চলচ্চিত্রের ঝলমলে দুনিয়া যেমন আলোয় ভরা, তেমনি অন্ধকারেও ঘেরা। দক্ষিণ ভারতের এক প্রতিভাবান কিশোরীর গল্প সেই অন্ধকারেরই প্রতিচ্ছবি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী শোভা, মাত্র ১৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন—পুরস্কার জয়ের কয়েক সপ্তাহ পরেই। খ্যাতির আড়ালে লুকিয়ে ছিল একাকিত্ব, অস্থিরতা আর অসমাপ্ত এক ভালোবাসার গল্প।

শিশুশিল্পী থেকে জাতীয় পুরস্কার
১৯৬১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্ম শোভার। তাঁর আসল নাম ছিল মহালক্ষ্মী। মা প্রিমা ছিলেন নিজেও একজন অভিনেত্রী, যিনি নিজের স্বপ্ন পূরণ না করতে পারলেও মেয়েকে সিনেমার জগতে প্রবেশ করান মাত্র চার বছর বয়সে। ১৯৬৬ সালে ‘থাত্তুঙ্গল থিরাক্কাপাডুম’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন ছোট্ট ‘বেবি শোভা’।

দশ বছর বয়সের আগেই তিনি মালয়ালম চলচ্চিত্রে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এবং ১৯৭১ সালে কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে।
কিশোরী বয়সেই শোভা প্রাপ্তবয়স্ক চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন—রামু কারিয়াটের ‘দ্বীপু’ (১৯৭৭) এবং কমল হাসানের বিপরীতে ‘ওরমাকাল মারিকুমো’ তাঁকে এনে দেয় প্রথম নায়িকার স্বীকৃতি। এক বছর পর কে বালাচন্দরের ‘নিজল নিজামাগিরাধু’ (১৯৭৮) তাঁকে দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সাফল্যের শিখরে, কিন্তু মনের ভেতর ঝড়
‘পাসি’, ‘মুল্লুম মালারুম’, ‘আজিয়াথা কলাঙ্গাল’, ‘একাকিনি’, ‘উলকাদাল’—এসব ছবিতে শোভা প্রমাণ করেছিলেন তাঁর অসাধারণ অভিনয়ক্ষমতা। ১৯৭৯ সালে ‘পাসি’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭।
কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে চলছিল এক অদৃশ্য সংগ্রাম। ‘কোকিলা’ ছবির শুটিংয়ে তিনি পরিচিত হন পরিচালক বালু মহেন্দ্রর সঙ্গে। বয়সে ২৩ বছর বড় এই পরিচালক তাঁর জীবনে হয়ে ওঠেন সান্ত্বনার এক আশ্রয়। কিন্তু এই সম্পর্ক ছিল জটিল—বালু তখন বিবাহিত, আর শোভা ছিলেন কিশোরী, ভালোবাসা আর নির্ভরতার মাঝামাঝি এক আবেগে আবদ্ধ।

অসম প্রেমের পরিণতি
ঘনিষ্ঠ মহলের সূত্রে জানা যায়, শোভা বিশ্বাস করেছিলেন বালু একদিন স্ত্রীকে ছেড়ে তাঁর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। ভেঙে পড়েন তিনি। ১৯৮০ সালের ১ মে মাত্র কয়েক মাস পরেই নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তাঁর দেহ। তখনো তিনি পূর্ণবয়স্ক হননি।
এ ঘটনায় শোকাহত হয় গোটা দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রজগৎ। বলা হয়, শোভার মা প্রিমা মেয়ের মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে পারেননি এবং চার বছর পর তিনিও আত্মহত্যা করেন।

আরও পড়ুনসব ধরনের চরিত্র করতে চান এই তরুণ অভিনেত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মৃত্যুর পরও অমর
শোভার শেষ দিকের ছবি ‘মুডু পানি’ মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পর। আর পরিচালক কে জি জর্জের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘লেখায়ুদে মরনম ওরু ফ্ল্যাশব্যাক’ (১৯৮৩) আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল শোভার জীবন আর মর্মান্তিক পরিণতি থেকে।

এক অসমাপ্ত জীবনের প্রতিধ্বনি
শোভা হয়তো মাত্র ১৭ বছরের জীবন পেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর প্রতিভা এখনো দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে। তাঁর গল্প মনে করিয়ে দেয়—খ্যাতির আলো যত উজ্জ্বলই হোক, শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন অনেক সময় আড়ালেই থেকে যায়।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়াডটকম

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র ম ত র ১৭ প রস ক র র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়েন, তাঁদের সুবিধা দিতে কেন পিছুটান দেখাই রাশেদা কে চৌধূরী

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা ১০ দিন ধরে ঢাকার রাস্তায় আন্দোলন করেছেন বাড়িভাড়া ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে। এ সময়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে নানা ধরনের বক্তব্য এসেছে; কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে ধন্যবাদ জানাই—তিনি নিজেও একজন শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি অনুধাবন করে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু জানা গেছে, প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে আটকে ছিল।

শিক্ষা পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমার প্রশ্ন, সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা বাড়াতে যখন বেতন কমিশন হয়, তখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–কর্মচারীদের বিষয়টি কেন গুরুত্ব পায় না? তাঁদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ–সুবিধা ক্রমেই বাড়ছে, অথচ যাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের কারিগর, তাঁদের ক্ষেত্রে কেন পিছুটান দেখা যায়—এটাই দুঃখজনক।

আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে২ ঘণ্টা আগে

নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত (দুই ধাপে কার্যকর হবে) নিয়েছে—এর জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। আশা করব, আগামীতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন শিক্ষক–কর্মচারী ও শিক্ষাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে না দেখে, মানবসম্পদ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। সক্ষমতা অনুযায়ী সেটি করা যেতে পারে, তবে শুধু জাতীয়করণই সমস্যার পূর্ণ সমাধান নয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের দিকও ভাবতে হবে।

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোসহ তিন দফা দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করছেন এমপিওভূক্ত শিক্ষক–কর্মচারিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ