ঢাকার ভয়াবহ যানজট কমাতে শুধু অবকাঠামো নয়, চালক, যাত্রী ও পথচারীর মানসিকতায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, সচেতনতা ও শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকর হবে না।

আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে ‘অ্যাডভান্সিং ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট থ্রু সিগন্যাল কন্ট্রোল: অপারেশন, প্ল্যানিং অ্যান্ড পলিসি পারসপেকটিভস’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। তিনি বলেন, যানজট কমানোর সফলতা প্রায় ৭০ শতাংশ নির্ভর করে চালক ও যাত্রীর আচরণের ওপর। জীবনের মায়া না করে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হন অনেকে। পথচারীদের এ ধরনের আচরণেও পরিবর্তন আনতে হবে।

নীলিমা আখতার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় যানজট নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর সাতটি মোড়ে নতুন স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কর্মঘণ্টা বাঁচাতে আরও বেশি প্রচার চালিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ সফল করতে হবে।

সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে তিন চাকার রিকশা ও পথচারীদের নিয়ে উদ্বেগ বেশি। রাজধানীর বনানীর একটি সড়কের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে সুন্দর একটি বাসস্টপ থাকলেও যাত্রীরা সেটা ব্যবহার করেন না। তাঁরা সড়কে দাঁড়িয়েই বাসে ওঠানামা করেন। এই অভ্যাস পরিবর্তনে কাজ করতে হবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মো.

ওয়ালীউল্লাহ বলেন, ঢাকার যানজট ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে। তবে এর সমাধান আছে উন্নত দেশগুলোয়। সেগুলোকে কাস্টমাইজ করে বাংলাদেশে আনতে হবে। সড়কে পথচারীদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, পথচারীরা রাস্তা পারাপার করছেন একেবারেই অসচেতনভাবে। এখানে সচেতনতা আনা জরুরি।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআইআর) অধ্যাপক এস এম সোহেল মাহমুদ বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে যদি যানবাহন বেড়ে যায়, তাহলে সিগন্যালিং ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করেও লাভ হবে না। ঢাকা শহরের কোনো কোনো সিগন্যালে ধারণক্ষমতার ৩ থেকে ৫ গুণ বেশি যানবাহন থাকে। তিনি বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যানবাহনকে প্রতিদিন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাস্তা যেহেতু ভেঙে কারও মাথায় পড়ে না, সে জন্য রাস্তা কলাপস করা নিয়ে মাথাব্যথা থাকে না।

সেমিনারে সভাপতি ছিলেন বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, দেশে এখনো ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়নি। স্বাধীনতার প্রায় ৫৪ বছর পার হলেও আধুনিক নগরব্যবস্থা অনুযায়ী নগরকে সেভাবে সাজানোর চেষ্টা করা হয়নি। তাই করণীয় এখন অনেক।

বিআইপির সভাপতি আরও বলেন, মানসিকতায় যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে যেমন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল, একইভাবে আবারও সড়কের জন্য আন্দোলন হতে পারে। তাই যানজট নিরসনের দায়িত্বে থাকা প্রতিটি সংস্থাকে সমন্বয় করে সমাধান খোঁজা জরুরি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ট্রাফিক্সের প্রধান নির্বাহী মো. আশরাফুল আলম, সহপ্রতিষ্ঠাতা আবু আনাস ও মো. নুরুল হাসান।

মূল প্রবন্ধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আগে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। সেখান থেকে কী কী শিক্ষা পাওয়া গেছে, তা প্রবন্ধে বলা হয়। এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক ব্যবস্থায় কীভাবে আগের ভুলগুলো সংশোধন করা যায় এবং সেটি হলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কতটা সহজ হবে তাও তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) আবু সুফিয়ান আহমেদ, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ প্রমুখ। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পথচ র য নজট ব আইপ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?

দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’

প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।

আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’

তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’

মুশফিকুর রহিম

সম্পর্কিত নিবন্ধ