বিদেশি সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিমের ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর
Published: 15th, September 2025 GMT
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় নিজেকে বিদেশে সংস্থার এজেন্ট দাবি করা এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমকে ৪৮ ঘণ্টা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা আদালতে বলেন, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি ‘র’-এর এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে।
অতিরিক্ত পিপি শামসুদ্দোহা আদালতে আরও বলেন, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপর দিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, এনায়েত করিম ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন। তিনি কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত নন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত এনায়েত করিম চৌধুরীর ৪৮ ঘণ্টার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোড থেকে তাঁকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
আরও পড়ুনবিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট দাবি করা সেই এনায়েত করিমকে মিন্টো রোড থেকে গ্রেপ্তার২১ ঘণ্টা আগেআদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ৬ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। প্রথম দুই দিন তিনি সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন। পরের কয়েক দিন গুলশানে ছিলেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। ২০০৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট পান।
এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলেও (২০০১-০৬ সাল) একবার এনায়েত করিমকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ম স দ কর ম ন সরক র এস ছ ন ব দ কর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরের এমএম কলেজের ক্লাবগুলো যেভাবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে
মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না রোকেয়া তাসমিমের। কলেজের ইতিহাস ক্লাবে যদি যুক্ত না হতেন, রোকেয়ার হয়তো জানাই হতো না, চমৎকার উপস্থাপনাও তিনি করতে জানেন। রোকেয়া পড়েন যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দ্বিতীয় বর্ষে।
রোকেয়া তাসমিমের মতো এমন আরও অনেক শিক্ষার্থীই নিজেকে ‘আবিষ্কারের’ সুযোগ পাচ্ছেন ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে। কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে অন্তত ৯টি বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই নিজস্ব ক্লাব আছে। বিভাগের শিক্ষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় শুধু যে ক্লাসরুমের বাইরেও বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখার চর্চা হচ্ছে, তা নয়, এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করছেন নেতৃত্বের গুণ।
ইতিহাসের ইতিবাচক শক্তিগত ১৫ অক্টোবর ঢুঁ মেরেছিলাম এমএম কলেজের ইতিহাস বিভাগে। দেখা গেল একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী বিভাগের সেমিনার রুমে বসে আড্ডায় মেতেছেন। একফাঁকে বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় আবৃত্তি করে শোনালেন নিজের লেখা রুবাই (চার পঙ্ক্তির কবিতা)। একটি করে রুবাই শেষ হচ্ছিল, আর তাঁর সহপাঠীরা বলে উঠছিলেন, ‘সাধু সাধু’! এরপর দ্বিতীয় বর্ষের রোকেয়া তাসমিম শোনালেন গান। তালিও পেলেন তুমুল।
আরও পড়ুনঘরে শান্তি বজায় রাখতে কথাবার্তায় সংযত থাকতে হবে কোন রাশির জাতককে০১ নভেম্বর ২০২৫বিভাগের শিক্ষার্থী লিমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের মাধ্যমেই প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়েছে। ক্লাবের উদ্যোগে কখনো আমরা বেরিয়ে পড়েছি রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী সুন্দরবনের ধুমঘাটে। আবার কখনো ভরত রাজার দেউল পরিদর্শনে। সেখান থেকে ফিরে ইতিহাসের খোঁজে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমাদের মধ্যে গবেষণামুখী হওয়ার উৎসাহ বেড়েছে। সেমিনার পেপার তৈরির মতো জটিল বিষয় আমরা রপ্ত করেছি। ক্লাব আছে বলেই প্রতিদিন একধরনের রোমাঞ্চ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসি, পাঠ গ্রহণ করছি।’
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এই কলেজের ১৯টি বিভাগের মধ্যে শুরুতে ইতিহাস বিভাগই ক্লাব চালু করেছিল—২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর। ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ভ্রমণ, ‘রিসার্চ মেথডোলজি’ শিরোনামে দিনব্যাপী কর্মশালা, ইফতার পার্টি, টি পার্টি ও পিঠা উৎসবের মতো নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। দুর্গত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্লাবের পৃষ্ঠপোষক ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কাজ করছে। পড়ালেখায় আনন্দ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গবেষণামুখী হয়েছে। সেমিনার, ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণসহ অনুষ্ঠান আয়োজনে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়, তা-ও তারা শিখেছে। জড়তা কাটিয়ে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করেছে।’
গণিতের গতিস্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছে এমএম কলেজের গণিত ক্লাব। ক্লাবের উদ্যোগে ইতিমধ্যে যশোর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আয়োজন করা হয়েছে অলিম্পিয়াড। অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া সেরা ১০ জন সনদ পেয়েছেন। তিনজন জিতেছেন পুরস্কার।
গণিত ক্লাবের দপ্তর সম্পাদক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গণিতভীতি দূর করতেই আমরা কাজ করি।’ ক্লাবের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গণিতের জটিল সমস্যা তুলে দিয়ে আবার সেটির সমাধানও দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া পিঠা উৎসব, বার্ষিক বনভোজন ও মাসিক বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভাগের ক্লাবগুলো অবদান রাখছে। এ ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বরাবরই কলেজ কর্তৃপক্ষ উৎসাহ দিয়েছে। প্রতিটি বিভাগ যেন সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্লাব গড়ে তোলে, সে বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আছে।এস এম শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজফিন্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট