মহানবী (সা.)–এর জন্মকালের অলৌকিক ঘটনাবলি
Published: 15th, September 2025 GMT
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম মানব ইতিহাসের একটি অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, যা শুধু আরবের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তাঁর জন্মের সময়, স্থান ও এর সঙ্গে যুক্ত অলৌকিক ঘটনাগুলো ঐতিহাসিক ও হাদিস সূত্রে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।
তাঁর জন্মের সময়, স্থান ও এর সঙ্গে যুক্ত অলৌকিক ঘটনাগুলো ঐতিহাসিক ও হাদিস সূত্রে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।জন্মের সময় ও স্থানমহানবী (সা.
তবে কিছু সূত্রে ২, ৮, ১০ বা ১৭ রবিউল আউয়ালের উল্লেখ পাওয়া যায়। ইবনে আবদুল বার ২ রবিউল আউয়াল এবং ইবনে হাজাম ৮ রবিউল আউয়ালের কথা উল্লেখ করেছেন। (ইবনে আবদুল বার, আল-ইসতিআব ফি মা‘রিফাতিল আসহাব, ১/২৫, দারুল জিল, বৈরুত, ১৯৯২)
আরও পড়ুনপ্রথম নারী হাওয়া (আ.)-র জন্ম যেভাবে০১ মে ২০২৫তাঁর জন্ম হয় সোমবার, যেদিন তাঁর জীবনের অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটেছে। ইবনে কাসিরের মতে, তিনি সোমবার জন্মগ্রহণ করেন, সোমবার নবুয়ত লাভ করেন, মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন সোমবার, মদিনায় পৌঁছান সোমবার এবং মৃত্যুবরণও করেন সোমবার। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/২৬০, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৮৮)
হাদিসে তিনি বলেন, ‘এটি সেই দিন, যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করি এবং এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) অবতীর্ণ হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২)
তাঁর জন্ম হয় কুরাইশ গোত্রের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং মাতা আমিনা বিনতে ওয়াহাব ছিলেন কুরাইশের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আবদুল্লাহ তাঁর জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
এটি (সোমবার) সেই দিন, যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করি এবং এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) অবতীর্ণ হয়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,১৬২মুহাম্মদ ইবনে সাদের মতে, আবদুল্লাহ মদিনায় তাঁর মায়ের আত্মীয়দের কাছে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন, যখন আমিনা তাঁকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। (আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১/১০০, দারু সাদির, বৈরুত, ১৯৬০)
এই ঘটনা তাঁর জীবনের প্রথম দিন থেকেই তাঁকে একজন এতিম হিসেবে চিহ্নিত করে দেয়।
অলৌকিক ঘটনাবলিমহানবীর জন্মের সঙ্গে যুক্ত অলৌকিক ঘটনাগুলো ঐতিহাসিক ও হাদিস সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর মা আমিনা বিনতে ওয়াহাব জানিয়েছেন, তিনি গর্ভধারণের সময় একটি নূর (আলো) দেখেছিলেন, যা শামের (সিরিয়া) প্রাসাদ পর্যন্ত আলোকিত করেছিল। (মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, সিরাতু রাসুলিল্লাহ, পৃ. ৬৯, দারুল মা‘রিফা, বৈরুত, ১৯৭৮)
তিনি আরও বলেন, জন্মের সময় তাঁর থেকে একটি নূর প্রকাশিত হয়, যা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং শামের প্রাসাদ ও বাজারগুলো আলোকিত করে। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/২৭৩, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৮৮)
আমিনা জানান, তিনি গর্ভধারণের সময় একটি স্বপ্নে দেখেন যে তিনি এই উম্মতের ‘সাইয়্যিদ’ (নেতা)-কে গর্ভে ধারণ করেছেন এবং তাঁর নাম রাখতে বলা হয় মুহাম্মদ। (মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক, সিরাতু রাসুলিল্লাহ, পৃ. ৬৯, দারুল মা‘রিফা, বৈরুত, ১৯৭৮)
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫জন্মের সময় আরও কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে। আস-সুহাইলি উল্লেখ করেন, তাঁর জন্মের রাতে মক্কার প্রতিমাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড, যা হাজার বছর ধরে জ্বলছিল, নিভে যায়। (আস-সুহাইলি, আর-রওদুল উনুফ, ১/১৫৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৮৫)
এই ঘটনাগুলো তাঁর আগমনের মাধ্যমে পৃথিবীতে একটি নতুন আধ্যাত্মিক যুগের সূচনার ইঙ্গিত দেয়। ইবনে কাসিরের মতে, এই ঘটনাগুলো তাঁর নবুয়তের প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়। (ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/২৭৫, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৮৮)
আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়, তিনি জন্মের সময় হাতের ওপর ভর করে বসেন এবং মাথা আকাশের দিকে তুলে তাকান। (মুহাম্মদ ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১/১০২, দারু সাদির, বৈরুত, ১৯৬০)
তাঁর জন্মের সময় ঘরটি নূরে আলোকিত হয় এবং তারাগুলো এত নিচে নেমে আসে যে মনে হয় তারা পড়ে যাবে। (আবু বকর আল-বাইহাকি, দালাইলুন নুবুওয়া, ১/১১৩, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৮৫)
তাঁর জন্মের রাতে মক্কার প্রতিমাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে যায় এবং পারস্যের অগ্নিকুণ্ড, যা হাজার বছর ধরে জ্বলছিল, নিভে যায়।একটি নতুন যুগের সূচনামহানবী (সা.)–এর জন্ম শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি নতুন আধ্যাত্মিক যুগের সূচনা। তাঁর জন্মের সময় প্রকাশিত নূর এবং প্রতিমা ও অগ্নিকুণ্ডের ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে তাঁর আগমন পৃথিবীর ধর্মীয় ও নৈতিক কাঠামোকে বদলে দেবে। ইবনে দিহইয়া উল্লেখ করেন, তাঁর জন্মের সময় নক্ষত্রের অবস্থান এবং জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনাগুলো তাঁর মহানত্বের প্রতীক ছিল। (ইবনে দিহিয়া, আত-তানওয়ির ফি মাওলিদিল বাশিরিন নাজির, পৃ. ৪৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯০)
তাঁর জন্মের সময় তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁকে কাবায় নিয়ে যান এবং তাঁর জন্য দোয়া করেন, বলেন, ‘আমি তাঁকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছি, তিনি তাঁর নাম রাখেন মুহাম্মদ।’ (আবু বকর আল-বাইহাকি, দালাইলুন নুবুওয়া, ১/১১৫, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৮৫)
তাঁর নামকরণ ‘মুহাম্মদ’ করা হয়, যার অর্থ ‘প্রশংসিত’, যা তাঁর স্বর্গ ও পৃথিবীতে প্রশংসিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। (ইবনে হিশাম, সিরাতুন নবী, ১/১৫৯, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, ১৯৯৮)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং এটি মানবজাতির জন্য একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লবের সূচনা। তাঁর জন্মের সঙ্গে যুক্ত অলৌকিক ঘটনা এবং তাঁর জীবনের প্রতিকূলতা তাঁর নবুয়তের সত্যতা ও সর্বজনীনতার প্রমাণ বহন করে।
সূত্র: আল-মালুম আন আল-জাদওয়াল আত-তারিখি লি-সিরাতির রাসুল
আরও পড়ুনজীবন ও মৃত্যু: পরিপূরক নাকি বিপরীত২১ আগস্ট ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ল ক ত ব ল ইলম য র জন ম র সময ঘটন গ ল র জ বন স মব র উল ল খ আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।
আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’
তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’
মুশফিকুর রহিম