চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি ও বেসরকরি গ্রাহকদের কাছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ৩৩ লাখ টাকা টেলিফোনের বিল বকেয়া রয়েছে। মোট বকেয়া বিলের মধ্যে ৮৫ দশমিক ৮১ শতাংশ ব্যক্তিগত এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ বিল অনাদায়ী থাকায় প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। 

বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও গ্রাহকরা বিল পরিশোধে উদাসীন থাকছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য বিটিসিএল ৮ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে বকেয়া বিল আদায় আরো কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিটিসিএলের পরীসংখ্যান মতে- গ্রাহকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির টেলিফোন বিল বকেয়া রয়েছে মোট ৩৩ লাখ ৬ হাজার ৫৫৯ টাকা। এরমধ্যে ৪৪৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫০৯ টাকা। ব্যক্তি মালিকানাধীন টেলিফোন সংযোগ নেওয়া গ্রাহকের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০ টাকা।

সূত্র জানায়, বিটিসিএলের সংযোগ বর্তমানে চালু রয়েছে এমন ২৮০ গ্রাহকের কাছে টেলিফোন বিল বকেয়া রয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৮০ টাকা। আগে সচল ছিল বর্তমানে সংযোগ বন্ধ রয়েছে এমন ৩৬৩ গ্রাহকের কাছে টেলিফোনের বিল বকেয়া রয়েছে ২১ লাখ ৯২ হাজার ৮২০ টাকা। এছাড়া ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা টেলিফোন বিল না দেওয়ায় ৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলাও করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

৫৫৮ গ্রাহককে নোটিশ: 
বছরের পর বছর টেলিফোন বিল বকেয়া রাখায় ৫৫৮ গ্রাহককে নোটিশ দিয়েছে বিটিসিএল। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, আগে টেলিফোনের সংযোগ সচল ছিল বর্তমানে তা বন্ধ এমন ৩৬৩ গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফাইল প্রস্তুত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত টেলিফোনের বিল বকেয়া রাখায় আরো ২২২ গ্রাহকের বিরুদ্ধে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৭ গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ: 
১৮৮৫ সালের টেলিগ্রাফ আইন ৭ (ক) কার্যবিধি অনুযায়ী ৩৮৬-১ (ক) ধারা মোতাবেক বিল পরিশোধ না করলে ব্যক্তি পর্যায়ে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে বিটিসিএল। মামলার আওতামুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ইতোমধ্যে টেলিফোনের বিল বকেয়া রাখায় নতুন মামলার জন্য কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ১৭ গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফাইল প্রস্তুত করার জন্য রাজশাহী রাজস্ব অফিসে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ শেষেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা:
গ্রাহকদের টেলিফোন বিল পরিশোধ না করার প্রবণতা সরকারি রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টির পাশাপাশি বিটিসিএলের সেবার মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। টেলিযোগাযোগ সেবার ধারাবাহিকতা এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা বজায় রাখতে দ্রুত এসব বকেয়া বিল আদায় করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিটিসিএলের কনিষ্ঠ অফিস সহকারী মো.

রাহাদুজ্জামান বলেন, “৮০ দশক থেকে বিটিসিএল চাঁপাইনবাবগঞ্জে টেলিযোগাযোগ নিয়ে কাজ করছে। শুরুর দিকে গ্রাহকরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করতেন। বর্তমানে যোগাযোগের মাধ্যম আরো সহজ হওয়ায় টেলিফোনের বকেয়া বিল পরিশোধে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন গ্রহকরা। বকেয়া বিল পরিশোধে নিয়মিত যোগাযোগ করেও গ্রাহকদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায় না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিটিসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদের বলেন, “জেলার সরকারি ও বেসরকরি গ্রাহকের কাছে ৩৩ লাখ টাকারও বেশি টেলিফোন বিল বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া বিল আদায়ের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে প্রতিমাসে নোটিশ প্রদান করা হয়। আমাদের লোকজন সরজমিনে গিয়েও বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়ে আসেন। এরপরেও গ্রাহকরা নিয়মিত বকেয়া বিল পরিশোধ করেন না।”

তিনি আরো বলেন, “বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে ব্যক্তি পর্যায়ে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে বিটিসিএল। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসব মামলা করার সুযোগ নেই। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠান টেলিফোন বিল প্রদানে গড়িমসি করে। যুগ যুগ ধরে বিশাল অঙের বিল বকেয়া থাকলেও আদায় করা সম্ভব হয় না। ব্যক্তি গ্রাহকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় সর্বোচ্চ রায় হতে পারে বিলের সমপরিমাণ মাল ক্রোক। ১৪০ বছর আগে চালু হওয়া এই আইন অনুসারে বিটিসিএল পরিচালিত হওয়ায় বকেয়া উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ল ফ ন র ব ল বক য় গ র হক র ব র দ ধ ট ল ফ ন ব ল বক য় প ইনব বগঞ জ ব ল পর শ ধ ন গ র হক র ক ছ ব ট স এল র ৩৩ ল খ ব সরক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ