বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. সোনিয়া সেহেলী বলেছেন, “বাকৃবির চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি এখন জেলা প্রশাসকের হাতে চলে যাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আর আমাদের হাতে থাকবে না।”

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

চবি শিক্ষার্থীদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি ভুয়া, আটক ১

রাবির আবাসিক হলের ৯১ ছাত্রীকে ‘যৌনকর্মী’ বললেন ছাত্রদল নেতা

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো.

শহীদুল হক বলেন, “সিন্ডিকেট না হওয়ার ফলে গতকাল (মঙ্গলবার) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৪ ঘণ্টা আলোচনার পরে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছিল তার কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সিন্ডিকেট মিটিংয়ের জন্য একটি লিখিত ডকুমেন্ট প্রয়োজন। সেটির জন্যই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “তারা কেবল কালক্ষেপণ করেছে এবং ১ ঘণ্টা যাবৎ তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার পরেও তারা আসেননি। এই পরিস্থিতে আমরা উপাচার্যের কাছে যৌথ বিবৃতি দিতে পারিনি। এখন যদি শিক্ষার্থীরা কোনো কর্মসূচিতে যান এবং ভাংচুর বা এরকম কিছু করেন, সেক্ষেত্রে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন তদারকি করবে। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বন্ধ তাই স্থানীয় প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখবেন।”

এ বিষয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, “গতকাল আমরা ৬১ জন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এরপরেও আজ তারা আমাদের মাত্র পাঁচজনকে যৌথ বিবৃতির জন্য যেতে বলেছেন। গতকালের দীর্ঘ আলোচনায় আমাদের দাবি ও সিদ্ধান্ত সবই আমরা উল্লেখ করেছি এবং আমাদের স্বাক্ষরও দিয়েছি। এতকিছুর পরও কেন আবার পাঁচজনকে লিখিত দিতে হবে, এটা বোধগম্য নয়।”

তিনি বলেন, “গতকালের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, আজকে দুপুর ১২টার মধ্যে উপাচার্য হল বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করবেন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের প্রশাসনিক এবং শিক্ষাগত কোনো হয়রানি করা হবে না- এই মর্মে তিনি লিখিত নথি প্রকাশ করবেন। কিন্তু এর কিছুই হয়নি। শিক্ষকবৃন্দ আমাদের কোনোরকম সহযোগিতা করছেন না। আমাদের একক ডিগ্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এখনো পাইনি। আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি কি হবে, সেটা নিয়ে অনুষদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা

‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। 

গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা। 

রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’ 

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”

বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”

আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”

আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”

আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। 

আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।” 
 

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ