি কতটা ঘটছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।

পরিকল্পনা হবে তথ্য-উপাত্ত ও নাগরিক-কেন্দ্রিক, ব্যবসায়িক চাপে নয়। এসবের পাশাপাশি, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে রিয়েল টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা, পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু এবং ভূমিকম্প প্রতিরোধী অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা শুধু একটি শহর নয়, এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের আয়না। জাতিসংঘ এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, যদি ঢাকায় বর্তমান গতিতে পরিবেশ অবনতি চলতে থাকে, তবে ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ১০০ কোটি শ্রমঘণ্টা হারাবে এবং দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। অপর দিকে যদি ড্যাপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ঢাকার ‘লিভেবিলিটি ইনডেক্স’ আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ২০ ধাপ উন্নত হতে পারে।

ঢাকার বাঁচানোর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখন দরকার রাজনৈতিক সততা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ। আর তার শুরু হতে হবে ইশতেহার থেকেই। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে আমাদের রাজনীতিকে বদলাতে হবে। উন্নয়নের প্রতিযোগিতা নয়; বরং এখন সময় টেকসই রাজনীতি শুরু করার। রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে যদি এই বাস্তবতাগুলো প্রতিফলিত না হয়, তবে ঢাকা টিকবে না, টিকবে না বাংলাদেশও।

সুবাইল বিন আলম প্রকৌশলী এবং টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।

ড.

ফয়সাল কবীর নগর–পরিবেশবিদ, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী।

লেখকদ্বয় বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী সদস্য

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র জন ত ক য র অর থ ইশত হ র ব যবস থ র জন য অন য য় বর জ য ক ত কর পর ব শ স রক ষ জল ধ র শহর র ট কসই গ রহণ দরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

বাবুল’র উদ্যোগে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলমান

বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজ সেবক আবু জাফর আহমেদ বাবুল এর উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সুপার ডা. মো. আবুল বাশার এর নির্দেশনায় হাসপাতালের  প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে সকল অলিগলির রাস্তা, হাসপাতালের ১ম ফ্লোর, ২য় ফ্লোর ও আবাসিক কোয়াটার তার নিজস্ব কর্মী দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও ফুল গাছের পরিচর্যা এবং ড্রেন পরিস্কার করান।

স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে, বায়ু দূষণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিজস্ব কর্মী দিয়ে হাসপাতাল পরিস্কারের কাজ করান।  

এ ব্যাপারে আবু জাফর আহমেদ বাবুল বলেন, আমার বাড়ির খুব কাছেই এই হাসপাতালটি, নাগরিক দায়িত্ব থেকে এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ও পরিবেশ উন্নয়নে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছি। আমি ভবিষ্যতেও জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাব। 
উল্লেখ্য যে গত ২৩ অক্টোবর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট প্রদান করেন আবু জাফর আহমেদ এবং নিজ অর্থায়নে ২জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেন।

এছাড়াও তার পক্ষে সেচ্ছাসেবক দিয়ে তিনি নিয়মিত এই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ