পাহাড়ে খাবার ও পানির সংকট, লোকালয়ে আসছে হাতি
Published: 13th, September 2025 GMT
সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অবাধে গাছ নিধন ও পাহাড় কাটাসহ নানা কারণে জামালপুর-শেরপুর জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির সংকট। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করছে হাতি। বাড়ছে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব। প্রাণীবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষের অপরিণামদর্শিতার ফলে তৈরি হয়েছে এ পরিস্থিতি। বনকে হাতির বাসযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
সাধারণত, একটি প্রাপ্তবয়স্ক হাতি দিনে পানি পান করে ৭০ থেকে ২০০ লিটার। গরম আবহাওয়া ও দীর্ঘ পথচলার ক্ষেত্রে বয়সভেদে হাতির দৈনিক প্রয়োজন হয় ২০০ থেকে ৩০০ লিটার পানি। বিশাল দেহী এই প্রাণী এক দিনে খেতে পারে ১৪০ থেকে ২৭০ কেজি খাবার। এ তালিকায় আছে— ঘাস, পাতা, গাছের ছাল, শিকড়, কলাগাছ, ফল ও বাঁশের কচি কুঁড়ি।
বন বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামালপুর ও শেরপুর জেলার বালিজুরী রেঞ্জের ৮ হাজার ৩৩০ একর বনভূমিতে হাতি আছে ১২০টি।
বালিজুরী রেঞ্জের পাহাড়ি অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন হাতির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির পরিমাণ কমছে। তাই, খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে আসছে বন্য হাতি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। ফলে, হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জের দিঘলাকোনা এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য জয় দাংগো বলেছেন, “১০-১৫ বছর থেকে হাতি এ এলাকাতে আসে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার নেই। আগে বনে কলাগাছ ছিল। আমলকি, হরতকি, বহেরা— এরকম কিছু গাছ ছিল। সে সময় হাতি পাহাড়ের ভেতরেই থেকেছে।”
একই এলাকার রাত্রি দারিং বলেছেন, “প্রাকৃতিক ছোট ঝিড়ি বা ঝর্ণাগুলো বিলুপ্ত হয়েছে। আগে আমলকি, হরতকি, বহেরা গাছ ছিল; সেগুলোও বিলুপ্তির পথে। সেজন্য হাতিগুলো বনে খাবার কম পাচ্ছে। তাই, লোকালয়ে আসছে।”
সাতানি পাড়া গ্রামের শব্দ আলী বলেন, “ওই দিকে খাবার না থাকায় হাতিগুলো আমাদের ফসল নষ্ট করে ফেলছে। হাতির জন্য বন বিভাগ থেকে যদি খাবারের ব্যবস্থা করে দিতো, অনেক ভালো হতো।”
হাতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, সঠিক সময়ে গাছ না জন্মানোসহ নানা কারণে বনে খাদ্য সংকট হচ্ছে।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রাণীবিদ অধ্যাপক ড.
লোকালয়ে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে বনকে হাতির বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ।
ময়মনসিংহ বিভাগের বালিজুরী রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া বলেছেন, “বালিজুরী রেঞ্জে প্রায় ১১৫ হেক্টর বনভূমিতে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান সৃজনের কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে হাতিগুলো বনের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাবে। খাবার পর্যাপ্ত থাকলে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব অনেক কমবে। পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ থাকে না এখানে। যতদূর জানি, ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বনভূমিতে ৪০টির মতো জলাধার তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে।”
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর য প ত বন ব ভ গ বল ছ ন জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ